‘আল্লার ওয়াস্তে আমাদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না’
প্রকাশিত : ১১:৩৮, ২১ মার্চ ২০২০
নিচের যে লেখাটি পড়েছেন তা ঠিকই পড়েছেন ! আমাদের আর কোন রাস্তা খোলা নেই কারন গতকাল পর্যন্ত ১০০০ কোটি টাকার অর্ডার বা পন্য বায়ার বাতিল করেছেন। আজকে প্রতি ঘণ্টায় ২/৩ টা গার্মেন্টস এর পণ্যের অর্ডার বাতিল করছেন ক্রেতারা! কাকে দোষ দিবো কারণ এই ভয়াভহ মরণব্যধি করোনা ভাইরাস এমনভাবে আঘাত করেছে যে পুরো পৃথিবী স্তব্ধ আজ।
বাংলাদেশ বাদে আমার আরো ৭টি দেশে অফিস আছে সেখান থেকে আজকে যে রিপোর্ট পেলাম তা খুবই ভয়াবহ, গতকালকের ডেথ রেট আর আজকের মৃত্যুর হার যদি আগামি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলে তা হলে আরো ২৩,০০০ কোটি থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকার অর্ডার বাতিল হবে। এই টাকার পরিমান শুধু যে পণ্য পোর্টে, জাহাজে আর ডেলিভারির জন্য প্রডাকসনে আছে তার পরিমান। একইভাবে আরো ২৭,০০০ কোটি টাকা পণ্যের কাপড় স্টকে বা কাটা আছে সেলাই করার জন্য। আরো ২৭,০০০ কোটি টাকার পণ্যের কাপড় অর্ডার দেয়া আছে বিভিন্ন সাপ্লাইয়ারের কাছে যার মুল্য ব্যাংক থেকে পরিশোধ করা হয়েছে। অর্থাৎ এই ৩ পর্যায়ে ৮১ হাজার কোটি টাকার দেনায় এখন আমরা! এই টাকার অংক কেবল ২০% - ২৫% গার্মেন্টস এর।
এই মার্চ মাস ঘুরেই যদি মৃত্যুর মিছিল থাকে তা হলে পুরো বাংলাদেশের একটা গার্মেন্টস ও খোলা থাকতে পারবে না সবার অর্ডার বাতিল হবে এবং গার্মেন্টস চালু রেখে বিদ্যুত বিলও দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে না কোন মালিকের। আমার আরো খারাপ লাগছে এই জন্য যে সামনে ঈদ আমাদের শ্রমিক ভাই বোনদের হাতে কোথা থাকে টাকা দেব? বায়ার টাকা না দিলে ব্যাংকও টাকা দিবে না। বায়ার এক কথায় না বলে দিয়েছে তাদের আর কোন দায় নেই তাদের এটা নিয়ে চিন্তা করারও সময় নেই। কারণ তারাও মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আছে!
আজ একটার পর একটা গার্মেন্টস এর অর্ডার বাতিল হচ্ছে কিন্তু আজ তারা কোথায় যারা এই বায়ারদের সুরে সুর মিলিয়ে কম্প্লায়েন্সের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করিয়েছে মালিকদের পকেট থেকে! আজ তারা কোথায় যারা টিভির সামনে বসে মালিকদের চোর বলেছেন, রক্তচোষা বলেছেন! আজ জোবায়দা নাসরিন, ফারুক ওয়াসিফরা কোথায় যারা মালিক আর শ্রমিকদের ভিতরে দ্বন্দ্ব বাধিয়ে নিজেরা ফায়দা লুটেছেন, আজ শ্রমিক নেতা নামধারী সেই চাঁদাবাজরা কোথায় আসুন এবং বায়ারদেরকে বলুন অর্ডার বাতিল করেছ ভাল কথা কিন্তু পেমেন্ট দিয়ে দিন- কারণ শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে! সেই যোগ্যতা উপরের ফায়দা লোটা গোষ্ঠির কারোরই নেই! সব আমাদেরকেই করতে হয়েছে!
এ ব্যবসা করতে এসে মা, বাবা, স্ত্রী সন্তান কেউ গালি থেকে রেহাই পায়নি! খারাব লাগে তখন যখন চিন্তা করি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি এই গার্মেন্ট্স ব্যবসায় যা দিয়ে রেমিট্যান্স আসে আর তা পরোক্ষভাবে ৬ কোটি লোক জীবনযাপন করছিল আর দেশ চলছিল ভালভাবেই কিন্তু আজ এক অজানা ভাইরাস সব ওলট-পালট করে দিলো সব! এই সর্বনাশা মৃত্যু যদি জুন মাস পর্যন্ত চলে তা হলে শুধু আমরাই নই আমাদের সাথে যারা জড়িত সবাই শেষ হবে। টিনের চালের নিচে একটু ঘুমানোর টিনও কপালে জুটবে না। কোন কুল কিনারা চোখে দেখছি না যদি না আল্লাহ এখান থেকে উদ্ধার না করেন- তবে শুধু একটা রাস্তাই খোলা আছে অংকের হিসাবে আর তা হল সরকার।
সরকার যদি সদয় হয় তা হলে যদি দু-পায়ে ভর দিয়ে আবারও স্বপ্ন দেখতে পারবো! নয়ত ভিক্ষার থালা হাতে নিয়ে আপনারই দরজায় গিয়ে বলবো আমাকে একটু সাহায্য করুন আমি ক্ষুধার্ত, আল্লার ওয়াস্তে আমাদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না।
ডিরেক্টর, ফান ফ্যাক্টরি লিমিটেড
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।