ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

আজকের প্রজন্ম খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার চায়: শেখ পরশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৭, ২৯ এপ্রিল ২০২৩ | আপডেট: ১১:১৭, ২৯ এপ্রিল ২০২৩

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার, বিকাল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও লেখক আবেদ খান। সঞ্চালনা করেন- বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একজন সাহসী বীরযোদ্ধা, বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর একজন গর্বিত সেনা অফিসার। বঙ্গবন্ধু তাঁর সেনা অফিসারদেরকেও সন্তানদের মতই ভালবাসতেন। সেই সন্তানতুল্য একদল উশৃঙ্খল সেনা কর্মকর্তাদের হাতেই লেঃ জামালের ও তাঁর নিজের প্রাণ যেতে হল। আজ শেখ জামালের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের অযুত ভালোবাসা, গর্ব ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে পেশাগতভাবে দক্ষ ও চৌকস বাহিনী হিসেবে।

আজকের এই দিনে একজন অকালপ্রয়াত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা, বন্ধু-অন্তপ্রাণ ও দুঃসাহসিক তরুণের কথা স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধাভরে। এই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারের রক্তপাত যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করেছিল, তাদের সেনা আইনে বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সে সময়ের সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ ও উপসেনা প্রধান জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানতো মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, তার প্রমাণ পাওয়া যায় জিয়ার পরবর্তী কার্যকলাপের মধ্যেই। এই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারকে সেনাবাহিনীর যে সদস্যরা হত্যা করেছিল তাদের সেনা আইনে বিচার না করে জিয়ার অবৈধ সরকার খুনিদের পুরষ্কৃত করে।

সেই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার করা যাবে না বলে দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে জিয়াউর রহমানের পার্লামেন্ট। খুনিদের বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়, দু’জন খুনিকে জনগণের ভোট চুরি করে জাতীয় সংসদে সদস্যপদ দেয়া হয়। এমনকি খুনিদেরকে দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ করে দেয়। সংবিধান, গণতন্ত্র এমনকি সেনা আইন কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে। শুধু তাই নয়, শেখ জামালসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের রক্তে রঞ্জিত এই জিয়াউর রহমানের হাত।

