ইছামতিকে আগের রূপে ফেরাতে এক যুবকের লড়াই
প্রকাশিত : ১০:৫৮, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | আপডেট: ২২:১৬, ২ মার্চ ২০২৪
দুই যুগ আগেও ঢাকার নবাবগঞ্জের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নদীপথ। তখন ইছামতি নদী পানিতে টইটম্বুর থাকত। বর্ষা মৌসুমে দুকূল উপচে পানি খালবিল, মাঠঘাট, হাওড় বিলে গিয়ে পড়তো। বারো মাসই এলাকার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল নৌযান। কিন্তু এখন ভরা বর্ষা মৌসুমে সেই নদীতে পানি থাকে না বললেই চলে। পলি জমে কোথাও কোথাও ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও ধান চাষও হচ্ছে। হাটবাজার ও বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতেদ একসময়ের প্রমত্তা ইছামতি এখন মরা খাল আর ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
অথচ একসময় দিনরাত ইছামতিতে উত্তাল ঢেউ বইত আর জাহাজের সাইরেন শোনা যেত। কিন্তু এখন নদীর সেই রূপ আর নেই। এর অস্তিত্বই হারিয়ে যেতে বসেছে। এর মূল কারণ নবাবগঞ্জ উপজেলার কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধের মূল পয়েন্টে স্লুইসগেট না থাকায় ইছামতি নদী এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
ইছামতি নদীর এই দুর্দশা থেকে রক্ষা করতে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধরণা দিয়েছে। কাজের কাজ কিছু না হওয়ায় হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে তারা। তবে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা।
বছরব্যাপী সামাজিক নানা ইস্যুতে কাজ করছেন তিনি। ইছামতি নদীকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনা, গ্রাম বাংলার শত বছরের ঐতিহ্য নৌকাবাইচ টিকিয়ে রাখা যেন তারই কাজ। কখনো এলাকার স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে আবার কখনও একাই ইছামতি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে যান।
ঘুরে ঘুরে ইছামতির বেহাল দশার চিত্র তুলে ধরেন জাতীয় গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে।
সম্প্রতি এই সংগঠককে দেখা যায় উপজেলার ইছামতি নদীর নয়নশ্রী পয়েন্টে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নদী কমিশনসহ প্রশাসনের কাছে ইছামতির দুর্দশা তুলে ধরতে ডকুমেন্টারি বানাতে। ঢাকার নবাবগঞ্জে সংগঠক হিসেবে পরিচিত মুখ রাশিম মোল্লাকে। নানা সামাজিক ও মানবিক কাজের জন্য তার পরিচিতি রয়েছে পুরো উপজেলা জুড়ে।
ইছামতি নদী রক্ষার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে তিনি বজ্রপাত থেকে কৃষকের জীবন রক্ষায় কাজ করছেন। মাঠে মাঠে গিয়ে বজ্রপাত সচেতনতার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষকদের।
কথা হয় সংগঠক রাশিম মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রতিনিধি দল বেশ কয়েকবার কাশিয়াখালী বেরিবাঁধ পরিদর্শন করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সাক্ষাৎ করলে বলেন স্লুইচগেট স্থাপনের প্রক্রিয়ার কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। নদীতে পুনরায় নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ইছামতি নদীর কশিয়াখালী বেড়িবাঁধ ও কার্তিকপুর অংশে স্লুইচগেট স্থাপনের জোর দাবি জানান তিনি।
নবাবগঞ্জের ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব দুলাল দেওয়ান বলেন, নদীর নাব্রতা সংকটে যখন হারিয়ে যেতে বসেছিল নৌকা বাইচ, তখন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লার উদ্যোগেই গড়ে উঠে নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে নদী রক্ষায় প্রায় দেড় যুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বিভিন্ন মৌসুমে আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়ে নদীর বিভিন্ন গণসচেতনতাসহ নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছি।
দোহার-নবাবগঞ্জের বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ মোল্লা বলেন, দোহার-নবাবগঞ্জ ও হরিরামপুর উপজেলাকে পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে ১৯৯৬ সালে দোহারের অরঙ্গাবাদ থেকে মানিকগঞ্জের হাটিপাড়া বংখুরী পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে নদীর মূল পয়েন্টে স্লুইসগেট নির্মাণ না করায় ইছামতি এখন চরম নাব্য সংকটে। প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুম আাসা মাত্রই কাশিয়াখালী থেকে শিকারীপাড়া বারুয়াখালী বান্দুরা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার নদীপথ শুকিয়ে যায়। ইছামতিকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন দ্রুত কাশিয়াখালি বেড়িবাধের মুখে স্লুইসগেট নির্মাণ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী বাঁচাতে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও কতিপয় সংশ্লিষ্ট দফতরের নীরব ভূমিকা স্থানীয় জনসাধারণের মনে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ইছামতি নদী রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, নদী কমিশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।
এএইচ
আরও পড়ুন