আ.লীগের কাউন্সিল শুক্রবার, কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক?
প্রকাশিত : ১০:১৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১২:৪৮, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে বৈপ্লবিক পরিবর্তন করেছেন। শুধু তাই নয়, পরিবর্তন আনা হয়েছে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বেও।
এছাড়া ক্যাসিনো অভিযান সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের অব্যাহতিসহ আইনের আওতায় এনেছেন, যা সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের তোড়ঝোড়।
আগামী শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) শুরু হবে ২১তম জাতীয় কাউন্সিল। কাউন্সিল উপলক্ষে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে কাউন্সিলস্থল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি করা হয়েছে সম্মেলন মঞ্চ। মঞ্চ সাজসজ্জা উপকমিটির নেতারা নিয়মিত সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করছেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে নেতৃত্বে কারা আসছে তা নিয়ে নানা কৌতূহল থাকলেও দলটির সভাপতি পদ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কারণ এই পদটিতে বরাবরের মতো বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই থাকছেন তা নিশ্চিত।
তবে দল-মত নির্বিশেষে সবার কৌতূহল- কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক? ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন, নাকি নতুন কেউ? এই পদটিতে এখনও কেউ নিশ্চিত নন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে চাইবেন তিনিই হবেন আগামী দিনের সাধারণ সম্পাদক। এই পদে কে আসছেন তা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে শনিবার দলটির ২য় কাউন্সিল অধিবেশন পর্যন্ত।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়া এই মুহূর্তে সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তবে পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে।
আলোচনায় যারাই থাকুক না কেন, টানা দ্বিতীয়বারের মতো ওবায়দুল কাদেরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন সে বিষয়ে আভাস দিয়েছেন দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ সোমবার বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পাঁচবার। অন্যান্য কাউন্সিল ঘেঁটে দেখা যাবে সবাই দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও দুই মেয়াদে ছিলেন। তাছাড়া বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ভালো কাজ করছেন। তিনি আরেকটি মেয়াদ থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তিনি এখন পুরোদমে সুস্থ। কাউন্সিলে এ পদে নতুন কাউকে দেখব বলে মনে হয় না।
আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, যেসব কারণে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসার কথা তেমন কিছু ঘটেনি। একটা সময় বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ থাকলেও তিনি এখন সুস্থ। কাজও করছেন স্বাভাবিকভাবে। এ পদে পরিবর্তন হওয়ার মতো কিছু দেখছি না।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিতই থাকছে। সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক নেতার নাম উঠে এলেও রীতি অনুযায়ী কাউন্সিল অধিবেশনে কেউ প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন না।
তারা আরও বলেন, সাধারণত তৃণমূলের নানা অভিযোগের কারণেই সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনে গুরুত্ব দেন দলের হাইকমান্ড। বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ নেই। তিনি সারা দেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। দলীয় কাজে তার প্রতি অনেকটাই সন্তুষ্ট আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সে হিসেবে ধরেই নেয়া যায়, ওবায়দুল কাদেরই ফের সাধারণ সম্পাদক থাকছেন।
এ বিষয়ে সম্প্রতি ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি দ্বিতীয়বার পার্টির সাধারণ সম্পাদক থাকব কিনা, তা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, আমি নিজে প্রার্থী হব না। নেত্রী দায়িত্ব দিলে অমত করব না। তিনি চাইলে আবার দায়িত্ব দেবেন, না চাইলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেবেন। ওনার (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্ত আমরা সবাই মেনে চলব।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের ভাষ্যমতে, দলের প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকীয় পদে চমক আসতে পারে। অন্য পদগুলোতে কারা আসছেন তা নিয়েও চলছে আলোচনা। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাই চান শুদ্ধি অভিযানের ভেতর দিয়ে হতে যাওয়া কাউন্সিলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন। বিশেষ করে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর যারা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন তারা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসুক- এ রকম চাওয়া নেতাকর্মীদের।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এদিকে পদ পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে লবিং করছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী নেতাদের কাছেও ছুটছেন অনেকে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা, অফিস, বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও হাজির হচ্ছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা।
আরও জানা গেছে, ‘নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্বের’ যে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড করছে, এর প্রতিফলন ঘটবে এবারের কাউন্সিলে। এ লক্ষ্যে দলের নবীন-প্রবীণ নেতাদের আমলনামায় চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
আরও পড়ুন