ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

অটোসাজেশন চর্চার প্রবর্তক: প্রফেসর এম ইউ আহমেদ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১৮:২৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী, আত্মউন্নয়নে ধ্যানপদ্ধতি প্রয়োগের প্রবর্তক এবং বাংলাদেশে ফলিত মনোবিজ্ঞানের পথিকৃৎ প্রফেসর এম ইউ আহমেদ। মনোবিজ্ঞানের মধ্যে ধ্যানকে অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি। ধ্যান, মোরাকাবা, মোশাহেদার চর্চাকে আশ্রম-খানকার চৌহদ্দি থেকে বের করে নিয়ে আসেন সাধারণ মানুষের কল্যাণে। ধ্যানকে নিরাময় ও আত্মউন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োগের ধারণাকে যিনি শুধু উপমহাদেশে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও প্রথম প্রবর্তন ও জনপ্রিয় করেন। ৬০ এর দশকে পাশ্চাত্যে যখন এ নিয়ে আলোচনা ও আগ্রহের সূচনা ঘটে, তারও বহু আগে ১৯৪০ সালে তিনি লিখেছিলেন তার "লার্ন টু হিপনোটাইজ এন্ড কিওর" গ্রন্থ যাতে তিনি তুলে ধরেন ধ্যান ও সম্মোহনের প্রক্রিয়া এবং নিরাময়ের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগকে।

এম ইউ আহমেদের পুরো নাম মোফাসসিল উদ্দীন আহমেদ। জন্ম ১৯০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার (বর্তমানে পিরোজপুর) মঠবাড়িয়া থানার গুলিশাখালী গ্রামে। পিতা মৌলভী আজহারউদ্দিন আহমেদ। ১৯৮৮ সালের ৩১ জানুয়ারি, আশি বছর বয়সে মহাজাগতিক সফরে পাড়ি জমান ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ।

ফলিত মনোবিজ্ঞানের পথিকৃৎ
বাংলাদেশে ফলিত মনোবিজ্ঞানের পথিকৃৎ প্রফেসর এম ইউ আহমেদ। মনোবিজ্ঞানের প্রক্রিয়াকে সাধারণ মানুষের কল্যাণে প্রয়োগের ধারণা এদেশে তিনিই প্রথম দেন। ‘মেডিস্টিক সাইকোথেরাপি’ নামে মনোচিকিৎসার যে প্রক্রিয়া তিনি উদ্ভাবন করেন তা প্রয়োগ করে বহু মানুষ মুক্ত হয়েছিলেন শারীরিক ও মানসিক নানা রোগব্যাধি থেকে।

তার লেখা বইগুলোর শিরোনাম দেখলেই বোঝা যায় ফলিত মনোবিজ্ঞান নিয়ে তার গবেষণা ও পরীক্ষণের বিস্তৃতি সাইকোলজি হেল্পস ইউ: ডেভেলপ স্ট্রং পার্সোনালিটি, মৃগী ও মুর্চ্ছা রোগ, যৌনরোগ চিকিৎসায় মেডেস্টিক সাইকোথেরাপি এবং মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদি।

অটোসাজেশন চর্চার প্রবর্তক
ফলিত মনোবিজ্ঞানের একটি কার্যকর প্রক্রিয়া হিসেবে ‘অটোসাজেশন’ স্বীকৃত হতে শুরু করে বিংশ শতকের প্রথম থেকে। ফ্রান্সের হিপনোথেরাপিস্ট ডা. এমিল কোয়ে এ নিয়ে বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন। আর উপমহাদেশে এ প্রক্রিয়াকে পরিচিত ও জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে প্রফেসর এম ইউ আহমেদের ছিল অগ্রণী ভূমিকা।

ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন ও রোগমুক্তির জন্যে প্রফেসর এম ইউ আহমেদ তার লার্ন টু হিপনোটাইজ এন্ড কিওর গ্রন্থে অনেকগুলো অটোসাজেশনের উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো-

১. আমি সুস্থ হবো, সুখী হবো।
২. আমি আশাবাদী, আত্মবিশ্বাসী, গতিশীল, স্বাধীনচেতা, বলিষ্ঠ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং প্রাজ্ঞ।
৩. আমি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকব, শক্তিমান হবো, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবো, সুখী হবো।
৪. আমি ধূমপান ঘৃণা করি, মাদকদ্রব্যকে ঘৃণা করি। শিগগিরই আমি এগুলো ছেড়ে দেবো।
৫. আমি শক্তিশালী মন ও দেহের অধিকারী। জীবনে অবশ্যই সফল হবো।
৬. আমি সাহসী ও শক্তিমান। নিজের জন্যে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ব।
আর তার নিজের মন্ত্র ছিল, ‘লিভ লং, হ্যাপি স্ট্রং, গ্রো ইয়ং।’

“সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন” এবং এম ইউ আহমেদ-
এম ইউ আহমেদের লিভ লং, হ্যাপি, স্ট্রং এরই মর্ম অবলম্বনে পরবর্তীতে সৃষ্টি হয় অটোসাজেশন ‘সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন’- যা আজ বাংলাভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচারিত অটোসাজেশনের একটি।

আত্মউন্নয়নে ধ্যানপদ্ধতি প্রয়োগের প্রবর্তক
ধ্যানকে আত্মউন্নয়ন ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগের একজন প্রবর্তক ছিলেন প্রফেসর এম ইউ আহমেদ। তার মেডিস্টিক সাইকোথেরাপির মূল উপজীব্য ছিল ধ্যান বা মেডিটেশন। এর আগ পর্যন্ত ধ্যান ছিল মূলত আশ্রম ও খানকাহর চৌহদ্দিতে বন্দি একটি রহস্যঘেরা প্রক্রিয়া। কিন্তু তার প্রচেষ্টার ফলেই ধ্যান সাধারণ মানুষের চর্চার নাগালে উঠে আসে এবং আত্মউন্নয়ন ও নিরাময়ের কাজে প্রয়োগ হয়। এটা তিনি এমন এক সময়ে করেন যখন পাশ্চাত্য বা পৃথিবীর অন্য কোথাও এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয় নি। কারণ আমরা জানি, আজ পাশ্চাত্যে যে মেডিটেশনকেন্দ্রিক নিরাময় আন্দোলনের জোয়ার চলছে তার সূচনা হয়েছিল ৬০ এর দশকের মাঝামাঝিতে। ধ্যানকে মনোবিজ্ঞানে অন্তর্ভুক্ত করার পেছনেও তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি