আল্লাহর বিধান ও রাসুলের নির্দেশনা অনুসরণের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত
প্রকাশিত : ১১:১৯, ১০ মে ২০২০
কোন বঞ্চিত, অবহেলিত বা অধঃপতিত মানুষ যদি কুরআনের মর্মবাণীকে অনুধাবন করতে পারে, অনুসরণ করতে পারে, তাহলে সেও পরিণত হবে যথার্থ মানুষে, সফল মানুষে, আলোকিত মানুষে। আল্লাহর বিধান ও রাসুলের নির্দেশনা অনুসরণের মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত। যারা আল্লাহর বাণী গ্রহণ ও অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিন শাস্তি।
অনুসরণ সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ যা ইরশাদ করেন : ‘হে নবী! আমার বান্দারা যদি আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তখন তাদের বলো, আমি তো তাদের খুব কাছেই আছি। প্রার্থনায় আমাকে যে ডাকে, আমি তার ডাক শুনি, তার ডাকে সাড়া দেই। তাই আমাকে বিশ্বাস করা ও আমার ডাকে সাড়া দেয়া অর্থাৎ আমার দেয়া ধর্মবিধান অনুসরণ করা তাদের কর্তব্য। তাহলেই তারা সত্যপথে চলতে পারবে।’ (সূরা বাকারা ১৮৭)
‘হে নবী! বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আলে ইমরান ৩১)
‘আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশনা অনুসরণ করবে তারা নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহিদ ও সৎকর্মশীলদের অর্থাৎ আল্লাহর অনুগ্রহভাজনদের সঙ্গী হবে। এরাই উত্তম সঙ্গী।’ (সূরা নিসা ৬৯)
‘(তিনি আরও নির্দেশ দিয়েছেন যে) প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত সৎ-উদ্দেশ্য ছাড়া এতিমের ধন-সম্পত্তির কাছে যাবে না। ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ করবে। আমি কারো ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেই না। যখন কথা বলবে, ন্যায্য কথা বলবে। আত্মীয়-স্বজনের বিপক্ষে গেলেও ন্যায্য কথা বলবে। আল্লাহর কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণ করবে। এভাবেই আল্লাহ পথনির্দেশনা দিয়েছেন, তা তোমরা অনুসরণ করবে।’ (সূরা আনআম ১৫২)
সত্য জেনেও অনুসরণ না করার পরিণাম : ‘ওদের মতাদর্শ অনুসরণ না করা পর্যন্ত ইহুদি ও খ্রিস্টানরা কখনোই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না। ওদের বলো, আল্লাহর পথনির্দেশই প্রকৃত পথনির্দেশ। সত্যজ্ঞান লাভের পর তুমি যদি ওদের ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহর হাত থেকে কেউ তোমাকে রক্ষা করতে পারবে না, তোমার কোন সাহায্যকারীও থাকবে না।’ (সূরা বাকারা ১২০)
‘কিন্তু কেউ যদি সত্য জানার পরও রসুলের বিরোধিতা করে এবং বিশ্বাসীদের পথ ছাড়া ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, তবে আমি তার পছন্দের ওপর তাকে ছেড়ে দেবো। পরিণামে সে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। আর থাকার জন্যে এটি নিকৃষ্টতম স্থান।’ (সূরা নিসা ১১৫)
‘অথবা এটাও বলতে পারবে না যে, ‘আমাদের ওপর কিতাব নাজিল হলে আমরা ওদের চেয়েও ভালভাবে তা অনুসরণ করতাম!’ এখন তোমাদের ওপর প্রতিপালকের কাছ থেকে সত্যের সুস্পষ্ট প্রমাণ, পথনির্দেশনা ও রহমত নাজিল হয়েছে। এরপর যদি কেউ আল্লাহর বাণীকে প্রত্যাখ্যান করে এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, তবে তার চেয়ে বড় সীমালঙ্ঘনকারী আর কে হবে? যারা আল্লাহর বাণী গ্রহণ ও অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিন শাস্তি।’ (সূরা আনআম ১৫৭)
সঠিক পথ অনুসরণ : ‘যদিও আমি বলেছিলাম, তোমরা সবাই এখান থেকে দুনিয়ায় যাও। তারপরও তোমাদের মঙ্গলের জন্যে আমি অবশ্যই (যুগে যুগে) সত্যপথের দিক-নির্দেশনা প্রেরণ করব। তখন যারা এই দিক-নির্দেশনা অর্থাৎ নৈতিক বিধিবিধান অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় বা দুঃখ থাকবে না। আর যারা এই সত্যপথের নৈতিক বিধি-বিধানকে প্রত্যাখ্যান করবে, তারাই জাহান্নামের আগুনে পুড়বে। সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল।’ (সূরা বাকারা ৩৮-৩৯)
‘তোমরা যদি আমার নির্দেশ অনুসরণ করে বড় বড় গুণাহের কাজ থেকে বিরত থাকো, তবে তোমাদের ছোটখাটো পাপগুলো আমি ক্ষমা করে দেবো। আর তোমাদের সম্মানজনক স্থানে, জান্নাতে দাখিল করব।’ (সূরা নিসা ৩১)
‘অবশ্য কিতাবিরা যদি অবাধ্যতা ত্যাগ করে বিশ্বাসী হয়ে আল্লাহর আনুগত্যের পথ অনুসরণ করত, তবে অবশ্যই আমি ওদের অতীতের পাপমোচন করতাম এবং চিরসুখময় জান্নাতে দাখিল করতাম।’ (সূরা মায়েদা ৬৫)
কুরআন অনুসরণের নির্দেশ : ‘(একইভাবে) আমি এই কল্যাণময় কুরআন নাজিল করেছি। সুতরাং কুরআন অনুসরণ করো এবং আল্লাহ-সচেতন থাকো। তাহলেই তোমাদের ওপর রহমত নাজিল হবে।’ (সূরা আনআম ১৫৫)
‘(হে নবী!) এভাবে আমি আরবি ভাষায় কুরআন নাজিল করেছি এবং বিশদভাবে সতর্কবাণীসমূহ বয়ান করেছি, যাতে করে মানুষ আল্লাহ-সচেতন হয় এবং উপদেশ অনুসরণ করে।’ (সূরা তাহা ১১৩)
‘(হে নবী!) কুরআনের বিধান অনুসরণ যিনি তোমার ওপর ফরজ করেছেন, তিনি অবশ্যই তোমাকে চূড়ান্ত গন্তব্যে ফিরিয়ে আনবেন। (যারা সত্য অস্বীকার করছে তাদের) বলো, ‘আমার প্রতিপালক খুব ভালো করে জানেন, কে সত্যধর্ম নিয়ে এসেছে আর কে সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে লিপ্ত।’ (সূরা কাসাস ৮৫)
যাদেরকে অনুসরণ করা নিষেধ : ‘যারা গর্বভরে নিজেদের শান-শওকত প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, তাদের চালচলন অনুসরণ করো না। কারণ তারা (সত্য অস্বীকার করে আর) লোকদেরকে আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেয়। কিন্তু (ওরা বোঝে না যে) ওরা আল্লাহর শক্তির আওতার মধ্যেই রয়েছে।’ (সূরা আনফাল ৪৭)
‘হে নবী! তুমি কখনো এমন কাউকে অনুসরণ করো না : (এক) যে কথায় কথায় শপথ করে, (দুই) যে সম্মানহীন, (তিন) যে পেছনে নিন্দা করে, (চার) যে একের কথা অন্যের কাছে অন্যের কাছে লাগায়, (পাঁচ) যে ভালো কাজে বাধা দেয়, (ছয়) যে অত্যাচারী, (সাত) যে পাপাচারী, (আট) যে বদমেজাজী, (নয়) যে অজ্ঞাতকুলশীল। ধনে-জনে শক্তিমান বলেই ওকে অনুসরণ করো না। ওর কাছে আমার সত্যবাণী শোনালে বলে, ‘এ-তো সেকেলে কল্পকাহিনী।’ (সূরা কলম ১০-১৫)
যাদেরকে অনুসরণ করা যায় : ‘হে নবী! ওদের জিজ্ঞেস করো, তোমরা যাদের উপাস্য হিসেবে আল্লাহর শরিক করো, তাদের মধ্যে কি কেউ তোমাদের সত্যের পথনির্দেশ করে? ওদের বলো, ‘একমাত্র আল্লাহই সত্যের পথনির্দেশনা প্রদান করেন।’ এখন কে বেশি আনুগত্য লাভের হকদার? যিনি সত্যের দিক-নির্দেশনা দেন, তাকে তোমরা অনুসরণ করবে, নাকি পথ না দেখালে যে পথ পায় না তাকে? তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা তোমাদের সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করছ না কেন?’ (সূরা ইউনুস ৩৫)
‘(মা-বাবাকে সম্মান করো) কিন্তু যেহেতু তুমি জানো আল্লাহর কোন শরিক নেই, তাই তোমার মা-বাবা যদি আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করার ব্যাপারে চাপ দেয় (আল্লাহর নির্দেশের বিপরীত কোন কাজ করতে বলে) তাহলে কখনো তাদের সে কথা মানবে না। তবে এরপরও তাদের সঙ্গে সবসময় সুন্দর ব্যবহার করবে, তাদের খেদমত করবে। যারা বিশুদ্ধচিত্তে আমার পথে চলে শুধু তাদেরকেই অনুসরণ করবে। তোমাদের সবাইকে শেষ পর্যন্ত আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। তখন জীবনে যা কিছু করেছ, সবকিছুই বুঝিয়ে দেয়া হবে।’ (সূরা লোকমান ১৫)
অনুসরণে অটল থাকার নির্দেশ : ‘(হে বিশ্বাসীগণ!) তোমরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে আল্লাহর বিধান অনুসরণে অটল থাকো এবং কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে, তিনি তোমাদের হৃদয়ে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করেছেন। তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পরের ভাই হয়ে গেছ। তোমরা জাহান্নামের কিনারায় ছিলে, তিনি তোমাদের রক্ষা করেছেন। আল্লাহ এভাবেই তাঁর বিধানসমূহ সুস্পষ্টভাবে বয়ান করেন, যাতে তোমরা সৎপথে চলতে পারো।’ (সূরা আলে ইমরান ১০৩)
‘হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহর বিধানকে অনুসরণ করো এবং সত্যের সাক্ষ্যদানে অবিচল থেকো। কারো প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাকে সুবিচার থেকে দূরে সরে যাওয়ার মতো পাপে নিমজ্জিত না করে। সব সময় ন্যায়বিচারে দৃঢ় থাকবে- এটাই আল্লাহ-সচেতনতার ফলিত রূপ। তাই সব সময় আল্লাহ-সচেতন থেকো। তোমরা যা করো আল্লাহ তার সবকিছুরই খবর রাখেন।’ (সূরা মায়েদা ৮)
এসএ/