সুতরাং জিয়াউর রহমানের বিএনপির নেতৃবৃন্দ যখন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কথা বলে, ওদের লজ্জা পাওয়া উচিৎ এবং এদেশের মানুষের কাছে মাফ চাওয়া উচিৎ ওদের অন্যায় এবং জাতির সাথে প্রতারণা করার জন্য। তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি আজকের প্রজন্মের সময়ের দাবি। কাজেই আমি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের পক্ষ থেকে এই দাবি ব্যক্ত করছি। তিনি আরও বলেন, শেখ জামাল ক্রিকেট, হকি, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলাধূলায় পারদর্শী ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি ভাল গিটারও বাজাতে পারতেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের গৃহবন্ধী রাখা হয়। শেখ জামাল ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে ধানমণ্ডির তারকাটা বেড়া দেওয়া পাকিস্তানি বাহিনীর বন্দি শিবির থেকে পালিয়ে ভারতে যান। ভারতের উত্তর প্রদেশের কালশীতে গিয়ে তার ফুফাতো ভাই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি’র নেতৃত্বাধীন মুজিব বাহিনীতে ৮০ জন নির্বাচিত তরুণের সঙ্গে শেখ জামাল ২১ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে শেখ ফজলুল হক মণি’র সাথেই মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন। রণাঙ্গণে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল হয়ে উঠেছিলেন সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর লক্ষ্য ছিল মাতৃভূমির স্বাধীনতা। তাছাড়া শেখ জামালের পালিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণের খবরটা কৌশলগত কারণেই একেবারে চেপে গিয়েছিল স্বাধীন বাংলার প্রবাসী মুজিবনগর সরকারও, কারণ এই ইস্যুতে মুজিবনগর সরকার এবং ভারত সরকারের তীব্র সমষ্টিগত চাপে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে প্রচণ্ড বেকায়দায় পড়েছিল পাকিস্তান সরকার। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন শেখ জামালকে সেনা অফিসার হিসেবে গড়ে তুলতে। শহীদ শেখ জামাল পিতার স্বপ্ন অনুযায়ী, একজন দেশপ্রেমিক চৌকস-মেধাবী সেনা অফিসার হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লং কোর্স-এর প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার। ১৯৭৪ সালে শেখ জামাল মার্শাল টিটোর আমন্ত্রণে যুগোস্লাভিয়ার মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ব্রিটেনের বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সামরিক একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করেন। ছেলেকে স্যান্ডহার্স্ট পড়ানোর খরচটা দেওয়ার মত আর্থিক সামর্থ্য ছিলনা রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবের। সেই খরচটাও ভাই শেখ আবু নাসের এর কাছ থেকে নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। এমনি সৎ এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ১ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে স্যান্ডহার্স্টে রেগুলার ক্যারিয়ার কোর্স শুরু হওয়ার কথা ছিল শেখ জামালের। ব্রিটিশ পত্রপত্রিকায় কমিশনপ্রাপ্ত বাংলাদেশের শেখ জামালের ছবি ছাপা হলো। ছবিটি বিশ্বকে এক প্রতীকী বার্তা দিয়েছিল যে, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ তার সামরিক বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে চায়। অথচ শেখ জামাল এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও অংশ নিলেন না। মায়ের জন্য গভীর টান অনুভব করে তিনি যোগদান করলেন না; দেশেই থেকে গেলেন। মাত্র দেড় মাস পর এই সিদ্ধান্তই তাঁর জীবনের সবচেয়ে নির্মম ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রমাণিত হয়। মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই ভাইয়ের সাথে তিনি চিরতরে বিদায় নেন এই নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি বলেন, শেখ জামালের জন্মদিনে তাকে স্মরণ করায় যুবলীগকে ধন্যবাদ জানাই। একই সাথে শুধু শেখ জামালের জন্মদিন পালন করলে হবে না, শেখ জামাল সম্পর্কে জানতে হবে, মানুষকে জানাতে হবে। শেখ জামাল লেখাপড়া করতে পছন্দ করতেন, যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বই পড়তে আগ্রহ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন তিনি শেখ জামালের দক্ষতা দেখে খুশি হয়েছিলেন এবং সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য তার দেশে আমন্ত্রণ জানান। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-বাংলাদেশ গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই বাংলাদেশ যুবলীগে সেই মানুষ আছে, শেখ জামালের মতো সাহসী নেতৃত্ব আছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও লেখক আবেদ খান বলেন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে আমাকে যখন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তখন থেকে আমরা দেখেছি কি অবস্থায় বাংলাদেশের রাজনীতি চলছে। খালেদা জিয়া, এরশাদ, তারেক রহমানরা এরা চলে যেতে পারে কিন্তু তাদের প্রেতাত্মারা রয়ে যাবে। বিভিন্নভাবে নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে গ্রাস করার চেষ্টা করবে। তিনি আরও বলেন, আজকের বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারণ করেই আর সেটাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্র হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে এতো ষড়যন্ত্র কোথাও হয়নি। বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হচ্ছে এই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যেমন শক্তি আছে তেমনি আমাদের কিছু কিছু মিডিয়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে বিভাজন করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিকে ইন্ধন দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শেখ জামাল ছিলেন এমনি ব্যক্তি তিনি বঙ্গমাতার আদেশে গাড়ির পরিবর্তে রিক্শায় অফিসে যেতেন।

সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামালের জন্মদিনে আমাদের আনন্দ করার কথা কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্টে ঘাতকের বুলেটের আঘাত আমাদের সেই আনন্দ চিরতরে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আজও সেই খুনিরা ওঁত পেতেআছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে চলেছে উন্নয়নের মহাসড়কে সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামাত তাদের বিদেশী প্রভুদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অগ্নি সন্ত্রাস, গাড়ি ভাংচুরসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত। আজকের দিনে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বলতে চাই বিএনপি-জামাত যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, আমরা এদেশের সাধারণ মানুষের পাশে থাকবো, তাদেরকে সাথে নিয়েই বিএনপি-জামাতের সকল ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবো।

এসময় বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা।

এসবি/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি