ঢাকা, বুধবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ইবি হলে ছাত্রী নির্যাতন, ছাত্রলীগ সহ-সভাপতিসহ ৫ জন বহিষ্কার

ইবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৮:৩১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৫ জনকে হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে হল কর্তৃপক্ষ। প্রভোস্ট কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনার সত্যতা মিলেছে।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) তদন্ত কমিটি তার সাত কর্ম দিবসের শেষ দিনে প্রতিবেদন জমা দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোঃ শামসুল আলম।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তদন্ত কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত রিপোর্টের পর্যালোচনা করে ফুলপরীর আবেদনে উল্লিখিত র‍্যাগিংয়ের নামে মানসিক ও শারীরিক অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। প্রাপ্ত সত্যতার ভিত্তিতে সানজিদা চৌধুরী অন্তরা (পরিসংখ্যান বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ: ২০১৭-১৮), হালিমা আক্তার ঊর্মি (চারুকলা বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ: ২০২০-২১), ইসরাত জাহান মিম (আইন বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ: ২০২০-২১), তাবাসসুম ইসলাম (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ: ২০২০-২১), মুয়াবিয়া জাহান (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ: ২০২০-২১)কে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিকতা বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

তাদেরকে আগামী ১ মার্চ ২০২৩ বেলা ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অন্তরাসহ যাদেরকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদেরকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের হল সংযুক্তি বাতিলের সুপারিশ কর্তৃপক্ষ বারাবর প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। 

একইসঙ্গে হালিমা আক্তার উর্মির বিবৃতিতে উল্লিখিত তার হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ধারণা, সেই মোবাইল ফোনে ফুলপরী নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ত্রিশ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে ৮০ পৃষ্ঠার অধিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। 

তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, রাত ১২টা থেকে আনুমানিক রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়। এর মধ্যে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত দোয়েল-১ রুমে নির্যাতন করা হয়েছে। তারপর সেখান থেকে বের করে ডাইনিং রুমে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়। 

তদন্ত প্রতিবেদনে বিবস্ত্র করার নির্যাতন এবং শরীরে আলপিন ফুটানোর বিষয়টিও উঠে এসেছে। 

আরও জানা যায়, বিস্তৃত তদন্ত প্রতিবেদন লেখা এবং সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই করার কারণেই একটু সময় লেগেছে। পুরো ঘটনার সারসংক্ষেপ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লিখিত আকারে জমা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ও সংযুক্ত রয়েছে। কোথায় কোন কোন ঘটনাগুলো ঘটেছে তার সত্যতাও পাওয়া গিয়েছে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, আমারা গতকালকই কেন্দ্রে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেই প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। তদন্তের গোপনীয়তার সার্থে কেউ সংশ্লিষ্ট আছে কি-না সেটা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, অন্তরা আমাদের সহ-সভাপতি কিন্তু বাকি কাউকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তারা কেউ আমাদের শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়।

সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, তদন্ত কমিটির কাছ থেকে আমরা যে প্রতিবেদন পেয়েছি তা গতকাল কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। ছাত্রলীগ তার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টতা পায়নি এমন কথা বলা যাবে না। আমরা প্রতিবেদন কেন্দ্রে পাঠিয়েছি সিদ্ধান্ত তারাই নিবে।

এ বিষয়ে হল তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আহসানুল হক বলেন, আমরা হল তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। সত্যতার আলোকে ৫ অভিযুক্তের আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে। এই হলের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টটা থাকবে না এই সুপারিশ করা হয়েছে।

উপ-উপাচার্য বলেন, “উপাচার্য মহোদয় আসলে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা বিষয়ক যে আইন কানুন আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের কোনো সদস্যকে অসম্মান করা বা লাঞ্ছিত করা কখনই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিধিবিধান আছে সেটা পর্যালোচনা করেই প্রতিপালন করা হবে। নিয়মশৃঙ্খলা সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমিও চাই সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।”

হল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরী বলেন, “এই সিদ্ধান্তে আমার সন্তুষ্টি- অসন্তষ্টির কিছু নেই। তাদের যা প্রাপ্য শাস্তি তারা সেটাই পাবে। তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে সেই অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।”

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি