ঢাকা, বুধবার   ০২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

অভাবিত এক মানুষ

সেলিম জাহান

প্রকাশিত : ১৬:৩৩, ৩১ জানুয়ারি ২০২১

Ekushey Television Ltd.

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে বিশ্বব্যাংক, আইএলও, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই- বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি, অর্থনীতি-কড়চা, Freedom for Choice প্রভৃতি।

‘অনাগত প্রজন্মকে এটা বিশ্বাস করানো রীতিমত কষ্টকর হবে যে, এ রকম একজন মানুষ রক্তে-মাংসে গড়া এক মানুষ- সত্যিই একদিন এই পৃথিবীর পথে হেঁটেছিলেন’ -কথা ক’টি আলবার্ট আইনস্টাইনের। আইনস্টাইন তা বলেছিলেন মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে গান্ধীজীব মৃত্যুর পরে।

৩০শে জানুয়ারী মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াণ দিবস। আজ থেকে ঠিক ৩০ বছর আগে এই দিনে বেনু আর আমি দিল্লীতে ছিলাম। দু’জন গিয়েছিলাম রাজঘাটে গান্ধীজীর সমাধিস্থলে। দিল্লীর জানুয়ারীর বিকেল-শীত পড়েছিল বেশ। পড়ন্ত নরম রোদ ছিল রাজঘাটে-পাশের নদী থেকে বইছিল উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাস। সমাধি ঘিরে বসা নর-নারীর কণ্ঠে গুঞ্জিত হচ্ছিল, ‘রঘুপতি রাঘব রাজারাম, পতিত পাবন সীতারাম’। চারদিকের আবহ একটি পবিত্র স্বর্গীয় পরিবেশের সৃষ্টি করছিল। কোথাও কোনও শব্দ নেই, কোনও কথা নেই, শুধু মৃদুস্বরে ভেসে আসছিলো, ‘রঘুপতি রাঘব, রাজারাম ...’।

আরও দু’বার রাজঘাট গিয়েছিলাম। দু’বারই গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে। একবার জ্যেষ্ঠা কন্যা রোদেলার সঙ্গে, অন্যবার কনিষ্ঠা মেখলার সঙ্গে। ভালো লেগেছিলো তাদের।

আর তিনবার গিয়েছিলাম সমৃদ্ধ গান্ধী যাদুঘরে। আমাদের দু’কন্যার সঙ্গে দু’বার আর বেনুর সঙ্গে ২০১২ সালে শেষবার। ইতিহাসে আমাদের উৎসাহ সুপ্রচুর। তাই প্রতিবারেই বেশ ক’ঘন্টা ধরে ঘুরে ঘুরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকিছু দেখেছি। ছবি তুলেছিলাম অনেক। সব দেখে মুগ্ধ হয়েছি। বিমুগ্ধ করার মতনই জীবন তাঁর। 

নানান জিনিস আছে সে যাদুঘরে। গান্ধীজীর ব্যবহৃত নানান সামগ্রী- তাঁর সুবিখ্যাত ট্যাঁকঘড়ি, গোল চশমা, চটি।সেই সঙ্গে আছে  তাঁর বইপত্র, বিছানা, দলিলপত্র। এবং অসংখ্য ছবি। তবে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে একটি পুরোনো কাগজে কাঁচাহাতে লেখা বাংলায় ক’টি বাক্য। আংশিকভাবে সেখানে লেখা- ‘শৈল তাঁহার বড় মেয়ে। আজ কৈলাসের সাথে শৈলর বিয়ে’। গান্ধীজীর হাতের লেখা- এক সময় বাংলা শিখছিলেন তিনি, শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর সঙ্গে সাক্ষাতের পরে তাঁর হয়তো বাংলা শেখার বাসনা জন্মেছিলো। কে জানে? 

পৃথিবীর বহু জায়গায় বহু শহরে গান্ধী মূর্তি দেখেছি - কোনটি আবক্ষ, কোনটি পূর্ণ মূর্তি। তেমন মূর্তি দেখেছি মস্কোতে, লন্ডনে, বার্লিনে, জোহানেসবার্গে, ডাবলিনে। তাঁর তৈলচিত্র দেখেছি নানান জায়গার যাদুঘর আর চিত্রশালায়। কিন্তু সবশেষে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে নিউইয়র্কের ইউনিয়ন স্কোয়ারের ছোট্ট পার্কের কোনার ছোট্ট গান্ধী ভাস্কর্যটি। 

আজ গান্ধীর প্রয়াণ দিবসে চলমান ছবির মতো কতো স্মৃতি যে মনে পড়ছে। পরম শ্রদ্ধা জানাই এই অতিমানবটিকে - এখনও ভাবতে অবাক লাগে যে, আমাদের মতো রক্তমাংসের এমন একটি মানুষ পৃথিবীর পথে হেঁটেছিলেন।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি