ইসলামপুরে দারকি কারিগরদের দুর্দিন চলছে!
প্রকাশিত : ১৯:১৬, ২৬ অক্টোবর ২০১৮
খাল বিলের পানিতে ছোট মাছ ধরার ফাঁদ এর নাম ‘দারকি’। এবার বন্যা ও বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাই এবার খালে বিলে তেমন পানি হয়নি, এ কারণে দারকি বিক্রি করতে না পারায় কারিগরদের জীবন জীবিকায় দুর্দিন দেখা দিয়েছে । ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছে ইসলামপুর ও মেলান্দহ উপজেলার বীর হাতিজা গ্রামের প্রায় ৭ শতাধিক দারকি শ্রমিক।
জানা যায়, আবহমান গ্রাম বাংলার খাল-বিল, নদী-নালায় মাছ ধরতে বাঁশের শলাকা দিয়ে তৈরি এক প্রকার বিশেষ যন্ত্রের নাম চাঁই। চাঁইকে এ অঞ্চলের স্থানীয় ভাষায় দারকি বলা হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন নামেও এর পরিচিতি রয়েছে।
তাই শত কষ্টের মাঝেও ধার দেনায় পুঁজি খাটিয়ে বাপ- দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশাটি আঁকড়ে ধরে রাখছেন দারকি কারিগররা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বীর হাতিজা গ্রামটি ইসলামপুর পৌর এলাকা ও মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ ইউনিয়নে বিভক্ত। তবে উপজেলা ভিন্ন হলেও দুই গ্রামের প্রায় সকলেই পরস্পর আত্মীয়। এ গ্রামের ২’শ ৫০ পরিবারের প্রায় ৭ শতাধিক মানুষের জীবন জীবিকা চলে দারকি বুনন ও বিক্রির মাধ্যমে। ওই গ্রামের প্রায় সকলেই এ পেশার সাথে যুক্ত। ফলে গ্রামটি দারকি গ্রাম নামে পরিচিত। এ গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ি যেন দারকি তৈরির কারখানা। পরিবারের শিশু থেকে বৃদ্ধরাও সারাদিন দারকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটায়।
এখানকার তৈরি দারকি ঢাকা, বিক্রমপুর, কালিগঞ্জ, টঙ্গি, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ ও জয়দেবপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এর চাহিদা রয়েছে।
তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে বন্যা ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় দারকির তেমন চাহিদা নেই বাজারে। অনেক কষ্টে ধার-দেনা করে চলছে দারকি কারিগরদের সংসার।
ইসলামপুরের দারকি কারিগর মনোয়ারা বেগম (৫৫) জানান, একটি দারকি একজনে তৈরি করে না। একেকজন একেকটা অংশ তৈরি করে থাকে। কেউ তৈরি করে বাঁশের শলাকা, কেউ তা বুনন করে, আবার কারও নিপুঁন হাতে সুতোর গাথুঁনীতে দারকির পূর্ণতা পায়।
দারকি শ্রমিক নাজির উদ্দিন শেখ (৭০) জানান, বাঁশ, সুতা ও শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি দারকি তৈরিতে কমপক্ষে ১’শ ৫০ টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। এ বছর চাহিদা না থাকায় প্রতিটি দারকি মাত্র ২’শ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
শ্রমিক জালেহা বেগম জানান, এ বছর বৃষ্টি ও বন্যা কম হওয়ার কারণে মাঠে ঘাটে ও খাল-বিলে পানি নাই। তাই আমরা আমাদের কাজও নাই। ছেলে মেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় দারকি পেশার সাথে যারা জড়িত। এ পেশাটি ঐতিহ্যবাহী পেশা, কালের পরিবর্তনে এ পেশাটি হারিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তাদেরকে অতি দরিদ্র কর্মসংস্থান এর আওতায় আনতে পারি। এবং ভিজিএফ এর চাউল বিতরণ করা হবে তাদের মাঝে।
কেআই/এসি
আরও পড়ুন