ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘আমি ছিলাম এশিয়ার সবচেয়ে অসুস্থ কোভিড রোগী’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:২৩, ২৮ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ২৩:২৪, ২৮ জুলাই ২০২০

Ekushey Television Ltd.

স্টিভেন ক্যামেরন যখন নিজের জন্মভূমি স্কটল্যান্ড থেকে ১০হাজার মাইল দুরের দেশ ভিয়েতনামে কোভিড-১৯ এ ঘায়েল হন, ডাক্তাররা এক পর্যায়ে বলে দেন তার বাঁচার আশা বড়জোর ১০ শতাংশ।

ক্যামেরনের শারীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে ঢোকানো হয়। দু মাসেরও বেশি সময় তিনি সেখানে অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন।

বিবিসিকে স্টিভেন ক্যামেরন বলেন, আমার দেহের নানা জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। শরীরের দুটো প্রত্যঙ্গ কাজ করছিলো না। ফুসফুসের ক্ষমতা এক পর্যায়ে ১০ শতাংশে নেমে গিয়েছিল।

তার শরীরের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ভিয়েতনামের সরকার, চিকিৎসক সমাজ থেকে শুরু করে সেদেশের মিডিয়া পুরো সময়টি ধরে তার ওপর নজর রেখেছিল।

তিনি বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল আমি এশিয়ার সবচেয়ে অসুস্থ রোগী হয়ে পড়েছিলাম।“

করোনাভাইরাস প্যানডেমিক চলাকালে স্টিভেন ক্যামেরনের মতো এত জটিল কোভিড রোগী ভিয়েতনামের ডাক্তারদের সামলাতে হয়নি। ৪২ বছর বয়সী এই স্কটিশ নাগরিক ভিয়েতনামে রোগী-৯১ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। তার ডাক্তাররা বলছেন, বেঁচে গেলেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে তাকে বহুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

ক্যামেরন এখন মানুষকে সাবধান করে বলেন, ভুলেও যেন তারা এই ভাইরাসকে হেলাফেলা না করেন।

“এই ভাইরাস যে কতটা ভয়ঙ্কর আমি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ,“ স্কটল্যান্ডে একটি হাসপাতালের বেড থেকে বলেন তিনি। “এই ভাইরাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত মানুষ যেন কখনই এটাকে হেলাফেলা না করে।“

যেদেশ থেকে তিনি বেঁচে ফিরেছেন, সেই ভিয়েতনাম এতটাই সতর্ক ছিল যে এখনও একজনও সেখানে কোভিডে মারা যায়নি। কিন্তু সেখানকার উপকূলীয় শহর দা নাং-এ দুদিন আগে চারজন কোভিড রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ৮০হাজার পর্যটককে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ক্যামেরন যতদিন অচেতন ছিলেন, অধিকাংশ সময় তাকে ‘একমো‘ নামে বিশেষ একটি যন্ত্রের সাহায্যে বাঁচিয়ে রাখা হয়। রোগীর অবস্থা খুব খারাপ হলেই এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রের সাহায্যে রোগীর শরীর থেকে রক্ত বের করে তাতে অক্সিজেন মিশিয়ে আবার তা শরীরে ঢোকানো হয়।

“এক পর্যায়ে আমার বন্ধু ক্রেইগ (ব্রিটিশ) পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানায় আমার বাঁচার সম্ভাবনা ১০ শতাংশ। সে আমার অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়ার চুক্তি বাতিল করে দেয় , এবং আমার শবদেহ নিয়ে কী করবে তার পরিকল্পনা করতে শুরু করে দেয়,“ জুন মাসে হো চি মিন-এর হাসপাতাল থেকে বলেছিলেন স্টিভেন ক্যামেরন।

খুব অল্পের জন্য দ্বিতীয়বারের মত ফুসফুস বদলানোর হাত থেকে রক্ষা পান ক্যামেরন। এক পর্যায়ে তার শরীরের একাধিক যন্ত্র কাজ করছিলোনা।

তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনামের কাছে আমি কৃতজ্ঞ‘

কিন্তু ক্যামেরন মনে করেন তার সৌভাগ্য যে তিনি ভিয়েতনামে অসুস্থ হয়েছিলেন। কারণ সাড়ে নয় কোটি মানুষের দেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪২০ জন কোভিড রোগী সেখানে শনাক্ত হয়েছে। খুব অল্প সংখ্যক মানুষকে ইনটেনসিভ কেয়ারে নিতে হয়েছে, এবং এখনও একজনও মারা যায়নি।

“পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় এমন অসুস্থ হলে আমি মারা যেতাম। তার ৩০ দিন পরেই ভেন্টিলেটরের সুইচ অফ করে দিত।’’

“ভিয়েতনামের মানুষ আমাকে যেভাবে তাদের হৃদয়ে জায়গা দিয়েছে, আমি তার জন্য ভীষণ কৃতজ্ঞ। তাদের ডাক্তাররা কোনোভাবেই চাননি যে আমি তাদের চোখের সামনে মারা যাই। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’’

স্কটল্যান্ডে ফেরার পর তার ফলো-আপ চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন শ্বাসযন্ত্র রোগের বিশেষজ্ঞ ড. মনিশ প্যাটেল। তিনি বলছেন ক্যামেরন যে এত দীর্ঘ সময় ধরে অচেতন থাকার পরও প্রাণে বেঁচেছেন - সেটা ‘খুবই ব্যতিক্রমী ঘটনা।‘

“মানুষ বলে ইনটেনসিভ কেয়ারে ঢোকা মানে ম্যারাথন রেস শুরু। সেই বিচারে স্টিভেন কয়েকবার আলট্রা-ম্যারাথন রেস দিয়ে এসেছেন,“ বিবিসিকে বলেন ড.প্যাটেল।

হো চি মিনের হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে থাকার সময় দু মাসেই তার শরীরের ওজন ৩০ কেজি কমে যায়। স্কটল্যান্ডে তার শরীরের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চললেও এখনও তিনি হাঁটতে পারছেন না। 

“আমি যখন প্রথম চেতনা ফিরে পেলাম আমার ভেতর আতঙ্ক এস ভর করে - আমি কি আর কখনো হাঁটতে পারবো! আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার প্যারালাইসিস হয়েছে কিনা, কারণ আমি পায়ে কোনো সাড় পাচ্ছিলাম না। আমার মনে হচ্ছিল আমি বোধ আর কখনই বিমান চালাতে পারবো না,“ বলেন ক্যামেরন।

তার এখন লক্ষ্য আগামী বছরের শুরুতে আবার বিমান চালানো। কিন্তু তার শরীরের অবস্থা তার পাইলট পেশাকে গভীর ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি