ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আশুরা মুসলমানদের কাছে কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আরবি বর্ষের প্রথম মাস মহরম। এ মাসটি গোটা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে বিশেষভাবে তাৎপর্যময়  ও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মহররম মাসের ১০ তারিখ মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা এটাকে বিশেষ দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। যা আশুরা হিসেবে পরিচিত।

ইসলামী বর্ষপঞ্জিতে যে চারটি মাস মুসলিমদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে মহররম অন্যতম। আর ১০ মহররম আশুরার দিনে বিশ্বে সংঘটিত অলৌকিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ঘটনার কারণে দিনটি মুসলমানদের নিকট বিশেষভাবে মহিমান্বিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, আশুরা বা ১০ মহররম দিনটি মুসলিমদের জন্য নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ।

ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করেন, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর সময় থেকে মুসলিমরা ১০ মহররম পালন করত। এর পেছনে নানা ধর্মীয় বিশ্বাস নিহিত ছিল।

মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, এই দিনটিতে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এবং এই দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে, যেটি মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী কেয়ামতের দিন।

এছাড়া, পৃথিবীতে যত নবী ও রসুলগণ এসেছেন তাদের জীবনে এই দিনটিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটেছে বলে বিশ্বাস করেন মুসলিমরা।

অধ্যাপক রশিদ আরও বলেন, মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী ১০ মহররম সকল নবী এবং পয়গম্বরদের কেন্দ্র করে নানা ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর স্মরণ করেই মোহাম্মদ (সাঃ) এর সময়কাল থেকে এই দিনটি পালন করা হতো।

ইসলাম ধর্মমতে, আশুরার দিনে সৃষ্টি করা হয়েছিল  আসমান ও জমিন। আশুরার দিন আল্লাহ পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। এই দিনে নবীদের নিজ নিজ শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেছেন আল্লাহ। এই দিন হজরত নুহ (আ.)-এর প্লাবন শেষ হয় এবং তুরস্কের ‘জুদি’ নামক পর্বতে গিয়ে থামে নুহ (আ.)-এর জাহাজ।

আশুরার দিন জালিম বাদশাহ নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে মুক্তি পেয়েছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। এই দিন মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন হজরত ইউনুস (আ.)। আশুরার দিনে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন হজরত আইয়ুব (আ.)।

হজরত সুলাইমান (আ.) আশুরার দিন তার হারানো রাজত্ব ফিরে পান। এই দিনে হজরত ইয়াকুব (আ.) হারানো ছেলে হজরত ইউসুফ (আ.)-কে ৪০ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন। এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন হজরত ঈসা (আ.) এবং এই দিনেই দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয় তাকে।

সর্বশেষ ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে ওই দিনে ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র সপরিবারে শাহাদাতবরণ করেন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)।

গোটা বিশ্বে ইসলামে দুটি মত রয়েছে- সুন্নি এবং শিয়া - উভয়ের কাছেই আশুরার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ এরপর থেকে এই ঘটনাটিও যুক্ত হয় আশুরা পালন করার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে শিয়া মতাবলম্বীরা এই ঘটনাটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। সুন্নি মতাবলম্বীদের কাছেও এই ঘটনাটি গুরুত্ব বহন করে।

মুসলিমদের অনেকেই আশুরারা দিন রোজা রাখেন। অনেকে আশুরার আগের দিন এবং পরেরদিনও রোজা পালন করেন।

ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে রমজান মাস চালুর আগে আশুরার দিন রোজা পালন করা বাধ্যতামূলক ছিল।

সুন্নি মুসলিমদের অনেকেই ১০ মহররম বাড়িতে ভালো খাবারের আয়োজন করেন। বাংলাদেশে অনেকের মাঝে এই প্রথা প্রচলিত আছে।

কিন্তু ইসলামী চিন্তাবিদরা মনে করেন, আশুরার দিনে ভালো খাবারের আয়োজন করতেই হবে - এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, এই দিনটিতে নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর পরিবারের যেসব সদস্য মারা গেছেন তাদের জন্য দোয়া পাঠ করা গুরুত্বপূর্ণ।

এ কারণে সুন্নি এবং শিয়া মতাবলম্বীদের অনেকেই বাড়তি নামাজ আদায় করেন।

তবে সুন্নি মুসলিমদের চেয়ে শিয়া মুসলিমরা আশুরার দিনটিকে যেভাবে পালন করেন সেটি বেশ চোখে পড়ার মতো।
বিভিন্ন জায়গায় তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিয়া মতাবলম্বীরা তাদের নিজেরে শরীরে ছুরি মেরে কষ্ট অনুভব করেন।

তাদের বিশ্বাস নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর দৌহিত্র হোসাইনকে হত্যার সময় যে তিনি যে কষ্ট পেয়েছিলেন, তারাও নিজেদের পিঠে ছুরি মেরে সে কষ্ট অনুভবের চেষ্টা করেন।

তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন। বাংলাদেশে যেসব তাজিয়া মিছিল বের হয় সেখানে প্রচুর সুন্নি মতাবলম্বীরাও অংশ নেয়। বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ১০ মহররমকে সরকারিভাবে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়।

এদিন সরকারি ছুটিও থাকে সবসময়।

সূত্রঃ বিবিসি 

আই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি