ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

মানুষের মল দিয়ে পেটের চিকিৎসা

প্রকাশিত : ০৯:০০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ০৯:৪০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

একজন ‘সুপার পু’ মল দানকারী নারী

একজন ‘সুপার পু’ মল দানকারী নারী

ক্লডিয়া ক্যাম্পেনেলা যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কাজ করেন। কিন্তু অবসর সময়ে তিনি যে কাজ করেন - সেটাই সবচেয়ে চমকপ্রদ।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি নিজের মল অন্যদের দান করেন। কারণ ডাক্তাররা বের করেছেন যে ক্লডিয়ার মলে এমন ‘উৎকৃষ্ট মানের ব্যাকটেরিয়া আছে, যা অন্যের দেহে প্রতিস্থাপন করে বিভিন্ন পেটের রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব।

ক্লডিয়ার বয়স ৩১। তিনি এটাকে রক্তদানের মতই স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমার অনেক বন্ধু মনে করে এটা একটা জঘন্য এবং উদ্ভট ব্যাপার। কিন্তু এটা আমাকে বিচলিত করে না। এটা দান করা খুবই সহজ এবং আমি চিকিৎসা গবেষণায় অবদান রাখতে পেরে খুশি।’

এই ‘মল প্রতিস্থাপন’ কিভাবে কাজ করে তা বলা দরকার এখানে। মনে রাখতে হবে এটা কোন জঘন্য ব্যাপার নয়, বরং একটা জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা।

মানুষের পেটের ভেতরকার নাড়িভুঁড়ি অর্থাৎ অন্ত্রের মধ্যে বাস করে অসংখ্যরকম অণুজীব। কিন্তু বর্তমান যুগে মানুষ যে এ্যান্টিবায়োটিক খায় - তা অনেকসময় শরীরের ভালো এবং খারাপ দু’ধরণের ব্যাকটেরিয়াকেই নির্বিচারে মেরে ফেলে।

ব্যাকটেরিয়া নির্মূল হয়ে যাবার পর যে বিরান পরিবেশ তৈরি হয় -তাতে ‘ক্লস্ট্রিডিয়াম ডিফিসিল’ নামে বিশেষ এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি ঘটাতে থাকে।

এর ফলে এমন ডায়রিয়া হয় যার সাথে রক্তপাত, জ্বর এবং পেট ব্যথা হতে পারে - এবং অনেকক্ষেত্রে এটা এত গুরুতর চেহারা নেয় যে রোগী মারা যায়।

এই পরিস্থিতিতে আরো এ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার চাইতে ভালো বিকল্প হিসেবে বেরিয়ে এসেছে এই ‘মল প্রতিস্থাপন’ চিকিৎসা। অর্থাৎ একজন সুস্থ ব্যক্তির মল থেকে ভালো ব্যকটেরিয়াগুলো সংগ্রহ করে তা রোগীর মলদ্বার দিয়ে শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া।

ক্লডিয়ার মলে নাকি এত বেশি ভালো ব্যাকটেরিয়া আছে যে তা রীতিমত বিরল। বিজ্ঞানীরা একে বলছেন ‘সুপার পু’ (super poo) - যার মধ্যে ভালো ব্যাকটিরিয়ার চমৎকার সমন্বয় ঘটেছে। এবং ক্লডিয়া হচ্ছেন একজন ‘সুপার ডোনার’ বা দাতা।

ক্লডিয়া একজন ভেগান অর্থাৎ নিরামিষভোজী, আর নিরামিষভোজীরা ভালো মল-দাতা হতে পারেন - এটা জানার পরই তিনি একজন ডোনার হতে আগ্রহী হন।

অবশ্য ভেগানদের মল যে অন্যদের চেয়ে ‘ভালো’ এমন কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো নেই। বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণা চালাচ্ছেন যে কেন ‘সুপার পু’-ওয়ালারা এত বিরল।

নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ড. জাস্টিন একজন অনুজীব বিশেষজ্ঞ। তার মতে, ‘সুপার পু কেন এত বিরল এটা বের করতে পারলে আমরা শুধু যে মল প্রতিস্থাপনে সাফল্য বাড়াতে পারবো তাই নয়, আলঝেইমারস ডিজিজ, হাঁপানি এবং মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস-এর মতো ব্যাকটেরিয়াঘটিত অন্য রোগেরও চিকিৎসায় একে কাজে লাগানো যেতে পারবে।’

ব্রিটেনের ওয়েস্ট হার্টফোর্ডশায়ার হাসপাতালের একজন কনসালট্যান্ট ডাক্তার জন ল্যান্ডি বলছিলেন, ‘কি কারণে একজন সুপার পু ডোনার হন, তা আমরা এখনো জানি না। এদের পাওয়াও খুবই বিরল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দাতারা যেন স্বাস্থ্যবান হন এবং তাদের দেহে কোন রোগ না থাকে -এটা অবশ্যই আমরা নিশ্চিত করি। কিন্তু তাদের মলে সব রকমের মাইক্রোবায়োম আছে কিনা তা আমরা পরীক্ষা করে দেখি না।’

ড. ড. জাস্টিনের গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের মলে বহু রকমের অণুজীব আছে, এবং যাদের প্রতিস্থাপিত মল রোগীর দেহের সাথে ‘ম্যাচ করে’ তারাই আসলে চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি সাফল্য এনে দেন।

তবে ভবিষ্যতে এমন পদ্ধতিও বৈজ্ঞানিকরা বের করার চেষ্টা করছেন মল প্রতিস্থাপন না করে বিকল্প কোন পথে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু তার আগে তাদের জানতে হবে ঠিক কিভাবে এই মল প্রতিস্থাপন কাজ করে।

তাহলে হয়তো রোগীদের জন্যও এমন পন্থা বের করা যাবে - যাতে অন্যের মল ব্যবহার করতে হবে না, রোগীর মনে কোন বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করবে না।

ক্লডিয়া মনে করেন - সেটা যতদিন না হচ্ছে ততদিন এ ব্যাপারটা সম্পর্কে মানুষের মনে মল প্রতিস্থাপন সম্পর্কে যে বাজে ধারণা আছে সেটা ত্যাগ করতে হবে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এমএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি