আজ রুশ বিপ্লবের ১০২তম বার্ষিকী
প্রকাশিত : ০৮:৫২, ৭ নভেম্বর ২০১৯
মহান রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০২তম বার্ষিকী আজ। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রাশিয়ায় বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। এর মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতার ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। এটি ‘অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব’ হিসেবেও খ্যাত।
১৯০৫ সালের রাশিয়ার বিপ্লবকে ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রধান নিয়ামক বলা হয়। ব্লাডি সানডের ঘটনাগুলো ছিল প্রতিবাদের শুরু। একটি শ্রমিক কাউন্সিল সেইন্ট পিটার্সবার্গ সোভিয়েত এসব বিশৃংখলার জন্ম দিয়েছিল। সেই সঙ্গে কমিউনিস্ট ধারার রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ রাশিয়ার জনগনকে জার দ্বিতীয় নিকোলাসের প্রতি আস্থাশীলহীন করেছিল। রাজকীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টদের প্রতিশোধপরায়ন হয়ে পরার পিছনে এটি একটি অন্যতম কারণ। ১৯১৪ সালে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় উসমানিয় সম্রাজ্যের আবির্ভাবের ফলে তুর্কী সম্রাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ বাধা প্রাপ্ত হয়। এর ফলে সামান্য অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়, ফলশ্রুতিতে রাশিয়া ১৯১৭ সালে যুদ্ধে তাদের অগ্রবর্তী সেনাদলকে সমরাস্ত্র ও রসদ প্রেরণে ব্যর্থ হয়। এটি একটি প্রশাসনিক সমস্যা ছিল মাত্র যেখানে জার্মানী তার দুইটি যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য প্রচুর সমরাস্ত্র ও রসদ উৎপাদন করতে থাকে। যুদ্ধে, শহরাঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ ব্যবহত হয়। খাদ্যাভাব রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। তবে এর জন্য ফলনকে খুব বেশি দায়ী করা যায় না কারণ যুদ্ধে কৃষিজমির খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পরোক্ষ কারণ হিসাবে বলা যায় যে, সরকার যুদ্ধের ব্যয় বহন করার জন্য প্রচুর কাগুজে নোট (রুবল) বাজারে ছাড়ে। এর ফলে বাজারে ১৯১৪ সালের তুলনায় ১৯১৭ সালে মুদ্রাস্ফীতি চার গুন বৃদ্ধি পায়। কৃষকদেরকে অতি উচ্চমূল্যে কৃষি সামগ্রী ক্রয় করতে হত। কিন্তু মধ্যস্বত্তভোগীদের দৌরত্ম্যের কারণে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য তারা পেত না। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য মজুদ করতে শুরু করল এবং শুধুমাত্র নিজের প্রয়োজন মেটানর জন্য উৎপাদন করতে শুরু করল। এভাবে শহরাঞ্চলে প্রতিনিয়ত খাদ্যের সংকট বিরাজ করতে থাকল। এরফলে কলকারখানায় মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে আন্দোলন দানা বাঁধল। জানুয়ারিতে জর্মানদের মদদে ব্যাপক ধর্মঘট শুরু হয়। এসব কারণে সরকারকে ব্যাপক সমালোচনা সম্মুখিন হতে হয়। জনগণকে সান্তনা দিতে সেইন্ট পিটার্সবার্গের নাম পাল্টে পেট্রোগ্রাদ রাখা হয়। নতুন নামের উচ্চারণটি অনেক বেশি রুশ ভাষার কাছাকাছি ছিল। ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ সালে পেট্রোগ্রাদের রাস্তায় জনতা মিছিল করে যুদ্ধের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি জার নিকোলাসের অযোগ্যতার ধারনাকে আরো বেশী উষ্কে দেয়।
রুশ বিপ্লবের বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন দল ও সংগঠন কর্মসূচি নিয়েছে। সিপিবি আজ বিকেল ৫টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আলোচনা সভা করবে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান পৃথক বিবৃতিতে রুশ বিপ্লবের ১০২তম বার্ষিকী উপলক্ষে শ্রমজীবী মানুষ ও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এসএ/