ঢাকা, শুক্রবার   ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধে লড়ছেন যে নারী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৫৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৭:২৭, ১৪ নভেম্বর ২০২০

Ekushey Television Ltd.

বিশ্বব্যাপী ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রসব সিজারিয়ান বা সি-সেকশন করানোর সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও৷ কিন্তু বাংলাদেশে সেই সীমা ছাড়িয়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে৷ গত দুই বছরে শিশু জন্মের ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের হার বেড়েছে ৫১ শতাংশ। বিষয়টিকে ‘অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার’উল্লেখ করছেন অনেকেই। সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের উপ-পরিচালক, ও নবজাতক ও মাতৃস্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ ডা. ইশতিয়াক মান্নান বলেন,বাংলাদেশি বাবা-মায়েরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে খরচ করেছেন প্রায় চার কোটি টাকার বেশি। যার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ হয় অপ্রয়োজনীয় সি-বিভাগের কারণে।

দেশের এমন পরিস্থিতি পরিবর্তনে কাজ করছেন এক তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। সম্প্রতি অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান রোধে নানা পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইনকে।

ইটিভি অনলাইন: দেশে সিজারিয়ানের বর্তমান অবস্থা কী ?
ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম:
সিজারিয়ান হলো মা ও সন্তানের জীবন রক্ষার্থে এক ধরনের চিকিৎসা। বিশ্বব্যাপী ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রসব সিজারিয়ান বা সি-সেকশন করানোর সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা । কিন্তু বাংলাদেশে এই হারটা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ৩১ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু মাতৃমৃত্যুর হার কমছে না। তার অর্থ এই যে বেশির ভাগই সি-সেকশন অপ্রয়োজনীয়। আমাদের দেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবসায়ী স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় সিজার বেড়েছে।

ইটিভি অনলাইন: কী কারণে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান বাড়ছে, আর এটা প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কী?
ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম:
সম্প্রতি সিজারিয়ান বেড়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যবসায়ী স্বার্থ। বেসরকারি হাসপাতালগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য অনৈতিকভাবে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ানের দিকে ঝুকঁছে। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যাসেবার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে আমারা পুরোপুরি ভাবে চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল। চিকিৎসকরা যে সিদ্ধান্ত দেন আমরা সেটাই মেনে নিই। এটা হচ্ছে এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বড় হাতিয়ার। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এখানে ডাক্তারদের নৈতিক শিক্ষার অভাব রয়েছে। 

এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত দায়ীদের অভাব রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিফতরের উদ্যোগে প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করতে পারে। প্রতিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত দায়ী বাদ্ধতামূলক করে দেওয়া উচিত। এছাড়া হাসপাতালগুলোর উপর সরকারের কড়া নজরদারী প্রয়োজন রয়েছে।

 
কি-সেকশন স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুকিঁপূর্ণ, এর ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে. এক্ষেত্রে মিডিয়া অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। অপ্রয়োজনীয় সি-সেক্শনের পেছনে আর একটা কারণ হচ্ছে প্রসববেদনার ভয়। বিশেষ করে  উচ্চবৃত্ত ঘরের নারীও মেয়েরো এখন প্রসব বেদনার ভয়ের কারণে সি-সিজার করতে ইচ্ছুক। এটা মূলত সচেতনতার অভাবের কারণে হয়েছে. তাদেরকে যদি ঝুকিঁগুলো সম্পর্কে ভাল করে ধারণা দেওয়া হয়।  এবং তার পাশাপাশি ৯ মাস ধরে শারীরিক ও মানসিক ট্রেনিং দিয়ে স্বাভাবিক ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত করা হয়। এই ক্ষেত্রে আমার বিশ্বাস যে তারা নিজ ইচ্ছায় সি-সেকশন করার সিন্ধান্ত নিবে না।

 
ইটিভি অনলাইন: অপ্রয়োজনীয় সিজার রোধে আমাদের করণীয় কী?
ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম:
আমাদের অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। আমরা এসব বিষয়ে দিক নির্দেশনা নিতে পারি চায়না ও ব্রাজিল থেকে। কারণ চায়না ও ব্রাজিলে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ানের হার আমাদের থেকেও শোচনীয় ছিলো। দুইটি দেশেই অপ্রয়োজনীয় সিজার রোধে আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছিল। চায়না অপ্রয়োজনীয় সিজার রোধে নানাবিধি স্বাস্থ্যনীতি গ্রহণ করেছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় চীন তাদের হাসপাতালগুলো সি-সেকশনের হারের জন্য কঠোরভাবে জবাবদিহি নিশ্চিত করেছিলো।
নতুন রুলস রেগুলেশন প্রণয়ন করার কারণে এটা কমছে। এমনকি প্রতিটি হাসপাতালে সিজারিয়ানের হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিলো। নির্ধারিত হারের চেয়ে অধিক হলে জরিমানা করা হতো। নির্ধারিত হারের চেয়ে কম সিজার করতে পারলে হাসপাতালকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এমন পদক্ষেপ আমাদের দেশে গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া আমাদের দেশের স্বাস্থ বিষয়ক সংগঠন গুলো, সুশীল সমাজ এবিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে পারে। নারী অধিকার নিয়ে যে সব সংগঠন কাজ করছে তারাও এবিষয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় সিজার রোধ করা সম্ভব।

ইটিভি অনলাইন: আপনি অপ্রয়োজনীয় সিজার রোধে আইনী লড়াই করে যাচ্ছেন। আদালতে একটা রিটও করেছেন। বর্তমান এর অবস্থা কি।

ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম: বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) এর পক্ষ থেকে আমি একটা রিট  দায়ের করেছি। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো.আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ ৩০,জুন এর রুল জারি করেছেন এবং  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপর নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী ১ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে ৬ মাসের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় সিজার রোধে নীতিমালাটি করে তৈরি করে কোর্টে দাখিল করতে বলা হয়েছে। রুলে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অপ্রয়োজনীয় সিজার প্রতিরোধে কার্যকর তদারকি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

ইটিভি অনলাইন: অপ্রয়োজনীয় সিজার নিয়ে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো কাজ করছেন কিনা। আপনার আগামীদিনের পরিকল্পনা কী?

ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম: স্বাস্থ্য খাতকে উন্নত করতে এর আগেই আমি অনেক কাজ করেছি  এবং করছি। আমাদের আন্দোলনের কারণে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা একটি নীতিমাল তৈরি হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জন্য। সেটিও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) এর পক্ষ থেকে করা হয়েছে। এছাড়া কিডনি প্রতিস্থাপনে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন সংশোধনের জন্য বিচারাধীন রয়েছে আমার করা আর একটি জনস্বার্থমূলক মামলা, বর্তমান অর্গান ডোনার আইনের সংকীর্ণতার করণে কিডনি না পেয়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। এবং এক প্রকার বাধ্য হয়ে ব্লাক মার্কেট থেকে বেআননিভাবে কিডনি সংযোজন করতে।

টিআর/
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি