ঢাকা, সোমবার   ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বেওয়ারিশ লাশ (ভিডিও)

দিপু সিকদার

প্রকাশিত : ১২:২৭, ২৬ জানুয়ারি ২০২৪

দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা। ২০২৩ সালে শুধু রাজধানীতেই ৪৯০টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন বা সৎকার করেছে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। আর উদ্ধার হওয়া মরদেহের বেশিরভাগই হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা। 

পুলিশ বলছে, অনেক বেওয়ারিশ লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত হয় না। ফলে মামলা তদন্তে বাড়ে জটিলতা। 

রাজধানী ঘেঁষা নদী, নির্জন স্থান, ডোবাসহ বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাচ্ছে গলিত বা অর্ধগলিত মরদেহ। যার পরবর্তী ঠিকানা হয় মর্গের হিমঘরে।

যতন কুমার, সোহরোওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ডোম হিসেবে কর্মরত। অন্যান্য মরদেহের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত তাকে এমন অনেক মরদেহ নিয়ে কাজ করতে হয় যাদের পরিচয় মেলে না কখনো। হাসপাতালের মরচুয়ারিতে ফ্রিজের সংখ্যা কম থাকায় দিনের পর দিন এসব লাশ সংরক্ষণ করে রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে। 

সোহরোওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ডোম যতন কুমার বলেন, “বেওয়ারিশ লাশের ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ফ্রিজিং। ৯টি ফ্রিজ দিয়ে সমস্যা কাটানো যাচ্ছেনা। তাই কোনো কোনো বডি ১-১০ রাখা হয়। তবে বিদেশি থাকলে সেক্ষেত্রে সময় বেশি লাগছে।”

এভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বেওয়ারিশ লাশ সংরক্ষণ করতে হয়। পরিচয় নিশ্চিত না হলে পুলিশের মাধ্যমে বেওয়ারিশ হিসেবে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয় বেসরকারি সেবামূলক সংস্থা আঞ্জুমান মফিদুলের কাছে।

প্রতিষ্ঠানটির দেয়া তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ৪৪৩ বেওয়ারিশ মরদেহ বুঝে পায় আঞ্জুমান মফিদুল। আর গত বছর নগরীতে নাম পরিচয়রহীন ৪৯০ মৃতদেহ সৎকার করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩২০ জন পুরুষ, ১১৯ জন নারী এবং ৫১ জন শিশু রয়েছে। 

সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, আশংকাজনহারে বাড়ছে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা।

আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম ট্রাস্টি মোহাম্মদ আজিম বখ্শ বলেন, “বেওয়ারিশ লাশের যে ব্যবস্থাপনা করছি, এ নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। দিন দিন লাশের সংখ্যা বাড়ছে। যেভাবে লাশ পাওয়া যায় তা বহন করতে অনেক অসুবিধা। কারণ পচাগলা মরদেহ আমাদের নিতে হচ্ছে। সরকার যখন পর্যন্ত কাগজপত্রে মরদেহ হস্তান্তর না করে এর আগে আমাদের নেয়ার কোনো ক্ষমতা নাই।”

এসব লাশের বেশিরভাগই হত্যাকাণ্ডের শিকার, জানিয়েছেন এই ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সেলিম রেজা বলেন, “যখন আত্মীয়-স্বজন পাওয়া যায়না সেক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হয়। সেই রিপোর্ট আসার পর পুলিশ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে। এটা বিরাট জটিল প্রক্রিয়া।”

এদিকে পুলিশ বলছে, অনেক বেওয়ারিশ মৃতদেহের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা।

ডিএমপি ডিসি (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, “অনেক সময় দেখেছি ডিএনএ রিপোর্টার আসার পরে দেখা যায় আঘাতের চিহ্ন, হত্যার আলামত। এই হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি এবং তদন্তের এক পর্যায়ে কোনো এক ক্লু থেকে হত্যাকারীকে শনাক্ত করা হয়।”

প্রতিটি মানুষ তার নিজ পরিচয়ে বাঁচতে চায়। তার মৃত্যুর পর সেই পরিচয় ধারণ করে তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু বেওয়ারিশ লাশগুলোর পরিবারের সদস্যরা জানতেই পারেনা কোনো ভয়াবহতার বলি হয়ে মুছে গেছে তার নাম-পরিচয়।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি