ঢাকা, শুক্রবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গুপ্তহত্যা, নির্বিকার কেন পুলিশ?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৮, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১০:৪১, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত অপরিচিত ফোনকলে হত্যাসহ নানা হুমকির শিকার হচ্ছেন, যা তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করছে। এই গুপ্তহত্যা, হামলা ও হুমকির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার এবং হুমকি প্রদানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বরাবর একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। এতে তারা উল্লেখ করেছেন, কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের দাবিতে জুলাই বিপ্লবে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ছাত্র-জনতার ওপর ফ্যাসিবাদের দোসররা বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে এবং ফোনকলে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর দৃশ্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করছে এবং এটি ফ্যাসিবাদের দোসরদের সাহস জোগাচ্ছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও সক্রিয় ভূমিকা চেয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মাহিন সরকার বলেন, হত্যাকাণ্ডগুলো গোপনে সংঘটিত হয়েছে এবং অনেক শিক্ষার্থীকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে— এসব ঘটনার পেছনে পারিবারিক বা রাজনৈতিক কারণে ঝামেলা থাকতে পারে। তবে ডিএমপি কমিশনার আশ্বাস দিয়েছেন যে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।

সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি শাবাব হোসেন মেহের জানান, ১৭ ডিসেম্বর রাতে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তি তাকে জানায়, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবে না এবং তার পরিবারকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া হবে না। শাবাব ওই নম্বরটি থানায় জানালে পুলিশ ট্র্যাকিং করে গ্রেফতার করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের পরিচয়ে সরাসরি হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যা জনগণের মধ্যে ভীতি তৈরি করবে।

যারা বিপ্লবীদের কাঁধে ভর করে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের লাশ এখন রাস্তায় পড়ে থাকে। অথচ ক্ষমতায় বসে থাকা অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে, যা দেশের জন্য অশনি সংকেত।

এদিকে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থীর গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিল থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানানো হয়। মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে এই মিছিল শুরু হয়, যা ‘জুলাই অভ্যুত্থান ও ভারতীয় অগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনের তিন সহযোদ্ধার গুপ্তহত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে’ অনুষ্ঠিত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, যারা বিপ্লবীদের কাঁধে ভর করে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের লাশ এখন রাস্তায় পড়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতায় বসে থাকা অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে, যা দেশের জন্য অশনি সংকেত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মঞ্জু জানান, ভারতীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম চলবে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার দাবি জানান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এক বার্তায় জানান, দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গাজীপুরের তাজবির হত্যার পর শিক্ষার্থীরা যে চার দফা দাবি উত্থাপন করেছেন, তা বাস্তবায়ন করলে প্রশাসনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হবে। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশে টহল জোরদার করতে হবে যাতে আর কোনো মা-বাবার সন্তান এভাবে প্রাণ না হারায়।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, এই ঘটনাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং অনেক গ্রেপ্তারও হয়েছে।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি