ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ অক্টোবর ২০২৪

অকল্যাণের ৭০টি দরজা বন্ধ করে দেয় দান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪৬, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪

পবিত্র কোরআনে এসেছে "নিশ্চয়ই যারা তাদের উপার্জন থেকে রাতে বা দিনে, প্রকাশ্যে বা গোপনে, সচ্ছল বা অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, তাদের জন্যে তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোনো ভয় বা পেরেশানি থাকবে না। অন্যদিকে, নবীজী (স) এর হাদীস হলো- সদকা অকল্যাণের ৭০টি দরজা বন্ধ করে দেয়।’

কাজেই নেক নিয়তে মাটির ব্যাংকে যখনই আপনি দান করছেন অকল্যাণের বা বালা-মুসিবতের ৭০টি দরজা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু কীভাবে?

অকল্যাণ বলতে দুঃখ, কষ্ট, বিপদআপদ, বালা-মুসিবত, শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক অশান্তি ইত্যাদি সবকিছুকেই বোঝায়।

দান আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের একটি অনন্য উপায়। দানের মাধ্যমে যখন আমরা দুঃস্থ ও অসহায় মানুষকে সাহায্য করি তখন আমাদের হৃদয়ের দীনতা ও কৃপণতা দূর হয়। হৃদয়ের দীনতা ও কৃপণতা দূর হলে আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আরও বেশি প্রিয় হয়ে উঠি। আর আল্লাহ্‌ যাকে পছন্দ করেন তাকে বিপদআপদের মুখে একা ছেড়ে দেবেন- তা তো হয় না!

আসলে দানের মাধ্যমেই সম্ভব সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী সমাজ বিনির্মাণ, যার ফলশ্রুতিতে সমাজে অপরাধ বা অকল্যাণ করার প্রবণতা কমে যায়। ফলে কেবল দাতা-ই না, সামাজিক সুরক্ষা লাভ করেন তার উসিলায় অন্যরাও।

বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে দান

কোন ভালো মানুষ বিপদে পড়লে আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই এমন ফেরেশতার মতো মানুষটাও এমন বিপদে পড়ল! আসলে বিপদ কখনোই ভালো মানুষ বা খারাপ মানুষ হিসেব করে আসে না। বিপদ আসতে পারে যে-কারো, যে-কোনো মূহুর্তে।

জীবন যতদিন আছে বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট আসবে। বিপদাপন্ন অবস্থায় এবং অনাগত সকল বিপদ সহজে মোকাবেলা করা সম্ভব হয় নিয়মিত দানের মাধ্যমে।

গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিতে যাচ্ছিল দুষ্কৃতকারীরা ভদ্রমহিলা প্রতিদিন মাটির ব্যাংকে দান করতেন। একদিন তার স্বামী প্রতিদিনের মত গাড়ি নিয়ে বের হলেন। ফেরার পথে তিনি পড়ে গেলেন বড় একটি গণ্ডগোলের মধ্যে। দুষ্কৃতকারীরা গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে ফেলল, গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে দিল।

ভদ্রলোক গাড়ির ভেতরেই ছিলেন। দুষ্কৃতকারীদের দিয়াশলাই বের করে আগুন জ্বালাতে যাচ্ছে দেখে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। গাড়িতে বসে থাকলে তো মরতে হবে! এই ভেবে তিনি গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে দাঁড়ানোমাত্রই দুষ্কৃতকারীরা ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল। লোকটি বেঁচে গেলেন। এরপর থেকে মহিলাটি আরও বেশি বেশি দান করতে লাগলেন।

মাত্র আধহাত দূরেই ছিল গভীর খাদ!

