ঢাকা, শুক্রবার   ১৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আল মাহমুদের কবিতায় নারী ও প্রেম

দীপংকর দীপক

প্রকাশিত : ২০:৪০, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

ছয় দশকের অধিক সময় ধরে সাহিত্য সৃষ্টির পথে হাঁটছেন বিশিষ্ট কবি আল মাহমুদ। গদ্য-কবিতা মিলে তার রচনাসম্ভারের পরিধি অনেক বিস্তৃৃত। দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তনের কারণে তিনি গ্রহণযোগ্যতার ভিন্ন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছেন। নতুন দার্শনিকতায় নিজের অবস্থান স্থির করেছেন। ফলে পূর্বের অনুরক্তদের সঙ্গে তার দূরত্ব রচিত হয়েছে। নন্দিত-নিন্দিতকালের সাহিত্যে তার দর্শনগত পরিবর্তন সহজবোধ্য হয়ে উঠেছে।

আল মাহমুদ অকপটে স্বীকার করেন, তার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো প্রেম ও নারী। তবে নারী ও সৌন্দর্যকে তিনি আলাদা করে দেখতে চান। এক নারী একজনের কাছে সুন্দর, অন্যের কাছে তা না-ও হতে পারে। তাই আল মাহমুদ নারীকে সৌন্দর্য না বলে আকর্ষণীয় বলতে চান। তার মানে নারী আকর্ষণ করে, তার মধ্যে আকর্ষণ করার শক্তি আছে। সেই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বলেই নারী ও প্রেমের বিষয়টি তার কবিতায় এত ব্যাপকভাবে এসেছে। উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী হিসেবে নারীর যৌনতা, আকাঙ্ক্ষা ও ভোগের লালসাকে তিনি আর্টের অংশ হিসেবেই দেখতে চান।

কবি তার ‘সোনালী কাবিন’ কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম কবিতায় লিখেছেন— ‘বিবসন হও যদি দেখতে পাবে আমাকে সরল/ পৌরুষ আবৃত করে জলপাইর পাতাও থাকবে না/ তুমি যদি খাও তবে আমাকে দিও সেই ফল/ জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরস্পর হবো চিরচেনা/ পরাজিত নই নারী, পরাজিত হয় না কবিরা/ দারুণ আহত বটে আর্ত আজ শিরা-উপশিরা।’

আবার তিনি লিখেছেন—‘আমার চুম্বন রাশি ক্রমাগত তোমার গতরে/ ঢেলে দেবো চিরদিন মুক্ত করে লজ্জার আগল/ এর ব্যতিক্রমে বানু এ-মস্তকে নামুক লানৎ/ ভাষার শপথ আর প্রেমময় কাব্যের শপথ।’

`লোক লোকান্তর`-এর `সিম্ফনি` কবিতায় শুধু নারীর শরীরকে আরাধ্য করেননি কবি, কবিতার চরণসজ্জায় আবরণহীন শব্দের আভরণ স্থান করে নিয়েছে। কবি লিখেছেন- `শঙ্খমাজা স্তন দুটি মনে হবে শ্বেতপদ্ম কলি/লজ্জায় বিবর্ণ মন ঢেকে যাবে ক্রিসেনথিমামে`। `নূহের প্রার্থনা` কবিতায়ও নারী-পুরুষ সম্পর্কই মুখ্য স্থান গ্রহণ করেছে। লিখেছেন ‌`আবার করবো পান বুকের এ উৎস ধারা হতে/জারিত অমৃত রস/এতোদিন যৌবনের নামে/যা ছিল সঞ্চিত এই সঞ্চারিত শরীরের কোষে/হে নূহ সন্তান দেবো, আপনাকে পুত্র দেবো`। `শোকের লোবান` কবিতা নিবেদিত নারীর দাবি পূরণের গল্প-ভালোবাসার কথা তুলে ধরেছেন। লিখেছেন `তামসিক কামকলা শিখে এলে/যেন এক অক্ষয় যুবতী/তখন কবিতা লেখা হতে পারে একটি কেবল/যেন রমণে কম্পিতা কোনো কুমারীর/নিম্ননাভিমূল`। `কালের কলস` গ্রন্থের `শূন্য হাওয়া` কবিতায় কামবিন্দুকে ঘিরে নারী-পুরুষের ব্যক্তিগত পর্যায়ের সম্পর্কের চরণবৃত্ত গড়ে উঠেছে- `ঘুমের ছল কামের জল/এখনো নাভিমূলে/মোছেনি তবু আবার এলো/আগের শয্যায়।`

আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম মীর আবদুস শাকুর আল মাহমুদ। রবীন্দ্রনাথ কিংবা নজরুলের মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাশিক্ষার তেমন সুযোগ হয়নি তার জীবনেও। স্কুলজীবন থেকেই তার লেখালেখির শুরু। তিনি মধ্যযুগীয় প্রণয়োপাখ্যান, বৈষ্ণব পদাবলি, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল প্রমুখের সাহিত্য পাঠ করে সাহিত্য রচনায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন। দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে তার পেশা জীবন শুরু করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় লেখালেখি চালাতে থাকেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ `লোক লোকান্তর` (১৯৬৩) তাকে প্রথমসারির আধুনিক বাংলা কবিদের কাতারে নিয়ে আসে। কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬), মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৭৬) কাব্যগ্রন্থগুলো বাংলা কবিতায় তার আসনকে অনিবার্য ও পাকাপোক্ত করে দেয়। তারপর লিখেছেন আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া ইত্যাদি কাব্য। তার গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধ বনিক, ময়ূরীর মুখ ইত্যাদি। আর উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে কবি ও কোলাহল, উপমহাদেশ, বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ, ত্রিশিরা প্রভৃতি। আল মাহমুদের শ্রেষ্ঠ কবিতা, শ্রেষ্ঠ গল্প ও শ্রেষ্ঠ উপন্যাসও আলাদা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে।

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি