তারকালাপে ড. ইনামুল হক
আমার সঙ্গী এখন হিং টিং পট
প্রকাশিত : ১৭:১৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
ড. ইনামুল হক। প্রখ্যাত বাংলাদেশী নাট্যকার, অভিনেতা, লেখক, শিক্ষক। তিনি দীর্ঘকাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক এর দায়িত্ব পালন করেছেন। ফেনীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করার প্রয়াসে বিভিন্ন আন্দোলনমুখী নাটকে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে আইয়ুব খানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তৎকালীন অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন নাট্যচর্চাকে হাতিয়ার করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সৃজনীর ব্যানারে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পথনাটক করেন। ইতোমধ্যে তাঁর বেশ কয়েকটি নাটক বিভিন্ন নাট্যপত্রে, বিশেষ ম্যাগাজিনে এবং বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
নির্জন সৈকতে, গৃহবাসী, মুক্তিযুদ্ধ নাটকসমগ্র, স্ট্রিন্ডবার্গ এর দু’টো নাটক, মহাকালের ঘোর সওয়ার, বাংলা আমার বাংলা সহ বেশি কিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে তার। ইনামুল হকের দাম্পত্য সঙ্গী বরেণ্য নাট্যজন লাকী ইনাম। তাদের সংসারে দুই মেয়ে হৃদি হক স্বামী লিটু আনাম আর প্রৈতি হক স্বামী সাজু খাদেম।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনের তারকালাপে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ
ইটিভি অনলাইন : স্যার কেমন আছেন?
ড. ইনামুল হক : শারীরিকভাবে অনেক ভালো নেই। তবে ভালো আছি।
ইটিভি অনলাইন : বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে?
ড. ইনামুল হক : আসলে ব্যস্ত থাকতে চাইলেই ব্যস্ত থাকা যায়। আমাদের এমনই অভ্যাস হয়েছে যে, সেই শিক্ষাকতা থেকে শুরু করে নাটক করা, সব কিছু মিলিয়ে বসে থাকতে আর পারি না। কিছুনা কিছু একটা করতেই হয়। এমনও আছে যে কোন কোন সময় বই এর ধুলাও পরিস্কার করছি। এটাও একটা আনন্দের বিষয় মনে করি। এখন যেমন লেখালেখি করি ঠিক তার পাশাপাশি আমাদের থিয়েটারের দল আছে নাগরিক নাট্যাঙ্গন। এর কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত আছি। তাছাড়া টিভি নাটকেতো অভিনয় করছিই। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে বেশি যাওয়া হচ্ছে। আমি বেশ কিছু সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছি। আসলে প্রত্যেকটি দিনই কোন না কোন কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি।
ইটিভি অনলাইন : বর্তমানে কোন টিভি নাটকরে কাজ করছেন?
ড. ইনামুল হক : একটা নতুন ধারাবাহিকে কাজ শুরু করলাম। ধারাবাহিকটির শিরোনাম ‘মিস্টার টেনশন’। কয়েক দিন হলো শুটিং করেছি। আগামীতে অনইয়ার হবে। এছাড়া খন্ড নাটক করলাম। এখন নাম মনে রাখতে পারি না। কিন্তু একটা না একটা করেই যাচ্ছি।
ইটিভি অনলাইন : থিয়েটারে সময় দিচ্ছেন নিশ্চই। কি কি কাজ করা হচ্ছে এখন?
ড. ইনামুল হক : আমাদের দল বিভিন্ন জায়গাতে শো করছে। যেমন আগামী ৭ তারিখ গণস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শো হবে। এই নাটকটি আমারই চারটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নটককে এক সঙ্গে করে করা হচ্ছে। নাম দেওয়া হয়েছে- ‘একাত্তর এবং একজন নাট্যকার’। কিছুদিন আগে এনাম মেডিকেল কলেজে শো হয়েছে। ওখানে দারুণ সাড়া পেয়েছে। ১৬ তারিখ আবার শো আছে। এটা রসায়ন অলিম্পিয়াড হয়েছে। তাদের একটা অনুষ্ঠান হবে। একটা না একটা চলছেই।
ইটিভি অনলাইন : আপনার পরিবারের সব সদস্যই তো সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। এমনকি আপনার দুই মেয়ে এবং মেয়ের জামাইরাও অভিনয় করেন। এই মিলটা কীভাবে ঘটলো?
ড. ইনামুল হক : আমার যখন বিয়ের কথা হয়, আমি তখন শিক্ষকতার পাঁচ বছর শেষ করেছি। আমার তখনই ইচ্ছে ছিলো এমন কাউকে বিয়ে করবো যে হবে সংস্কৃতিমনা। সৌভাগ্যক্রমে আমি তা পেয়েগেছি। লাকি ইনামকে তো চেনেন। সেও পাঁচ বছর থেকে শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ছিলো। লাকি সেই পাঁচ বছর বয়সেই মঞ্চে উঠেছে। পরবর্তীতে বিয়ের পরেও সে চালিয়ে যায়। মঞ্চে সে এতোই নিবেদিত যে এখনও নিয়মিত কাজ করছে। আর পরিবারের মধ্যে যদি শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা হয় তবে সন্তানরাও সেইভাবে গড়ে ওঠে। অনেকে হয়তো নিজেরা চর্চা করেন কিন্তু সন্তানদের সেদিনে আসতে দেন না। অনুপ্রেরণা দেয় না। আমরা একটু উল্টোভাবে দেখেছি। সেই ছোটবেলা থেকেই দুই মেয়েকে নাচ-গান, কবিতা আবৃত্তি, অভিনয়ের সঙ্গে ওদের যুক্ত করে দিয়েছি। মজার বিষয় হচ্ছে ওরা আবার যাদের বিয়ে করেছে তারাও নিজ নিজ স্থানে এই শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। সেই সুবাদে এখন আবার নাতিরাও একই পথে হাটতে শুরু করেছে।
ইটিভি অনলাইন : নাতিদের নিয়ে কেমন কাটে?
ড. ইনামুল হক : নাতি-নাতনিরা হৈই চৈই করে মাতিয়ে রাখে। তাদের কিছুনা কিছু পারফরমেন্স আমাদের দেখতেই হয়। ওরা তিন জন- হিং টিং পট। হৃদির জমজ বচ্চা। একটা ছেলে একটা মেয়ে। ওদের নাম হিং ও টিং। আর ছোট মেয়েটির ছেলের নাম পট। পট রাখার কারণ হচ্ছে ওর বাবা পটুয়া। সাজু খাদেম আর্ট কলেজ থেকে পাস করা। বেশ ভালো কাজ জানে। ও পোট্রেট অনেক ভালো আঁকে। মোট কথা হিং টিং পট কে নিয়ে অনেক ভালো সময় কাটে। ওরাই এখন আমার সঙ্গী।
ইটিভি অনলাইন : অবসর সময়ে কি করেন?
ড. ইনামুল হক : অবসর তো নেই। সব সময়ই ব্যস্ত থাকি। কিন্তু আমি খেলা দেখতে পছন্দ করি। ক্রিকেট খেলা আমার অনেক পছন্দ। বাংলাদেশ জিতলে তো ভিষণ আনন্দ হয়। মনটাই ভরে যায়। হারলেও ভিষণভাবে মন খারাপ হয়। সেদিন আর ভালো লাগে না। এসব নিয়েই আছি।
ইটিভি অনলাইন : দীর্ঘ এই পথ চলায় কোন অপ্রাপ্তি বা আক্ষেপ আছে?
ড. ইনামুল হক : আমি যদি রাজনৈতিকভাবে কথা বলি দেখা গেছে যে এখনকার সরকার সংস্কৃতি বান্ধব। সংস্কৃতিবানদের খুব মূল্য দিয়ে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে দেখেছি সরকার মাঝে মাঝে এমন কিছু লোকদের খুব বেশি মূল্যায়ন করছে যারা আসলে যোগ্য না। যা অনেক সময় ক্ষুব্ধ করে। একসময় যারা বঙ্গবন্ধু বা নেত্রী সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করেছে তারাই এখন মূল্যায়ন পাচ্ছে।
আর একটা বিষয় হচ্ছে- অভিনয়ের ক্ষেত্রে অনেক প্রযোজকরা পারিশ্রমিক কম দিতে চায়। আমারই লেভেলের কাউকে অনেক বেশি পারিশ্রমিক দিচ্ছে আর আমার ক্ষেত্রে অনেক কম দিচ্ছে। এটা ঠিক নয়। এর জন্য একটা নীতিমালা থাকা জরুরী।
ইটিভি অনলাইন : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধনবাদ।
ড. ইনামুল হক : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আর আমার কথা যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন সেজন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
এসএ/