স্বামীর সাথে ঈদ করতে দেশের বাড়ি যাচ্ছিলেন এক ভদ্রমহিলা। প্রাইভেট কার বুড়িগঙ্গা সেতু পার হওয়ার পর চালক হঠাৎ বেপরোয়া গাড়ি চালাতে লাগল। এক পর্যায়ে গাড়ি এক্সিডেন্ট করল। মহিলা জ্ঞান হারালেন। যখন জ্ঞান ফিরল, দেখলেন তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। ঠোঁট ও গলায় সামান্য কেটে গেলেও বড় জখম হয় নি; ভাল আছেন তার স্বামীও। অথচ গাড়ির সামনের অংশ একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে!

বড় কিছু হতে পারত যদি গাড়ি ইটের স্তূপে ধাক্কা খেয়ে থেমে না যেত। মাত্র আধহাত এগোলেই গভীর খাদ! ভদ্রমহিলা সবসময়ের মতো সেদিনও মাটির ব্যাংকে দান করে রওনা হয়েছিলেন।

মুমূর্ষু রোগী সুস্থ হলো অবিশ্বাস্য দ্রুততায়!

রাত বাজে দুটো। পাশের রুম থেকে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। লোকটির পাঁচ মাসের অন্তঃসত্তা ভাবির ব্যথা উঠেছে। ভাই বাসায় ছিলেন না। ঘন্টা খানেক পর গর্ভপাত হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হলো। এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারালেন। হাসপাতালে নিতে হবে, কিন্তু অত রাতে গাড়ি কোথায় পাবে! রিকশায় নেয়া হলো হাসপাতালে।

দায়িত্বরত ডাক্তার বললেন ও.টি. তে নিতে, কিন্তু হাসপাতালে খালি নেই একটি ও.টি.ও! ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলো। জরুরী ভিত্তিতে রক্ত দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যাগ রক্ত দিতে গিয়ে রোগীর কাঁপুনি দেখা দিল।

এহেন গুরুতর অবস্থা থেকে বিস্ময়করভাবে রোগীর অবস্থা দ্রুত উন্নতি হলো। পরদিন বিকেলবেলা রিলিজ করে দেয়া হলো তাকে।

ভদ্রলোক সেই রাতে মানত করে বেরিয়েছিলেন, রোগী সুস্থ হলে বাসায় ফিরে একটা পরিমাণ টাকা মাটির ব্যাংকে দান করবেন। মানত মোতাবেক তিনি বাসায় ফিরেই টাকাটা দান করে দিলেন।

পুড়ে যেতে যেতে বেঁচে গেল দোকান

খাগড়াছড়িতে আদিবাসী হস্তশিল্পের একটি দোকান ছিল মহিলার। একবার দাঙ্গার কবলে পড়ে দোকানটি। দাঙ্গাকারীদের দেয়া আগুনে দোকান পুড়ে যাওয়ার খবর শুনে তিনি তাৎক্ষণিক মাটির ব্যাংকে কিছু টাকা দান করে প্রার্থনা করলেন যেন দোকানটি রক্ষা পায়। কিছুক্ষণ পর স্বামীর ফোন- দোকান অক্ষত আছে! পরিচিতদের বাধার মুখে দাঙ্গাকারীরা আগুন দিতে সফল হয় নি।

সবচেয়ে কল্যাণকর উপায়ে যেভাবে দান করবেন-

লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নয়, দান করতে হবে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য, বিশুদ্ধ নিয়তে ও সাধ্যমতো।

আপনি দান করে যা পেতে চান দানের পরিমাণ হতে হবে তার আনুপাতিক হারে। ধরুন- পাঁচ কোটি টাকার টেন্ডার পেতে যদি দান করেন পাঁচ টাকা তাহলে তা পর্যাপ্ত হবে না।

গোপনে বা প্রকাশ্যে দুভাবেই দান করা যায়; তবে তা হতে হবে অবশ্যই সঠিক খাতে।

ভিক্ষা সৎদান নয়। কারণ ভিক্ষা একজন মানুষকে স্বাবলম্বী করার পরিবর্তে কর্মবিমুখ ও অক্ষম করে তোলে। তাছাড়া, ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করেছেন স্বয়ং নবীজী (স)।

এমএম//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি