ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

অফিসের ‘বস’ হতে পারে স্বাস্থ্যহানির কারণ!

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী

প্রকাশিত : ২০:২৪, ৪ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ০৮:৩৩, ৫ জানুয়ারি ২০২০

জন্ম সিলেটে, ১৯৪৭ সালে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন পাঠভবনে এবং দেশে-বিদেশে পড়াশোনা করেছেন। অধ্যাপনা করেছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চিকিৎসা বিষয়ে গবেষণা করেছেন লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে। গবেষণা, প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য ভ্রমণ করেছেন ইংল্যান্ড, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকা। গবেষণার বিষয় প্রাণরসায়ন, পুষ্টি ও চিকিৎসা-শিক্ষাপদ্ধতি। নিউ ইয়র্ক সায়েন্স অ্যাকাডেমির নির্বাচিত সদস্য। প্রকাশিত বই প্রায় ৫০টি। চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে দেশি-বিদেশি জার্নালে ৫০টির বেশি গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদানের জন্য পেয়েছেন শেরেবাংলা জাতীয় পুরস্কার।

কর্ম, সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিয়ালের একটি চরিত্র হতে পারেন ব্যাড (খারাপ) ‘বস’। কিন্তু বাস্তব জীবনে খারাপ বসের অধীনে কাজ করা কৌতুকের ব্যাপার নয়। একটি প্রতিষ্ঠানে যার সরাসরি তত্বাবধানে আপনি কাজ করেন, ওই ব্যক্তির মানসিকতা না বুঝতে পারলে নিশ্চিতভাবে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হবেন আপনি। অনেক সময়ে এই বসই হতে পারেন আপনার স্বাস্থ্যহানির কারণ।

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল আর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কর্মস্থল আর স্ট্রেস বিষয়ে ২০০টি গবেষণা ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, চাকুরী হারানোর ভয় আর উদ্বেগ ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ভঙ্গের কারণ হয়। আর চাকুরিতে খুব বেশি চাপ থাকলে ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

খারাপ বস'রা চাকুরির অনিরাপত্তা আর অবিরাম ক্লান্তিহীন চাহিদার পরিবেশ তৈরি করেন। খারাপ বস অনুমানের চেয়ে বেশি সংখ্যায় হয়। আমেরিকান মনোবিজ্ঞান সমিতি দেখেছেন, ৭৫ শতাংশ কর্মচারী তাদের বসদেরকে দেখেন চাকুরির সর্ব নিকৃষ্ট দিক আর সবচেয়ে চাপের কারণ হিসাবে। "people ask the difference between a leader and a boss. The leader leads and the boss drives," Theodore Roosevelt.

খারাপ বসের লক্ষণ কী কী?

মর্যাদা হানি করা: কখনও বসদেরকে কর্মচারীদের কাজের ফিডব্যাক দিতে হয়, হতে পারে তা শোনার অযোগ্য। অবশ্য অনেকে এমন জোরালো ধারণা দেন যে, তারা কাজ উপভোগ করেছেন। তবে এমন বস যদি হয়, যে সবসময় বিরূপ সমালোচনা করেন আর দোষারোপ করা উপভোগ করেন, তাহলে স্বাস্থ্যের খাতিরে সুযোগ বুঝে চাকুরি ছেড়ে দেয়াই ভাল।

সারাক্ষণ বদ মেজাজ: সবার খারাপ দিন যায়। অত্যাধিক চাপে বসের মেজাজ খিঁচড়ে যেতে পারে কিন্তু এমন বদ মেজাজ নিয়মিত হলে মুশকিল। তার মন মতো হলো না বলে যে কোনও সময় মেজাজ দেখালে, গালাগালি করলে চাকুরির ব্যাপারে পুনঃবিবেচনা করা ভাল। আপনার প্রতি হলেও এমন ক্রোধ, বদ মেজাজ পুরো কর্মস্থলে একটি নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত আর অতি সতর্ক করে রাখে। ফলে তারা গাল খাবার ভয়ে কথা বার্তা বলা আর সৃজনশীল ধারণা শেয়ার করা বন্ধ করে দেয়।

অযৌক্তিক প্রত্যাশা: কিছু কিছু বস তাদের কর্মচারীদের এমন ভাবে দেখেন, যেভাবে বাচ্চারা তাদের শিক্ষকদের দেখে। কাজের বাইরে যেন তাদের অস্তিত্ব নাই। কর্মচারীদের পারিবারিক দায়, তাদের শখ, নিজের জীবন, অফিসের বাইরে যে কোনও কিছু যা তার জন্য প্রয়োজনীয় নয়, সেগুলো গ্রাহ্যের মধ্যে আনেন না। তারা অতিরিক্ত সময় অফিসে বসিয়ে রাখেন অনাবশ্যক কিছু কাজের খাতিরে। যদি আপনার মনে হয় যে, আপনি আপনার বসকে হতাশ করছেন, তাহলে চাকুরি ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়া স্বাস্থ্যের জন্যই ভাল।

নিজে উদাহরণ হয়ে নেতৃত্ব দিতে অসমর্থ: কর্মচারীরা বিরক্ত হয় একটি মাত্র কারণে যে, বস যেভাবে বলেন তিনি নিজে সেই মানের নন। এরকম খারাপ বসকে ত্যাগ করা ভাল। খারাপ বস কেবল বিরক্তিকরই নন, তিনি শরীর আর মনের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হন। এমন হলে প্রস্তুতি নিন তাকে ত্যাগ করার।

টিআই/ এনএস


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি