অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে
প্রকাশিত : ১৯:১৮, ১১ মার্চ ২০১৯
বাগেরহাট শহরের সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলার প্রধান আসামী সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা শেখ মাহফিজুর রহমান বাবুকে ৩৭) কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সোমবার দুপুরে দুদকের বিশেষ আদালতের বিচারক জেলা জজ গোলক চন্দ্র বিশ্বাসের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে আদালতের বিচারক নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার পর থেকে এই কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। পলাতক থাকা অবস্থায় এই জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা শেখ মাহফিজুর রহমান বাবু আত্মসাৎ করা ৩৫ লাখ টাকা ফেরতও দিয়েছিলেন। তিনি বাগেরহাট শহরের সরুই এলাকার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ আনিসুর রহমানের ছেলে।
বিগত ২০১২ সাল থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত বাগেরহাট শহরের রেলরোডে অবস্থিত সোনালী ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয় থেকে ব্যবস্থাপক থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবর রহমান, তার ব্যাঙ্কের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা শেখ মাহফিজুর রহমান বাবু ও আরেক কর্মকর্তা সিবিএ নেতা মো.জাহাঙ্গীর হোসেন খলিফাসহ অন্তত ১২জন ব্যাংক গ্রাহককে সাথে নিয়ে পরষ্পর যোগসাজসে ওই ব্যাঙ্কের ১৫০ জন গ্রাহকের এসওডি (সিকিউর ওভার ড্রাফট) বিপরীতে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে তাদের হিসাব থেকে চার কোটি ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংঙ্কের কর্মকর্তা ব্যবস্থাপক শেখ মুজিবর রহমান ও জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা শেখ মাহফিজুর রহমান বাবুকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।
২০১৬ সালের আগষ্টে ব্যাংকের আরেক জুনিয়র অফিসার (ক্যাশ) ও সিবিএ নেতা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খলিফাকেও সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাঙ্কের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অডিট নিরিক্ষাকালে সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট প্রধান শাখার ওই অর্থ আত্মসাতের তথ্য ফাঁস হয়। এই ঘটনায় ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর সোনালী ব্যাংকে নতুন যোগদান করা ব্যবস্থাপক খান বাবলুর রহমান বাদী হয়ে ব্যাংকের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা শেখ মাহফিজুর রহমানের নাম উল্লেখ করে বাগেরহাট মডেল থানায় অর্থ আত্মসাত ও প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন।
বিগত ২০১৫ সারেন ২৪ ডিসেম্বর দূর্নীতি দমন কমিশন মামলাটির তদন্ত কাজ শুরু করে। তদন্তে নেমে ওই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা ও ১২ জন গ্রাহকের সংশ্লিষ্টতা পায় দুদক। তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিন ব্যাংঙ্ক কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। অভিযুক্ত ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন আরও একজন।
দূর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী মিলন ব্যানার্জী বলেন, সোমবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত পলাতক জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা শেখ মাহফিজুর রহমান বাবু দুদকের বিশেষ আদালতের বিচারক জেলা জজ গোলক চন্দ্র বিশ্বাসের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বাগেরহাট সোনালী ব্যাংকের রেলরোডের প্রধান শাখা থেকে ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক শেখ মুজিবর রহমান ও জুনিয়র কর্মকর্তা (ক্যাশ) ও সিবিএ নেতা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খলিফাকে গ্রেপ্তার করে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরে অন্য অভিযুক্তরা উচ্চ ও নিন্ম আদালতের মাধ্যমে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
কেআই/
আরও পড়ুন