আন্দোলন-সংগ্রামের প্রতীক হয়ে ওঠে শহীদ মিনার (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১২:২১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
৫২’র ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনার উন্মেষ ঘটে। ভাষা শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় নির্মিত শহীদ মিনার হয়ে উঠেছিল বাঙালির জাতীয় সত্তার প্রতীক। ধারাবাহিকভাবে ৬ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের পেছনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে শক্তি যুগিয়েছে ভাষা আন্দোলন।
শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে ও দাবি আদায়ের সংগ্রামে জাতিকে উজ্জিবিত করেছে ভাষা আন্দোলন। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাঙালি অর্জন করে মাতৃভাষার অধিকার।
ভাষা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের স্মৃতি রক্ষায় ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা নির্মাণ করে প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ। ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে দেয়।
এরপর নানা চড়াই-উৎরাই শেষে ১৯৫৬ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন। পববর্তিতে অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও প্রগতির প্রতীক হয়ে ওঠে শহীদ মিনার। তবে এর আগেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিশ্বে পরিচিতি পায় লেখক-গবেষক কবি-সাহিত্যিকদের হাত ধরে।
লেখক ও গবেষক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “বাংলা প্রাদেশিক ভাষা ছিল কিন্তু এই প্রাদেশিক ভাষাকে আমাদের অনেক লেখক-সাহিত্যিকের অবদানে এটি প্রাদেশিকতার সীমানা ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে পরিব্যপ্ত হয়েছে।”
লেখক ও গবেষক অদ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, “ইংরেজির চাপে বাংলা ভাষা অবহেলিত হয়েছে। তারমধ্যেও রামঘর, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম চন্দ্র, মধুসূধন পরে রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, কাজী নজরুল ইসলাম, ওয়াজেদ আলী- এদের গতিটা যদি লক্ষ্য করি আমরা দেখি বাংলা ভাষা ব্রিটিশ শাসনকালেই অসাধারণ উন্নতি করেছে।”
রাজনীতিতে বাংলা ভাষা আন্দোলনের স্পষ্ট প্রভাব দেখা যায়। ১৯৫২ সালে বাংলাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই বছরের ২ থেকে ১২ অক্টোবরে চীনের পিকিংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি সম্মেলনে বাংলায় বক্তৃতা করেন । স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সম্মেলনেও বাংলাকে তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু।
এদিকে ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পরও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন এখনো অধরা রয়ে গেছে।
অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “যে দাবি নিয়ে যে আন্দোলনটি শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালে সেই দাবি এখনও পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হয়নি বা পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। অর্থাৎ বাংলাদেশের সংবিধানের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি আছে বটে কিন্তু আজকে বাংলাদেশে বাংলাভাষার অবস্থান খুব ভালো নয়।
অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, “একটা গৌরবজনক কাজ হবে যদি বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের মতো একটা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। সেটা অসাধারণ কল্যাণকর হবে।”
তবে আশার কথা উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার রায় লেখার নজির স্থাপন হয়েছে। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার বাড়াতে পরিভাষা প্রণয়ণের কাজও এগিয়ে চলেছে।
এএইচ