ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

অগ্নিঝরা ১২ মার্চ: ঘুম ভেঙে জেগে উঠেছিল সুপ্ত আগ্নেয়গিরি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪০, ২০ মার্চ ২০২০

আজ ১২ তারিখ। অগ্নিঝরা মার্চের ১২তম দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনের ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে পাকিস্তানি শাসন ব্যবস্থা বলে কিছুই ছিল না। ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া বাংলাদেশের সমস্ত কিছু পরিচালিত হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে শেকল ছেঁড়ার অদম্য নেশায় দুরন্ত দুর্বার হয়ে ওঠে বীর বাঙালি। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, বিদ্রোহ, বিক্ষোভে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছিল। ছাত্র-জনতার সঙ্গে পেশাজীবীরাও রাজপথে নেমে আসেন, অংশগ্রহণ করেন আন্দোলনে। লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনে পূর্ব বাংলায় থাকা পাকিস্তানি সামরিক জান্তা দমে যেতে থাকে।

১৯৭১ সালের ১২ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অসহযোগ আন্দোলন সরকারি, আধা-সরকারি কর্মচারীদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ ও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানো অব্যাহত থাকে।

লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণ-ঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, দোষ করা হল লাহোরে কিন্তু বুলেট বর্ষিত হল ঢাকায়। তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়।

পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে। আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। লাহোরে ন্যাপের মহাসচিব সিআর আসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের বর্তমান সংকটের জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতি ও আমলারাই দায়ী।

ভুট্টোও এ ব্যাপারে নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ভুট্টোর হুমকিপূর্ণ মনোভাব ও ক্ষমতার লিপ্সাই রাজনৈতিক সংকটকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে। জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত খেতাব বর্জন করেন।

রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।

ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাত কোটি বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমি জানি শেখ মুজিবর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না।

আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন। চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য প্রেরিত খাদ্য বোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি প্রেরণের ঘটনায় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করেন। বগুড়া জেলখানা ভেঙে ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের গুলিতে একজন কয়েদি নিহত ও ১৫ জন আহত হন।

একাত্তরের মার্চ মাসের দিনগুলো ছিল থমথমে, উৎকণ্ঠা, শঙ্কায় পরিপূর্ণ। চাপা উদ্বেগ, অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি। কী ঘটবে, কী ঘটতে যাচ্ছে- তা নিয়ে চিন্তিত, উৎকণ্ঠিত ছিলেন সবাই।

অবরুদ্ধ গণমানুষ ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছিলেন চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য। লক্ষ্য একটাই, নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা। কারণ, ততদিনে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে, পশ্চিম পাকিস্তানি বেনিয়া দুর্বৃত্ত শোষকগোষ্ঠী বাঙালিকে তার ন্যায্য অধিকার কোনোদিনই দেবে না। তাই তাদের বিরুদ্ধে শুধু সংগ্রাম, মিছিল-সমাবেশই নয়, লড়তে হবে চূড়ান্ত লড়াই।
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি