ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

অ্যাকুরিয়ামের সাকার ফিস খেয়ে ফেলছে নদনদীর মাছ (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী

প্রকাশিত : ১১:৪৫, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

Ekushey Television Ltd.

অ্যাকুরিয়ামের শোভাবর্ধন আর আবর্জনা পরিষ্কার করে সাকার মাউথ ক্যাট ফিস। এখন দেশের অনেক নদী-নালা-খালবিল, পুকুর-ডোবায় পাওয়া যাচ্ছে এই মাছ। খেয়ে ফেলছে মিঠাপানির মাছ, কীট পতঙ্গ-জলজ উদ্ভিদ। অবাঞ্চিত মাছটি অপসারণ করা না গেলে মাছের আকাল পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাল নিয়ে জামাল মিয়ার পেশাজীবন কুড়ি বছরেরও বেশি। মাছ ধরাই পেশা-নেশা। ধরা মাছ বিক্রি করে চলে সংসার। কয়েক বছর আগেও মাছ জালে ধরা দিলেও এখন চলছে আকাল। 

এখন জালে কেবলই আটকায় ‘রোহিঙ্গা মাছ’ বলে সুপরিচিত সাকার মাউথ ক্যাটফিস। খাওয়ার অযোগ্য মাছটি ফেলে দেয়া ছাড়া কোন কাজে আসে না।

বাবার ফেলে দেয়া এসব অপ্রয়োজনীয় মাছ এখন খেলার বস্তু সাইফুলের। শত শত সাকার এভাবেই পড়ে থাকে বুড়িগঙ্গার তীরে। 

জেলে জামাল মিয়া বলেন, ‘ওই মাছের জন্য বর্ষার সময় জাল মারতে পারি না এখনও মারতে পারছি না। সারাদিন কষ্ট করে ১শ’-দেড়শ’ টাকার মাছ পাই, এর বেশি পাই না।’

একই অনুযোগ ঢাকার অন্য নদীর মৎস্যজীবীদের। সাকারের ধারালো পাখনার আঘাতে মরে যাচ্ছে খাবার যোগ্য মাছগুলো।

অন্য আরেক জেলে বলেন, ‘জাল ভরে উঠে তাই এখন আর কেউ জাল ফেলে না। এই মাছের জন্য আমরা অন্য মাছ পাচ্ছি না। এই মাছগুলো অন্য মাছ খেয়ে ফেলছে।’

সাকারের বেঁচে থাকার কাল কুড়ি বছর। পানি ছাড়াই বাঁচে ২৪ ঘন্টা। যদিও লম্বায় বাড়ে ১৮ ইঞ্চি, কিন্ত বংশবৃদ্ধি অস্বাভাবিক রকমের বেশি। তাই ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত।

একে তো দখল-দূষণে মরতে বসেছে বুড়িগঙ্গা, তার উপর এই নদীতে যে মাছগুলো ছিল সেগুলোও কমে গেছে। এখন নতুন করে দেখা যাচ্ছে, সাকার ফিসের মতো অপরিচিত প্রজাতির কিছু মাছ। এই মাছগুলো অন্য মাছগুলোকে খেয়ে ফেলে। যার কারণে জেলেরা আর এই বুড়িগঙ্গাতে মাছই পাচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানান, ‘সিটি কর্পোরেশন থেকে হোক বা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে হোক এই মাছ অপসারণ করা খুবই দরকার। কারণ এরা পোনামাছগুলো খেয়ে ফেলে, মাছ উৎপাদনকে হ্রাস করে।’

আবার, পানিতে অক্সিজেন তৈরিকারী শৈবালকে খেয়ে সাবাড় করায় কমে যাচ্ছে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ। ফলে মারা যাচ্ছে মাছসহ অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। 

প্রাণি বিজ্ঞানী গুলশান আরা লতিফা বলেন, ‘এখন সারা বাংলাদেশের নদীর পানিতে ছড়িয়ে গেছে। সে অন্যসব ফিসগুলোকে সারপ্লাস করে দিয়ে সব খাবার-দাবার তারা খেয়ে ফেলে, তাদের জায়গা দখল করে ফেলে।’

এখন জলাধারগুলোতে সাকার অপসারণ না করলে খাবার মাছের সংকট তীব্রতর হবে। অবার, অপসারণ করতে কিছু পদ্ধতিও অনুসরণ করতে হবে বলে মনে করেন এই গবেষক।

গুলশান আরা লতিফা আরও বলেন, ‘একে তো কোন টকসিল মেটেরিয়াল দিয়ে তো মারতে পারবো না। আমরা বায়োলজিক্যালটি র‌্যাডিক্যাট করতে পারি।’

বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস, মাছটির আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। বিশেষ করে ব্রাজিলের অ্যামাজন অববাহিকায়। লাফাতে পারে তাই ছড়িয়ে পড়ে এক জলাশয় থেকে অন্য জলাশয়। 

প্রাণি বিজ্ঞানী জানান, খাওয়া যায় কিনা সেটা সম্পর্কেও আমাদের আরেকটু রিসার্চ করতে হবে। এর প্রোটিন অনেক আছে। 
এএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি