আজ চৈত্রসংক্রান্তি
প্রকাশিত : ০৮:২৭, ১৩ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ০৮:৩০, ১৩ এপ্রিল ২০২০
‘অতীত নিশি গেছে চলে/চিরবিদায় বার্তা বলে/কোন আঁধারের গভীর তলে/রেখে স্মৃতিলেখা/এসো এসো ওগো নবীন/চলে গেছে জীর্ণ মলিন/আজকে তুমি মৃত্যুবিহীন/মুক্ত সীমারেখা।’
আজ সোমবার, ৩০ চৈত্র ১৪২৬। বাংলা বছরের শেষ দিন। চৈত্র মাসের এই দিনটিকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। বাংলার বিশেষ লোকজ উৎসব এই চৈত্রসংক্রান্তি। আবহমান বাংলার চিরায়িত নানা ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসে এ দিনটি। বছরের শেষ দিন হিসেবে পুরনোকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য চৈত্রসংক্রান্তিকে ঘিরে থাকে নানা অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজন।
আবহমান কালের জমিদারির খাজনা আদায়সহ চৈত্রসংক্রান্তিকে ঘিরেই ঐতিহ্যবাহী হালখাতা উৎসব। প্রতিবছরই আবহমানকালের জমিদারির খাজনা আদায়সহ চৈত্রসংক্রান্তিকে ঘিরেই ঐতিহ্যবাহী হালখাতা উৎসব হয়ে থাকে। প্রতিবছর এই হালখাতা উৎসব ঘিরে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করেন। দোকানপাট ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করেন দোকানিরা। এদিন পুরান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করা হয় ‘চৈত্রসংক্রান্তি’র শোভাযাত্রা। এক অন্যরকম আনন্দ ও উৎসবের ভেতর দিয়ে এই দিনটি পার করেন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে থাকেন নানা প্রস্তুতি।
কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে চৈত্রসংক্রান্তির সব উৎসব উবে গেছে। ইতোমধ্যে সরকার পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণে কোনো অনুষ্ঠান না করতে নিষেধ করেছেন। করোনার কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সব বন্ধ। উৎসব দূরে থাক মানুষের জীবন বাঁচানোয় যেন এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মানুষকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতেই নিষেধ করা হয়েছে। ফলে চৈত্রসংক্রান্তির এই উৎসবের দিনটি গত কয়েক দিনের মতো একরকম উৎকণ্ঠায় কাটবে।
চৈত্রসংক্রান্তির এই দিনটি প্রতিবছর রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে। মেলা, ঘুড়ি উৎসব, রকমারি সব ঘুড়ির প্রদর্শনী, গ্রামবাংলার জনপ্রিয় লাঠিখেলা, পুঁথিপাঠ, পুতুলনাট্য, পালাগান, গম্ভীরা ও রায়বেশের মতো লোকসংস্কৃতির নানা আয়োজন থাকে।
চৈত্রসংক্রান্তির সবচেয়ে বড় আয়োজন চড়ক পূজা। চৈত্র মাসজুড়ে সন্ন্যাসীরা উপবাস, ভিক্ষান্নভোজন প্রভৃতি নিয়ম পালন করেন। সংক্রান্তির দিন তারা শূলফোঁড়া, বাণফোঁড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়কগাছে ঝোলে। আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটে। শারীরিক কসরত দেখতে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এসে জড়ো হয় চড়কমেলা-গাজনের মেলায়। মেলার সঙ্গে বিভিন্ন হিন্দু পৌরাণিক ও লৌকিক দেবতার নাম সম্পৃক্ত। যেমন- শিবের গাজন, ধর্মের গাজন, নীলের গাজন ইত্যাদি।
তবে চৈত্রসংক্রান্তিতে এবার কোনো কিছুই হচ্ছে না। করোনায় সব ম্লান হয়ে গেছে।
এসএ/