ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ জুন ২০২৫

আজ বাবা দিবস

প্রকাশিত : ১০:৫৩, ১৬ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১০:৫৫, ১৬ জুন ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

পরম আশ্রয়ের চরম ছায়া। তিনি আগলে রাখেন আমাদের। সকল কষ্টকে নিজের সহ্যের সীমার মধ্যে নিয়ে ভালোবাসা ও স্নেহের কোনো কমতিই উপলব্ধি করতে দেন না আমাদের।

পৃথিবীর সকল লয় থেকে একমাত্র রক্ষা কবচ। যে রক্ষা কবচ আছে বলেই আজ মানব সন্তান এত লালিত পালিত হয়ে ধরণী জুড়ে প্রাণচঞ্চল হয়ে পদচিহ্ন ফেলছে। যার দরাজ কন্ঠের ডাকে দরজায় পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি দেয় সকল মানবসন্তান। যিনি কোনো প্রতিদানের জন্য ভালোবাসেন না। ভালোবাসেন আত্মার টানে, ভালোবাসার স্নেহের আবেশে, ভালোবাসেন কর্তব্যের চেয়ে অধিকারের পরশে, ভালোবাসেন অভিভাকত্বের সুরে। তিনি হচ্ছেন একমাত্র বাবা।

জুনের তৃতীয় রোববার আজ বাবা দিবস। কিন্তু বাবার জন্য কি আদতে কোনো দিবসের দরকার আছে। এ নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকেন, বাবা দিবসটা ঠিক আমাদের জন্য নয়। এটি মূলত পাশ্চাত্যের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে বাবা দিবস পালিত হচ্ছে।

বাবা। মধুর এক শব্দে পৃথিবী জোড়া নির্ভরতা যুক্ত। প্রতিটি মানবসন্তান এ নির্ভরতার ছায়ায় জীবনভর থাকতে চান। বাবার হাতের কড়ে আঙ্গুলটা ধরেই না পথ চলা শুরু। বাবার হাত ধরেই গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে গ্রাম্য মেলায় প্রথম যাওয়া হয় সন্তানের। বাবার হাত ধরেই শত ভীড়ে রঙ্গিন পৃথিবী চিন্তামুক্তভাবে আবিষ্কার করা হয়, হারিয়ে যাওয়ার নেই কোনো ভয়; বাবার আঙ্গুল যে আছে হাতের মুঠোয়। সবে মাত্র হাটতে শেখা সন্তান বাড়ির বাইরে প্রথম পা ফেলে বাবা হাত ধরে। বাইরে গিয়ে ছোট্ট অচেনা চোখে ঠেকেছে হাজার হাজার অচেনা-অজানা কত কি…। বাবা ওটা কি, ওটা কি বাবা? ওই যে ওইটা, দেখ দেখ বাবা, এই তো গেল! পৃথিবীর সব কিছুই বাবা আঙ্গুল উঁচু করে চিনিয়ে দেন। শুরু হয় সন্তানের অবিরল পথচলা।

সন্তানের কোনো আবদার কি অপূর্ণ রাখেন একজন বাবা? না রাখেননি। সামর্থ্যে না কুলালেও হাসি মুখে বাবা শত আবদার পূরণের আশ্বাস দেন। যে আশ্বাসে সন্তান আনন্দে আন্দোলিত হয়ে চিত্ত নাড়িয়ে লাফিয়ে উল্লাস করে অন্য দিকে অসামর্থ্য বাবা দুঃশ্চিন্তায় থাকেন প্রিয় সন্তানের আবদারের বস্তুটি সন্তানের হাতে তুলে দিবেন কিভাবে।

শাসন ও ভালোবাসার সম্মিলনে বাবাই সন্তানকে আগলে রাখেন পরম যত্নে। বাবা কেমন করে সন্তানকে আগলে রাখেন তা বাবা না হলে বোঝাই যায় না যে সন্তানের জন্য বাবা কি করেন। যে ছেলে উড়নচন্ডি হয়ে জীবন পার করে সেও বাবা হয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে দায়িত্ববান পুরুষ হোন।

পৃথিবীর মধুর দুটি শব্দ ‘মা’ ও ‘বাবা’। কোনো তারতম্য নেই। বাবা ও মায়ের জন্য সন্তানের অনেক কর্তব্য পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কুরআনে সুরা আহকাফের ১৪ নম্বর আয়াতে, বনী ইসরাইলের ২৪ নম্বর আয়াতে, সুরা নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে সুরা লোকমানের ১৪ আয়াতে পিতা-মাতার খেদমত করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ পাক। সন্তানের জন্য পিতার দোয়া আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে কোনো আড়াল থাকে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পিতা-মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো, নতুবা তা রক্ষা করতে পারো। (তিরমিযী, তুহফাতুল আহওয়াযী, ৬/২৫)।

রাসূল (সা) বলেছেন, ‘তার নাক ধূলায় মলিন হোক (৩ বার), সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই হতভাগ্য ব্যক্তিটি কে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, সে হলো ঐ ব্যক্তি, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেল অথচ তাদের সেবা করে জান্নাত হাসিল করতে পারলো না’ (মুসলিম-৪/১৯৭৮, হা-২৫৫১)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে নিহিত।’ (তিরমিযি-১৮৯৯)।

বাবার ভালোবাসার ফলেই সন্তানের কাছে পৃথিবীর কোনো পঙ্কিলতা আসতে পারে না। আগলে রাখেন চিরদিন। যুদ্ধে লড়াইরত সৈনিককে তলোয়ারের আঘাত থেকে ঢাল যেমন বাঁচিয়ে রাখে তেমনি বাবা সব অপঘাত থেকে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখেন। ঢাল না থাকলে কি হতো তা সৈনিক কিছুটা বুঝতে পারেন হয়ত কিন্তু ঢাল না থাকার অভাব তাকে তদরুপ তাড়না দেয় না যদ্রুপ ঢালহীন সৈনিকের হয়। ঢালহীন সৈনিক বুঝতে পারে ঢাল তার জন্য কতটুকু জরুরি। তেমনি বাবা হারানো সন্তান বুঝতে পারে বাবা তার জীবনে কি ছিলেন? বাবার জন্যই সে কতটুকু সাহসী ও প্রাণচঞ্চল ছিল।

জানা যায়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে এ দিবসটি প্রথম পালিত হয়। পরে জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের প্রায় ৭৪টি দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। তৃতীয় রোববার হিসাবে চলতি বছর ১৬ জুন পালিত হচ্ছে বাবা দিবস। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন।

এমএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি