আন্তর্জাতিক বন দিবস ও জীব বৈচিত্র
প্রকাশিত : ১২:০৫, ২২ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৪:২১, ২২ মার্চ ২০২০
 
				
					পরিবেশ সংরক্ষণে বনভূমির গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০১৩ সাল থেকে জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক বন দিবস পালিত হচ্ছে। তবে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) এর আক্রমণের কারণে এবার কোথাও এই দিবস সেভাবে পালিত হয়নি। এই বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বনভূমি এবং জীব বৈচিত্র্য’।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রতিরোধসহ পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের জন্য বনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশ্বব্যাংক (আইডিএ) এর তথ্যানুযায়ী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বনভূমি ও সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষভাবে বনভূমির ওপর জীবিকা অর্জন করে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৫ হাজার ধরনের পণ্য সরাসরি বনজ সম্পদ থেকে উৎপাদিত হয় বৈশ্যিক অর্থনীতিতে, যার পরিমাণ প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বিশ্বের ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ বন এবং এর ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১৩ লাখ হেক্টর বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে। ফলে বায়ুতে কার্বনের পরিমাণ ১০-১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য খুবই বিপদজনক। যদিও এখনও বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ভূমি বনাঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
জীব বৈচিত্রের সাথে বনভূমির রয়েছে গভীর সম্পর্ক। স্থলজ জীব বৈচিত্রের ৮০ শতাংশের উৎস হলো বন। বনের প্রায় ৬০ হাজার প্রজাতির বৃক্ষের মাঝে আশ্চর্যজনকভাবে এখনো চিহ্নিত হয়নি এমনও রয়েছে।
বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ২০১৬ সালের বন জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট গেজেটভুক্ত বনভূমির পরিমাণ দেশের আয়তনের প্রায় ১২ শতাংশ। তবে এর প্রকৃত পরিমাণ নিশ্চিতভাবেই আরো কম হবে। এই জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৩৫ জেলায় সরকারি বনভূমি রয়েছে। সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৭৮ লাখ একর বনাঞ্চল রয়েছে পার্বত্য রাঙামাটি জেলায়। আয়তনে ছোট হলেও এদেশের বনভূমিগুলোর জীব বৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
যদিও ব্যাপক শিল্পায়ন, কৃষিসহ নানা কারণে বনাঞ্চলের পরিমাণ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। সেইসাথে হ্রাস পেয়েছে জীব বৈচিত্র্য।
এককভাবে সুন্দরবন দেশের সবচেয়ে বড় একক বনভূমি। এছাড়া চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বৃহত্তর সিলেট, গাজীপুর ও টাংগাইলের বনভূমি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বৃহত্তর ময়মনসিংহের উত্তরাঞ্চল, কুমিল্লার লালমাই পাহাড়, দিনাজপুর অঞ্চলে বনভূমি রয়েছে।
বর্তমানে কোভিড-১৯ জনিত কারণে পৃথিবীর মানুষ চরম আতংকের সাথে দিন কাটাচ্ছেন। এই ভাইরাস বনভূমির জীব বৈচিত্রের ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তা এ মুহূর্তে বলা কঠিন।
মানুষ ও প্রকৃতি উভয়েই একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। প্রকৃতির ওপর অত্যাচার করলে তার ফল কখনো ভাল হয় না।
বনভূমি ধ্বংস থেকে রক্ষা পাক আর কোভিড-১৯ এর কালো থাবা মুক্ত হয়ে একটি সুন্দর পৃথিবীই আন্তর্জাতিক বন দিবসে আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: ঢাবি মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী (বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত)।
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
 
				        
				    






























































