ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বুয়েট সমাবর্তনে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লেই হবে না, পূর্ণিমার চাঁদও দেখতে হবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৬, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে কেবল একজন ইঞ্জিনিয়ার হলেই চলবে না, ভালো হৃদয়ের জন্য আমাদের সাহিত্যও পড়তে হবে। আমাদের সংগীত শুনতে হবে। চিত্রকলা দেখতে হবে। পূর্ণিমার চাঁদকে দেখতে হবে। সন্দুর মানুষকে বুঝতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পুনর্মিলনী-২০১৭ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। একুশে টিভি পাঠকের জন্য বক্তব্যের কিছু অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হলো।

‘আমি এক সময় ঢাকা কলেজে পড়াশুনা করতাম। পড়াশুনা শেষ করে শিক্ষকতাও করেছি সেখানে। দেশের সবচেয়ে ভাল শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হোত। আমরা যারা শিক্ষক ছিলাম সেই সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী হিসাবে ভর্তি হওয়ার য্যেগতা আমাদের ছিলো না। রাষ্ট্রপতিকে সেই সময় বলেছিলাম এতো নিকৃষ্ট ব্যক্তি দ্বারা এতো উৎকৃষ্ট ব্যক্তি শিক্ষিত হবে। এর চেয়ে হতভাগা জাতি আর কিছু হতে পারে না। মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী বহু আগেই এই কথা বলে গেছে। এমন এক সময় আসবে “জ্ঞানীরা ভাসবে অশ্রু জলে আর মূর্খরা মাথার উপর ছড়ি ঘুরাবে । আমার মনে হয় সে যুগ চলে আসছে। তা নাহলে আমি এখানে প্রধান অতিথি হয়ে আসবো কিভাবে। আমিতো আপনাদের মধ্যে এতো জ্ঞানী লোক না। কিভাবে যে আপনাদের সামনে কথা বলি। তিনি বলেন, পৃথিবী কোনো জিনিস ফিরে আসে না। যা একবার চলে যায় তার আর কোন দিন ফিরে আসবে না। আমরা শৈশবকে হারিয়ে ফেলেছি। শৈশব বড় ভাল সময় ছিল। মানুষের যত বয়স হোক না কেন। সবাই শৈশবে ফিরে যেতে চাই। এই শৈশবে অনেক অনুভুতি কাজ করে। এই শৈশবই মানুষের জীবন।


আমরা সবাই শৈশবে ফিরতে চাই। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে পড়তে এসে অনেক ছাত্ররা আমাকে বলেন আমি আজীবন এখানে থাকতে চাই। একবার সময় চলে গেলে আর ফিরে আসবে না। পৃথিবীতে সবকিছু মিথ্যা হয়ে যাবে কিন্তু মানুষের প্রেম-ভালবাসা-কোন দিন মিথ্যা হবে, তা ভাবা যায় না। আমি একসময় পাবনার এক স্কুলে পড়তাম। ৩০বছর পরে আমি একবার সেখানে গিয়েছিলাম। কি যে অনুভুতি আমি বলে বুঝাতে পারবো না। সেদিন চোখের দিকে তাকাচ্ছি চোখে পানি চলে আসছিলো।


৩০বছর আগের সেই আমি কে দেখতে পারছিলাম সেদিন। সেখানে কেউ ছিলো না। কিন্তু তবুও আমার মনে চোখ দিয়ে আমি সেই সময়ের সবাইকে দেখতে পারছিলাম। আজ আমরা একসঙ্গে হয়েছি সেই শৈশবকেই ফিরে পেতে। আমিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিলাম। কিন্তু ছাত্র হিসাবে থাকার যোগ্যতা আমার ছিল না। শিক্ষক হিসাবে থাকার যোগ্যতা আমার ছিলো। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয় যখন আসি তখন আমি বাচ্চা ছিলাম। মাত্র ২৩ বছর বয়স।
এই বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিকে বলেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা দরকার। সংস্কৃতিক পরিমণ্ডল নির্মাণ করা দরকার। কারণ মানুষ বৃত্তবান ও সম্পদশীল হলেও সম্পদ দিয়ে সম্পদ ক্রয় করা যায় না। টাকা দিয়ে টাকা ভোগ করা যায় না।

জীবনকে উপভোগ করতে হলে হৃদয় লাগে। হৃদয়কে নিজে তৈরি করতে হয়ে। সেই হৃদয় সৃষ্টি করতে যদি বিশ্ববিদ্যালয় কমতি থাকে তাহলে সুষ্ঠু মানুষ তৈরি করা সম্ভব নয়। তবে এখনও এই বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। আমাদের শুধু ইঞ্জিনিয়ারিক পড়তে হবে না। আমাদের সাহিত্যও পড়তে হবে। আমাদের সংগীত শুনতে হবে। চিত্রকলা দেখতে হবে। পূর্ণিমা চাঁদকে দেখতে হবে। সন্দুর মানুষকে বুঝতে হবে।

পৃথিবির মানুষকে বুঝতে হবে। তা না হলে আমারা রোবট হয়ে যাবে। যান্ত্রিক মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবো। এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে অনেক জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয়। তার সঙ্গে মানুষের মানবিক দিক শেখানো হয়। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তনে সহযোগিতা করা হয়। যদি মানুষের মনের দরজাকে বড় করতে সযোগিতা করতে পারি তাহলে আমরা ভাল কিছু করতে পারবো। আমাদের জাতি সুষ্ঠু জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। একটা সভ্য জাতি হতে হলে মানুষকে সভ্যতার মানদণ্ডে গড়ে তুলতে হবে, তবেই সুষ্ঠু জাতি হিসাবে গড়ে তোলা যাবে।’

টিআর/ এমজে

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি