ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগের ইতিহাস রক্তের ইতিহাস

আলী আদনান

প্রকাশিত : ১৭:৫০, ২৩ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৮:২৬, ২৩ জুন ২০২০

রাজনৈতিক যাত্রায় ৭১- বছরের পথচলা অনেক বড় বিষয়। উপমহাদেশের রাজনীতির মাঠে এ যাত্রা একেবারে সহজ ছিল না। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন, সর্ববৃহৎ, ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক দলকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। বলা যায়, উপমহাদেশের রাজনীতির মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের সুখের ইতিহাস খুব কম। 

গল্পের রাজা সুয়োরানী ও দুয়োরানীর ক্ষেত্রে দুয়োরানীকে যেমন সকল কাজ করেও বঞ্চিত হতে হয়, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভাগ্যটাও তেমন। দলটির জীবনে জোয়ার যেমন এসেছে তেমনি বারবার এসেছে চরম ভাটা। ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তায় শীর্ষস্থানে যেমন আওয়ামী লীগ একাধিকবার গেছে তেমনি নাম নিশানা মুছে যাওয়ার অবস্থাও হয়েছে অনেকবার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো কিংবদন্তী নেতা যেমন দলটির নেতৃত্বে ছিলেন তেমনি মোশতাকের মতো কুলাঙ্গারও দলটিতে থেকে রাজনীতি করে গেছে। 

এবারের ৭১ বছরের আওয়ামী লীগের জন্মদিন একটু ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। সংগ্রাম, সাফল্য, ঐতিহ্যের আওয়ামী লীগের সামনে অনেকগুলো অর্জন এক হয়ে গেছে। একদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীন বাংলাদেশের সূবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে রূপান্তর। প্রতিষ্ঠার এ শুভলগ্নে টানা তিন মেয়াদের ক্ষমতাসীন এ দলটিকে করোনা নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭০-এর নির্বাচন, ঘূর্ণিঝড় যেভাবে সামাল দিয়েছিলেন, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাও একইভাবে লড়াই করে যাচ্ছেন। এ যেন পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার লড়াই।

এদেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যেটি দেশের স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একক এবং নিরবিচ্ছিন্ন ভূমিকা রেখেছে। দেশের বিভিন্ন সংকট ও দুর্যোগে অন্যদলগুলো যখন নানা নাটকীয়তায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় ক্ষেপণ করেছে, আওয়ামী লীগ তখন তার অবস্থানে অটল থেকে জনগণকে সংগঠিত করেছে। অন্যদলগুলো যখন কখনো ধর্মের দোহায় দিয়ে, কখনো সমাজতন্ত্রের দোহায় দিয়ে শুধু বড় বড় বিবৃতি দিয়েছে, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের রক্ত-ঘাম- শ্রমে আন্দোলনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছে লক্ষস্থলে। অন্যদলগুলো যখন ইতিহাসের সাক্ষী হওয়া নিয়ে অহংকারে ব্যস্ত, আওয়ামী লীগ তখন নির্মাণ করছে নতুন ইতিহাস।

যেহেতু আওয়ামী লীগ কোন নির্দিষ্ট শ্রেণিভিত্তিক দল নয় বরং 'ওপেন ডোর' রাজনীতিতে বিশ্বাসী, সেহেতু আওয়ামী লীগ রাজনীতির জোয়ারের সাথে খড় কুটোও অনেক সময় এসেই যায়। সবসময় সব খড়কুটো পরিষ্কার করা সম্ভবও নয়, সেটা হয়েও উঠে না। খড়কুটো আটকাতে গিয়ে জোয়ারের মুখে বাঁধ দেওয়া হবে সেটাও গণমানুষের রাজনীতিতে কাম্য নয়।

আওয়ামী লীগের পথচলায় সবচেয়ে বড় অহংকারটির নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি গণমানুষের মন বুঝতে পারতেন। এই বুঝতে পারাটাই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম করিয়েছে। তবে অনেক সময় বুঝলেও কিছু করার থাকে না। তেমনি একটি প্রেক্ষাপট উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫।

আওয়ামী লীগ একটি বড় ও জনবহুল দল। সমসাময়িক পৃথিবীতে অন্যতম বড় একটি বড় মিছিলের নাম আওয়ামী লীগ। এই মিছিলে অনেকে আসে, অনেকে যায়। ইতিহাস কাউকে স্মরণ রাখে, কাউকে রাখেনা। কেউ দাগ রাখে আবার কেউ হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়ার জন্য কেউ কেউ নিজে দায়ী। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দায়ী নিয়তি। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক শামসুল হক, আবুল মনসুর আহমদ, মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, আতাউর রহমান খান- প্রমুখ নেতাদের জীবন বিশ্লেষণ এই ধারনারই জন্ম দেয়। 

আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের মতাদর্শ অনুসারী ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগে টিকে থাকাও একটা বড় যোগ্যতা। সেটা অনেকে পারেন না। আ স ম রব থেকে ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী থেকে মাহমুদুর রহমান মান্না- এমন অনেক নাম এই তালিকায় আছে। আবার আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করতে করতে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সমমনাদের কাতারে এসেছেন, সুবিধা ভোগ করেছেন- এমন নেতাও কম নয়। ইনু- মেনন- মতিয়া- নাহিদ, এরা সেই তালিকার উদাহরণ। 

আওয়ামী লীগের বড় সম্পদ তার সুবিশাল কর্মীবাহিনী। এরা কোন তত্ত্ব মুখস্ত করে না। রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, আফগানের ধার করা উদাহরণ দিয়ে স্লোগান দেয় না। তবে এরা দলকে ভালবাসে, দেশকে ভালবাসে। দাবি করা যায়, ছয় দফার পর থেকে এই বিশাল কর্মী বাহিনীর ঐক্যের নাম, প্রতীকের নাম, আদর্শের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ঐক্যের সফল নেতা। আজকের পৃথিবীতে এমন উদাহরণ খুব বেশী নেই। 

আওয়ামী লীগের ইতিহাস রক্তের ইতিহাস। আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা কর্মীরা সবসময় রক্ত দিতে অভ্যস্ত। দলের প্রয়োজনে দেশের প্রয়োজনে এরা অতীতে কখনো রক্ত দিতে কুণ্ঠা বোধ করেনি।  ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১ যেমন আওয়ামী লীগের কর্মীদের শ্রম ও রক্তের ফসল তেমনি ৭৫- পরবর্তী নানা আন্দোলন সংগ্রামে যখন আওয়ামী লীগকে মুছে দেওয়ার জন্য বারবার চেষ্টা করা হয়েছে তখনো আওয়ামী লীগ কর্মীদের রক্তের স্রোতেই সেই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করা হয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, আজকের আওয়ামী লীগ দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য নেতা কর্মীর লাশের উপর। আওয়ামী লীগের চলার পথ মসৃন হয়েছে অসংখ্য কর্মীর শরীর থেকে ঝরা রক্তের দ্বারা।  আমি জানি, এ লেখাটি এতোটুকু যিনি পড়েছেন তিনি নিশ্চয় সুবিধাবাদী বা টাউট বাটপারদের উদাহরন টানবেন। আপনাকে বলি, এতবড় একটি দলে তেমন কিছু লোক থাকবেই। তা বলে ত্যাগীদের অবদানকে অস্বীকার করবেন কীভাবে?

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে অনেক নেতিবাচক সমালোচনা আছে। যদিও এমন অন্তর্কোন্দল প্রত্যাশিত নয়। আবার এটাও সত্য, বারবার প্রমাণ হয়েছে যে, দলের যে কোন ক্রান্তিলগ্নে সকল অন্তোর্ন্দলকে মিথ্যা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন তাদের কাছে দেশের স্বার্থেই দল বড়। আওয়ামী লীগের এ জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক সেটাই প্রত্যাশা। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
(লেখক- সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা)

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি