ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

এবার রূপান্তরকামী বিয়ে

‘আমার শরীরটা পুরুষের ছিল, কিন্তু মনটা ছিল নারীর’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২৫, ৩ নভেম্বর ২০১৮

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৪ সালে তৃতীয় লিঙ্গকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এরপর থেকে সমাজের মূল স্রোতে উঠে এসেছে তারা। এমন কি বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাদের সরব উপস্থিতি। সম্প্রতি দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের অনীক দত্ত ওরফে অ্যানি নামের এক রূপান্তরকামীর বিয়ে হয়েছে। যা নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা।

মডেলিংয়ের সূত্রে আলাপ হওয়া একটি সম্পর্কের পরিণতি এবার ছাদনাতলায়। এমনটাই জানা গেল অ্যানির সঙ্গে জলপাইগুড়ির সাগ্নিক চক্রবর্তীর বিয়ে ঘিরে। দুই বছর আগের সম্পর্ক এবার পরিণতি পেলো বিয়েতে।

অ্যানি একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি তিনি একজন সুদক্ষ মেক-আপ আর্টিস্ট এবং নৃত্যশিল্পী। তিনি স্বনির্ভর। রূপ পরিবর্তনের পথে নিজের অস্ত্রোপচারের খরচ নিজেই বহন করেছেন। অ্যানি মনে করেন না বিয়েটাই জীবনের সব।

৩১ অক্টোবর বউভাতের আসরে পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাগ্নিক চক্রবর্তী পরিষ্কার বলেন, ‘সবকিছু আমি জানতাম। ও যে রূপান্তরকামী এটা জেনেও ওর সঙ্গে প্রেম করি।’

অ্যানি জানান, কারেও জন্যে তিনি পুরুষ থেকে নারী হননি।

নববধূর সাজে তিনি আরও বলেন, ‘আমার শরীরটা পুরুষের ছিল, কিন্তু মনটা ছিল নারীর। আত্মাকে কেউ বদলাতে পারে না। শরীরটাকে বদলানো যায়। শরীর ও আত্মাকে মিলিত করার জন্য অনীক থেকে অ্যানি হয়েছি। সাগ্নিকের সঙ্গে সম্পর্কের আগেই আমি লিঙ্গান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সম্পর্কের জন্য নয়। নিজেকে সম্পূর্ণ করার জন্যই আমার এই সিদ্ধান্ত।’

তিনি বলেন, ‘অতীতে ভালো-খারাপ দু রকমের অভিজ্ঞতাই আছে। আমি ছেলেদের স্কুলে পড়েছি। ফলে টিটকিরি শুনতে হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকেরা ভীষণ সাহায্য করেছেন। অবশ্যই কলেজের সিনিয়র এবং বন্ধুদের কথাও বলতে হয়।’

তিনি স্পষ্টই বলেন, ‘যদি কলকাতায় তৃতীয় লিঙ্গের গ্রহণযোগ্যতা এতটাই হতো, তাহলে রাস্তায় নামলে টিটকিরি শুনতে হয় কেন? নিজেদের প্রচারের জন্য তৃতীয় লিঙ্গের ব্যবহার হচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে, মানুষের মানসিকতায় বদল ঘটছে।’

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সমাজ কতটা বদলেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যানি বলেন, ‘সু্প্রিম কোর্টের রায়ের পর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা পাল্টেছে এটা বোঝা মুশকিল। আমার ধারণা, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো আগের ভাবনাতেই আটকে আছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে আমরা আইনি বৈধতা পেয়েছি। সেটাই বড় কথা। তবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালেই সমাজ পাল্টাবে না।’

অন্যদিকে সাগ্নিক বলেন, ‘এই প্রেমের জন্য আমি শেষ অবধি দেখতে চেয়েছি। তাই দেখেওছি। সকলেরই তাই করা উচিত। তবে আমার বিয়েতে কোনো প্রতিবন্ধকতা আসেনি। বিষয়টা আমাকে অবাক করেছে। বাড়িতে কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে বাবা তাতে মত দিয়েছিলেন। মায়ের কিছু প্রশ্ন ছিল, সেটা বুঝিয়ে বলার পর তিনিও মত দেন।’ 

সূত্র : ডয়চে ভেল

এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি