ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

অবাধ্য সন্তানদের সু’পথে ফিরিয়ে আনার উপায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৪৮, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২৩:১০, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

তন্বিতা ঘোষ

তন্বিতা ঘোষ

বাবা মায়ের সবচেয়ে আপন তার সন্তান। সকল বাবা মা চায় তার সন্তান ভাল থাকুক। পড়াশুনা করুক। ক্যারিয়ারে ভাল করুক। ফলে সবাই সন্তানকে নিয়ে উদ্বিগ্নতার মধ্যে থাকেন। প্রত্যেক অভিভাবক নিজেদের মধ্যে গল্প করার সময় যে বিষয়টা নিয়ে অভিযোগ করেন তা হলো তার সন্তান কথা শুনেনা।    

তারা তার বাচ্চার অবাধ্যতার কথা বলতেই থাকেন। তারা যখন আমাদের কাছে আসেন তখন অনেকগুলো অভিযোগ নিয়ে আসেন। আমার বাচ্চা কথা শুনেনা, ঠিকমতো চলে না, অবাধ্য ইত্যাদি ইত্যাদি। সাম্প্রতিক সময়ে যে অভিযোগটা বেশী করে তা হলো, ছেলে মেয়ে রাত করে ঘরে ফিরে। সারা রাত ফেসবুকিং করে, ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকে ইত্যাদি। আবার কোন কোন বাবা মা বলেন, তার ছেলে মেয়ের সংসারের প্রতি কোন মনোযোগ নেই, দায়িত্ববোধ নেই ইত্যাদি। 

এবার আসুন বিষয়টার ভেতরের দিকে যাই। আমরা এ অভিযোগ কার সর্ম্পেক করছি। আমাদের সন্তান কিন্তু আমাদেরই প্রতিচ্ছবি। তাহলে সে কেন এমন হলো? সে কেন আমার কথা শুনছে না?কেন সে রাত জেগে টিভি দেখছে, ফেসবুকিং করছে। কেন সে কথা না শুনে লেটনাইটে বাইরে চলে যাচ্ছে। কেন সে স্কুলে না গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। কেন সে পরিবারকে সময় দিচ্ছেনা? আমরা কী কখনো কারণটা ভেবেছি। আমার বাচ্চা কী শুধু খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশে বলেই এমন করছে? না, মনে রাখতে হবে, এর জন্য আমরা বাবা মায়েরা অনেকাংশে দায়ী।

আমরা কী অস্বীকার করতে পারি, আমাদের পরিবারগুলো এখন অনেকটা ইউনিক পরিবার হয়ে গেছে। বাবা, মা, সন্তান ও বড় জোর একজন কাজের লোক। এই ছোট্ট পরিসরে সে কোন আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেনা। তাকে না হয় কোন আনন্দ দিতে পারলাম না। কিন্তু তার সঙ্গে তার মতো করে কী কোন আলাপ করি? কখনো তার সঙ্গে কোন বিষয় নিয়ে গল্প করেছি? আমরা সবসময় আশা করি, আমার সন্তান আমাকে বুঝবে। আমার কথা শুনবে। আমার কথামতো চলবে। কিন্ত আমরা কী আমাদের সন্তানকে বুঝি বা বুঝার চেষ্টা করি। আমরা কী কখনো তার পছন্দের কথা ভাবি? আমাদের ভাবার সময় এসেছে, আমাদের এই ইউনিক পরিবার আমাদের র্কমব্যস্ত জীবনে আমাদের সন্তানদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে অন্তরায় নয় কী? পাশাপাশি সে যখন পড়াশুনার পাশাপাশি বড় হয়ে উঠছে তখন তার সামাজিকীকরণটাই বা কতটুকু হচ্ছে?  

এখানে প্রশ্ন এসে যায়, যৌথজীবন মানে কী সবটুকু খারাপ? আজকাল যৌথপরিবার খুঁজেই পাওয়া যায়না। এমনকী গ্রামাঞ্চলেও যৌথজীবন খুঁজে পাওয়া কঠিন। একবাড়ীতে হয়তো থাকছে। তবে সেখানেও আলাদা আলাদা। যে যার মতো। কেউ কারো সাথে মিশছে না। তার মানে কী? সবার জীবনটা, চিন্তা ভাবনাটা, দেখার দৃষ্টিভঙ্গীটা খুব ছোট হয়ে গেছে। ফলে মানসিক বিকাশটা কমে যাচ্ছে। সাথে ভাল লাগার মাত্রাটা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তাই ভাল লাগার জন্য, আনন্দের জন্য আমরা বাইরের দিকে যাচ্ছি।  

এখন প্রশ্ন হলো সন্তান কেন কথা শুনছে না? আমরা কী কখনো তার সঙ্গে নরম সুরে বলেছি,তুমি কী এটা করেছ? কেন করেছ? এখন যে এটার জন্য এ সমস্যাগুলো হচ্ছে এটা তোমার কেমন লাগছে? এভাবে কী কখনো তার সঙ্গে কথা বলেছি?  

আমরা যখন বাবা মা হই তখন সাধারণত সন্তানের মতামতকে খুব একটা গুরুত্ব দিই না। আমাদের মধ্যে একটা দৃঢ় বিশ্বাস থাকে, সন্তান মানেই সে ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সে অনেক বেশী সমস্যায় পড়বে বা আমরা অনেক সমস্যায় পড়ব। হতে পারে, কিছু কিছু সময় সন্তানরা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ভুলটাকে যদি আমরা মেনে নিয়ে তা সংশোধন করার জন্য তাকে সহযোগিতা করি তাহলে কিন্তু অনেক ঝামেলা কমে যায়।    

সাধারণত দেখা যায়, বাবা মা কোন কিছু নিয়ে শাসন করলে তা যদি নেগেটিভও হয়, সন্তান যতোদিন ছোট থাকে- ততোদিন তা মেনে নেয়। সেটা সাত আট বছর বয়স পর্যন্ত। কিন্ত সে যখন একটু বড় হয় বা বয়:সন্ধিকালের দিকে যেতে থাকে তখন তারা মানসিক ভাবে যুক্তিসম্পন্ন হতে থাকে। তাদের চিন্তার পরিধি বাড়তে থাকে। যুক্তি দিয়ে অনেক কিছু বুঝতে শিখে থাকে। তখন তারা বাবা মায়ের সব শাসন কে ইতিবাচক ভাবে নিতে পারেনা। নেতিবাচককে নেতাবাচকই মনে হয় তখন। তখন থেকে শুরু হয় তাদের আরও বেশী বিরোধী আচরণ। এভাবেই শুরু হয় বাবা মায়ের বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রবণতা।

আসুন, আমরা আমাদের সন্তানদের বুঝতে শিখি। আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে তাদের সমস্যার সমাধান করে তাদেরকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করি।     

লেখক: তন্বিতা ঘোষ, সাইকোলজিস্ট ও থেরাপিউটিক কাউন্সিলর, বিআরবি হসপিটাল।       

আআ/এসি  

 
    


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি