ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

ডিসিসিআই সেমিনারে বক্তারা

আবাসন খাতের উন্নয়নে দরকার বড় শহরগুলোর বিকেন্দ্রীকরণ

প্রকাশিত : ১৮:৪৬, ৫ মে ২০১৯

বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও শহরগুলো গ্রামের চেয়ে অর্থনীতিতে বেশি ভূমিকা রাখছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপির ৬৫ শতাংশই আসছে নগর থেকে। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ঢাকা বিশ্বের ২য় বসবাসের অযোগ্য নগরে পরিণত হয়েছে। তাই ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর বিকেন্দ্রীকরণ হলে আবাসন খাতের যথার্থ উন্নয়ন সম্ভব হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “নগরায়ন এবং বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে আবাসন খাতের প্রতিবন্ধকতা” শীর্ষক সেমিনার আজ রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী সেমিনারে প্রধান অতিথি এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা চেম্বার সভাপতি ওসামা তাসীর সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, দুর্বল পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি কারণে ইতোমধ্যে গৃহীত বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগসমূহ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। ডিসিসিআই সভাপতি জানান, আবাসন খাতের বিকাশে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো জমি ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি। তিনি বলেন, সরকার গৃহীত ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম ঢাকা শহরের বিকেন্দ্রীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি আরো মনে করেন, আবাসন খাতের যথাযথ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সরকার ও বেসরকারি খাত একযোগে কাজ করা প্রয়োজন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসা-বান্ধব এবং এ খাতের ব্যবসায় সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে। তিনি জানান, চলতি বছরের জুন/জুলাই মাসের মধ্যেই সারাদেশে ভূমি বিষয়ক ই-মিউটেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হবে, যার মাধ্যমে অনলাইনে পেমেন্ট সহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা যাবে এবং জনগণের ভোগান্তি কমবে। ভূমি মন্ত্রী ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমানোর জন্য নরসিংদী, কুমিল্লা সহ আশেপাশের অন্যান্য এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। সাধারণ জনগণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে বাসস্থানের সেবা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করে ফ্ল্যাটের মূল্য নির্ধারণে তিনি এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান এবং পিপিপি প্রকল্পের আওতায় “কনসোর্টিয়াম” স্থাপনের জন্য আবাসন খাতের প্রতিনিধিদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহর অপরিকল্পিতভাবে প্রতিনিয়তভাবে বাড়ছে। এ শহরকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য করতে হলে সকলকে পরিকল্পনামাফিক সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি জানান, ঢাকা শহরের প্রতি বর্গফুট এলাকায় প্রায় ৪৯,০০০ মানুষ বসবাস করে। অধিক সংখ্যক এ জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের অবশ্যই স্যাটেলাইট সিটি স্থাপন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি সরকার আরো ১৮টি ইউনিয়নকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নিয়ে এসেছে, যার মাধ্যমে এসব এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। উল্লেখ্য যে, এ এলাকাসমূহের প্রতি বর্গফুটে প্রায় ২৩,০০০ মানুষ বসবাস করে। তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের জুন/জুলাই মাসে রাজধানীর ২৭টি মাঠকে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্বলিত খেলাধূলার উপযোগী করা হবে। এই মাঠগুলোয় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। মেয়র আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অনলাইন সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য শীঘ্রই “নগর অ্যাপ” নামে একটি অ্যাপভিত্তিক সেবা চালু করতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে কর প্রদান সহ সহজেই অন্যান্য সেবা নিশ্চিত হবে।

রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, রিহ্যাব সদস্যবৃন্দ নিজেদের অর্থায়ন ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের জনগণের বাসস্থানের সুবিধা প্রদানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে প্রায় ২ লক্ষ অ্যাপার্টমেন্ট ও ৭০ হাজার প্লট গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তিনি ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমানোর জন্য নিকটবর্তী এলাকাসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের উপর জোরারোপ করেন। তিনি অ্যাপার্টমেন্ট ও প্লট ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর প্রস্তাব করেন।

স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এ শহরের প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪৬,৯৯৭ জন লোক বসবাস করে। তিনি জানান, আবাসন খাত আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, জিডিপিতে আবাসন খাতের অবদান ছিল প্রায় ৭.০৮%। তিনি আরো বলেন, জমির অপ্রতুলতা, নকশা অনুমোদনের জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার, অপর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা, নীতিমালার এবং দক্ষ জনবলের অভাবের কারণে এ খাতের সম্ভাবনার বিকাশ হচ্ছে না। তিনি বড় শহরগুলোর ওপর চাপ কমানোর জন্য অতিদ্রুত উপশহরসমূহের উন্নয়নের বিষয়ে জোরারোপ করেন।

নির্ধারিত আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক ও এ্যাসেট ডেভেলপমেন্টস অ্যান্ড হোল্ডিংস লিমিটেডের চেয়ারম্যান সেলিম আক্তার খান, ডিসিসিআই পরিচালক ইঞ্জিঃ মোঃ আল আমিন এবং ভিসতারা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি মোস্তফা খালিদ পলাশ অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় তাঁরা এ খাতের উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারী খাতের সমন্বয় বৃদ্ধি, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার, প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্রয়-বিক্রয়ে আরোপিত শুল্ক হ্রাসকরণ এবং সর্বোপরি এ খাতকে একটি “থ্রাস্ট সেক্টর” হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানান।

মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই আহ্বায়ক আরমান হক, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসানুল কবির, প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুস সালাম, এম এস সেকিল চৌধুরী এবং প্রাক্তন পরিচালক এ কে ডি খায়ের মোহাম্মদ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি