বিবিসির বিশ্লেষণ
আ. লীগ-ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ: দু’পক্ষ যে বিষয়গুলো ছাড় দিতে পারে
প্রকাশিত : ১৪:৪০, ১ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৪১, ১ নভেম্বর ২০১৮
একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বহুল প্রতীক্ষিত রাজনৈতিক সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আজ সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ সংলাপ শুরু হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ক্ষমতাসীন দল।
আজ সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদের মধ্যে দলটির শরিক ১৪ দলীয় জোটের তিন নেতাও থাকবেন।
সংলাপকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে সুবাতাসের আভাস পাওয়া গেলেও আলোচনার সফলতা দুই পক্ষের ছাড় দেওয়ার মানসিকতার ওপর নির্ভর করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন, সাধারণ মানুষ এই সংলাপ থেকে প্রত্যাশা করছে যে দুই পক্ষ একটা সমঝোতায় আসবে। কারণ সবাই চায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তবে এই সংলাপ সফল করতে গেলে দু`পক্ষেরই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকার প্রয়োজন বলে জোর দেন তিনি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শুরু থেকেই চাইছিল যে একটা সংলাপ হোক, পরে ক্ষমতাসীনরা এতে সায় দিয়েছে। এর পেছনে দুই বিষয়কে প্রধান কারণ বলে তিনি মনে করেন, প্রথমত সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটা চাপ আছে। দ্বিতীয়ত, সরকার দেখাতে চাইছে যে, তারা সংলাপে বসেছে। সেটা লোক দেখানো হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সংবিধানে সংসদীয় পদ্ধতিতে যে নির্বাচনের কথা বলা আছে সে অনুযায়ী এই সংসদের শেষ অধিবেশনের ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। নির্বাচনের প্রয়োজনে সংসদ মুলতবি হলেও সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হয় না।
তবে অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন এই সংসদ কিংবা সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েই রাজনৈতিক সঙ্কট দানা বেধে আছে। তার মতে, সরকারের ছাড় দেয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হল- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। যেখানে সংসদ থাকতে পারবে না। যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজেই হস্তক্ষেপ করবে না। সরকার এক্ষেত্রে ছাড় দিলে সংলাপ নতুন জায়গা পাবে।
অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, সংবিধানে এটাও আছে যে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে যদি নির্বাচন হয় তাহলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তারপরের ৯০ দিনের মধ্যে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে। এতে করে দুটো দাবিই মেনে নেয়া হবে। সংসদও থাকলো না আবার একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এসে গেল।
তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে শুরু করে সব ধরণের কাজ মিটমাট করতে আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, এখন তো সময় অনেক কম। এতো অল্প সময়ের মধ্যে সরকারি বা বিরোধী দল কোনটা ছাড় দেবে সেটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যেই তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন যদি জানুয়ারি বা মার্চ এপ্রিলের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে অনেক সময় পাওয়া যাবে, এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত কথাবার্তা বলারও সুযোগ থাকবে।
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন সেই-সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আচরণ কেমন হবে সেক্ষেত্রে আলোচনার বিষয়ে বিরোধী-পক্ষের ছাড় দেয়ার জায়গা রয়েছে বলে মনে করেন অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ কি হবে, কি হবে না, সেটাকে কতোগুলো আইন, কনভেনশন বা নীতিমালার আওতায় আনা যেতে পারে, যেমনটা কিনা অস্ট্রেলিয়ান সরকার লিখিতভাবে করে দিয়েছে।
বিএনপি একটা ছাড় দিতে পারে যে, ঠিকআছে, নির্বাচন কমিশনই থাকল কিন্তু যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসবে সেটা কি কি কাজ করবে সেটা একটা নীতিমালার মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলা হবে। তবে দিলারা চৌধুরী মনে করেন, চেয়ারপারসন খালেদার জিয়াকে মুক্তি দেয়ার প্রশ্নে বিএনপি কোন ছাড় দেবে না।
/ এআর /
আরও পড়ুন