অচিরেই ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেবো: ড. আখতারুজ্জামান
প্রকাশিত : ১৬:৫৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১২:৫৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচন হচ্ছে না প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) । সবশেষ ১৯৯০ সালে নির্বাচন হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে রদবদল হয়, ভিসি যান ভিসি আসেন কিন্তু নির্বাচন আর হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিবেশ তৈরি করে ডাকসু নির্বাচন দেওয়া র আশ্বাস দেন। শিক্ষার্থীরা সেই আশ্বাসে আশান্বিত হয়। আশ্বাসে আশ্বাসে ভিসির মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। কিন্তু আশ্বাস আশ্বাসই থেকে যায়, নির্বাচন আর হয় না। এটা যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ডাকসু নির্বাচন বিরাট একটা বিষয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা, জাতীয় ও রাজনৈতিক নিরাপত্তাও জড়িত রয়েছে। এসব বিষয় সমন্বয় করে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। এতোদিন নানাবিধ কারণে নির্বাচন হয়নি। অচিরেই আমরা নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। সম্প্রতি ইটিভি অনলাইনে সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, আবাসন ও লাইব্রেবিতে সিট সংকট, ডাকসুসহ সার্বিক বিষয়ে ড. আখতারুজ্জামান এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইটিভি অনলাইনের প্রতিবেদক তবিবুর রহমান
ইটিভি অনলাইন : শিক্ষার মান উন্নয়নে আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
ড. আখতারুজ্জামান : শিক্ষার মান উন্নয়নে অবশ্যই বড় ধরনের পরিকল্পনা আছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে আগে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে হবে। তাদের জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক কিছু জড়িত আছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের পরিবহণ সুবিধা দিতে হবে। ক্লাস রুমে সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো সমন্বিত উন্নতির মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নায়ন করা সম্ভব। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি । আশা করি, উপরোক্ত বিষয়গুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে শিক্ষার সঠিক মান নিশ্চিত হবে।
ইটিভি অনলাইন : বিশ্ববিদ্যালয় হলো দক্ষ মানুষ তৈরির কারখানা। তবে আবাসন সংকট ও লাইব্রেরি সংকটের কারণে এর কাজ অনেকটাই ব্যহত হচ্ছে। আবাসন ও লাইব্রেরি সংকট নিরসনে আপনার পদক্ষেপ কী হবে?
ড. আখতারুজ্জামান : শিক্ষার্থীদের থাকার ও পড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। এমনকি হলে খাবারের মান উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বড় ধরনের একটা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। লাইব্রেরির জন্য ২০তলা বিশিষ্ট ভবন ব্যাহত নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী ৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরপুর্তি সামনে রেখে আমরা এ উদ্যোগগুলো নিয়েছি। এগুলো শেষে হলে আশা করি, আবাসন ও লাইব্রেরি সংকট আর থাকবে না।
ইটিভি অনলাইন : দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। সব ভিসিরা দায়িত্ব নেওয়ার পর অঙ্গীকার করেন নির্বাচন দেবেন। কিন্তু দেন না। আপনিও কী একই পথে হাটবেন?
ড. মো. আখতারুজ্জামান : ডাকসু নির্বাচন বিরাট একটা বিষয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা, জাতীয় ও রাজনৈতিক নিরাপত্তাও জড়িত রয়েছে। এসব বিষয় সমন্বয় করে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, এতোদিন নানাবিধ কারণে নির্বাচন হয়নি। অচিরেই আমরা নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি।
ইটিভি অনলাইন : কতদিনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে?
ড. মো. আখতারুজ্জামান : নির্ধারিত সময় বলা যাবে না। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে হবে বলে এমন আশা করছি।
ইটিভি অনলাইন : সেশনজট নিরসনে আপনারা বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না?
ড. আখতারুজ্জামান : সেশনজট নিরসনে আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বিভিন্ন বিভাগের সেশনজট কমে এসেছে। তবে কয়েকটি বিভাগে এখনও সেশনজট আছে। সেগুলো নিরসনে কাজ চলছে। আশা করি, কিছু দিনের মধ্যে সেশনজট আর থাকবে না।
ইটিভি অনলাইন : আবাসন সংকটের কারণে একটি মহল হলের সিট নিয়ন্ত্রণ করছে। এ সমস্যা সমাধানে আপনার ভূমিকা কী?
ড. আখতারুজ্জামান : ছাত্রাবাসে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলে কোনো সমস্যা থাকবে না। আমরা হলে আসন সংখ্যার বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে ভাবছি।
ইটিভি অনলাইন : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কিছু অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ রয়েছে কী?
ড. আখতারুজ্জামান : আগে কি হয়েছে, এ বিষয়ে কিছু বলবো না । এখন যদি কোনো অনিয়ম হয়, কঠোর ব্যবস্থা নেবো। কোনো অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
ইটিভি অনলাইন : সন্ধ্যাকালীন যে কোর্স চালু আছে, তা বন্ধের কোনো ব্যবস্থা নিবেন কী?
ড. আখতারুজ্জামান : সন্ধ্যাকালীন কোর্সের মাধ্যমে যারা পড়াশোনা শেষ করছে, তাদের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে কিনা এটা বলতে পারবো না । তবে এই কোর্স ঢাবির জন্য একটা বোঝা। আমাদের শিক্ষকদের অনেক কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। এ কারণে যে কোর্সগুলো চালু আছে সেগুলোতে মানসস্মত শিক্ষা প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে কোর্সগুলো আপাতত বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
ইটিভি অনলাইন : ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
ড. আখতারুজ্জামান : আসলে সাত কলেজকে ঢাবি অধিভুক্ত করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এখন এটা সমন্বয় করতে কাজ চলছে। এটা আমাদের কাছে বিরাট এক দায়িত্ব। আমরা মনে করছি, জানুয়ারি মাস থেকে এ নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। এমনকি সাত কলেজের ২০১১-২০১২ সেশনের অনার্সের ফল গত মাসেই প্রকাশ করা হয়েছে।
ইটিভি অনলাইন : ভর্তি প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আপনার পদক্ষেপ কী?
ড. আখতারুজ্জামান : প্রশ্নপত্র ফাঁস আর প্রশ্ন জালিয়াতি দুই ধরনের ঘটনা। পরীক্ষার আগে হাতে হাতে যে প্রশ্ন পাওয়া যায়, তা প্রশ্ন ফাঁস। আর পরীক্ষার ভিতরে ডিভাইজ বা বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য ফাঁস হলে, প্রশ্ন জালিয়াতির পর্যায়ে পড়ে। ঢাবিতে সাধারণত প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না। তারপরও এমন ঘটনা ঘটলে প্রসাশন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযারী ব্যবস্থা নেবো।
ইটিভি অনলাইন : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ড. আখতারুজ্জামান : ইটিভি অনলাইন পরিবারকেও ধন্যবাদ।
‘‘অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ১৯৬৪ সালের ১ জুলাই বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ অনার্স ও এম এ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা ইন পার্সিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ বিষয়ে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করেন। ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজের ফুলব্রাইট স্কলার এবং যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো ছিলেন। ড. আখতারুজ্জামান ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৫ সালের ১৫ জানুয়ারি সহকারী অধ্যাপক, ২০০০ সালের ২ জানুয়ারি সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০০৪ সালে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কবি জসীমউদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে কলা অনুষদের ডিন নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের ২৩ জুন থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি ভিসির দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। ‘’
/ডিডি/ এআর
আরও পড়ুন