ইতিকাফ কী, কেন করা হয়?
প্রকাশিত : ১৫:১৮, ১৯ মার্চ ২০২৫

ইতিকাফ আরবি শব্দ। এর অর্থ স্থির থাকা বা অবস্থান করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় জাগতিক কার্যকলাপ ও পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সওয়াব-এর উদ্দেশ্যে মসজিদে বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা বা স্থিতিশীল থাকাকে ইতিকাফ বলে।মুসলমানরা রোজার মাসের শেষ ১০ দিন সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মসজিদে যে ধ্যানে বসেন, তাকে বলে ইতিকাফ। সাধারণত রোজার মাসে ইতিকাফ করা হলেও বিশেষ উদ্দেশ্য বা মানত নিয়ে অন্য সময়ও তা করা যায়।
এ ধ্যানের উদ্দেশ্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। যিনি ইতিকাফে বসেন, ইবাদতের জন্য তিনি দুনিয়াবি সব কিছু থেকে ওই সময় নিজেকে আলাদা করে নেন।
রমজান মাসের শেষ ১০ দিনকে বলা হয় নাজাত দশক। ২০ রোজার পর থেকেই শুরু হয় ইতিকাফের ইবাদত। বাধ্যতামূলক না হলেও রোজার শেষ ১০ দিনের স্বেচ্ছা পালনীয় এ ইবাদত ‘খুবই ফজিলতপূর্ণ’ বিবেচনা করা হয়।
ইতিকাফ তিন প্রকার। রোজার শেষ দশকের ইতিকাফ সুন্নত। এর বাইরে যে কোনো সময় নফল ইতিকাফ করা যায়। আর নির্দিষ্ট মানত করে ইতিকাফ করলে তা হয় ওয়াজিব।
বায়তুল মোকাররমের খতিব বলেন, “রমজানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ হল সুন্নতে মুয়াককাদা আলাল কেফায়া। এটি মহল্লার যে কেউ একজন মসজিসে বসে করতে হয়। একজন করলে মহল্লার সবার হয়ে যায়। কেউ না করলে সবাই গুনাহগার হবেন।”
ইতিকাফ করার জন্য মসজিদে যেতে হবে ২০ রোজার সূর্যাস্তের আগে; শাওয়ালের চাঁদ দেখার পর মসজিদ থেকে বের হতে হবে।
তবে মাঝের সময়টায় খাবার আনতে বাইরে যাওয়া যাবে। আরাধনায় থাকলেও দ্বীন নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলা যাবে।
নারীদের ক্ষেত্রে ইতিকাফে বসার জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাসায় কোনো নিদিষ্ট জায়গায় পর্দার আড়ালে ইতিকাফে বসতে পারেন।
ইসলামিক স্কলাররা বলেন, “রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে শবে কদরের রাত নিহিত। যেসব রাতের এবাদত হাজার বছর রাতের এবাদতের চেয়ে উত্তম। ইতিকাফ করলে এই রাতের সন্ধান মেলে।“
কোরআন শরিফে সুরা বাকারর ১২৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “এবং স্মরণ কর যখন আমি কাবাগৃহকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র এবং নিরাপদস্থল করলাম এবং বললাম, ‘মাকামে ইবরাহীমকে সলাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর’ এবং ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে বলেছিলাম, ‘আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী এবং রুকূ ও সাজদাহকারীদের জন্য পবিত্র রাখবে।”
সুরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “রাতের আগমন পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর, আর মাসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় তাদের (স্ত্রী) সাথে সহবাস করো না। এসব আল্লাহর আইন, কাজেই এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। আল্লাহ মানবজাতির জন্য নিজের আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা মুত্তাকী হতে পারে।”
ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) স্বয়ং ইতিকাফ করেছেন এবং ইতিকাফ করার জন্য সাহাবিদের উৎসাহিত করেছেন।
হজরত ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। (বোখারি: ২০২৫)
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, “নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ পালন করতেন। তার ওফাতের আগ পর্যন্ত তিনি ইতিকাফ পালন করে গেছেন। তারপর তার স্ত্রীরাও তা পালন করেছেন।” (তিরমিজি: ৮০৮)।
হজরত আয়শা (রা.) আরো বর্ণনা করেছেন, “নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, সে দুটি ওমরাহ ও দুটি হজ আদায় করার সওয়াব পাবে’।” (বোখারি: ২৭২৪)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, “মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইতিকাফ করবে, আল্লাহতায়ালা তার এবং জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করবেন, প্রত্যেক পরিখার প্রশস্ততা দুই দিগন্তের চেয়েও বেশি। (শোয়াবুল ঈমান: ৩৯৬৫)।
বোখারি শরিফে বলা হয়েছে, মহানবী (সা.) প্রতি বছর রমজান মাসে ইতিকাফের বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করতেন। কখনো তিনি পুরো রমজান মাস ইতিকাফ করেছেন। একবার বিশেষ কারণে রমজান মাসে ইতিকাফ করতে পারেননি, তাই শাওয়াল মাসে ১০ দিন রোজা রেখে ইতিকাফ করেন (বোখারি: ২০২৯)।
মাওলানারা জানান, “ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াবি সব ছেড়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যেতে চায়। সেজন্য এ সময় বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করার পাশাপাশি নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার, দোয়া-দরুদ, দান-সদকার মত নফল এবাদতে মনোযোগী হতে হয়।”
এমবি//