ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের কোরবানি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৭, ৯ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১২:০০, ৯ আগস্ট ২০১৯

জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা। আমাদের দেশে এ দিনটি কোরবানির ঈদ হিসেবে পরিচিত। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী যারা ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নেসাবের মালিক হবেন, তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। নেসাবের মালিক হওয়ার অর্থ হলো সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ কিংবা সে পরিমাণ অর্থসম্পদের মালিক হওয়া। একইভাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা সে মূল্যমানের অর্থসম্পদের মালিকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর সুন্নাত হিসেবে কোরবানি দেওয়া হয়।

মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.) খোদাপ্রেমের নির্দশন ও পরীক্ষাস্বরূপ মিনার প্রান্তরে তাঁর কলিজার টুকরা সন্তান ইসমাঈল (আ.) এর গলায় ছুরি চালিয়ে ত্যাগ ও ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। বিশ্বময় রচিত হলো কোরবানির নতুন ইতিহাস। এ ব্যাপারে দয়াময় আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে ইরশাদ করেন, অতঃপর সে যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন পিতা ইবরাহিম (আ.) তাকে বললেন, হে আমার প্রিয় সন্তান! আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, তোমাকে জবেহ করছি; এ বিষয়ে তোমার অভিমত কী? ছেলে উত্তরে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যা নির্দেশ করা হয়েছে আপনি তা বাস্তবায়ন করুন।

ইনশাআল্লাহ! আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং জবেহ করার জন্য তাকে শায়িত করল,তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি স্বপ্নে যা দেখেছ তা সত্যে পরিণত করেছ। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে জবেহ করার জন্য এক মহান জন্তু দান করলাম। (সূরা সাফফাত, আয়াত ১০২)।

তবে আমরা এই ইতিহাস প্রায় ভুলতে বসেছি।  ধর্মীয় বিধান অনুসারে একাধিক পশু কোরবানি দেওয়া নিষ্প্রয়োজন। গরু, মহিশ, গয়াল, উট ইত্যাদি শ্রেণির পশু হলে সাতজন মিলে একটি এবং ভেড়া, ছাগল, দুম্বা শ্রেণির পশু হলে একজন ব্যক্তি একটিমাত্র পশু কোরবানি দিতে পারেন। অধিক অর্থের মালিক হলে অধিক সংখ্যক পশুর প্রাণ হরণ করতে হবে, এমন নির্দেশনা ইসলামে নেই। 

বিত্তবানদের প্রতি অধিক দান-খয়রাত করার নির্দেশনা ইসলামে আছে। কিন্তু যত বেশি সম্পদশালীই হোক, কোন মুসলমানের প্রতি একাধিক পশু কোরবানি দিতে হবে বলে কোন ধর্মীয় নির্দেশনা নেই। বর্তমান সমাজের বিত্তশালীরা কোরবানি নিয়ে একপ্রকার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। কেউ কেউ একটি বা দুইটি নয়, এক দুই শতটি পশু পর্যন্ত কোরবানি দিয়ে নিজেদের বৈভব-লীলা প্রচারে লিপ্ত হন। 
অনেকেই অধিক সংখ্যক পশু কোরবানি দেওয়ার বিষয়টি রীতিমত প্রচার করে নিজেকে শুধু জাতে তোলা নয়, জাতের চেয়ে এক ধাপ উপরে ওঠার টিকেট কিনতে চান। অনেকেই পশু কোবানির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে নিজেতে জাহির করে।

তথাকথিত এক শ্রেণিরবিত্তশালী রয়েছে, ঘুষ দুর্নীতি,প্রতারণা মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে সম্পদ সঞ্চিত করার উপায় নেই বলে তারা বিভিন্ন পূজা-পার্বণে মুক্ত হস্তে অর্থ খরচ করেন। এই শ্রেণির লোকেরা ইতোমধ্যে নিজ নিজ এলকায় নিজেকে দানবীর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেক হয়েছেন সমাজ সেবক। কোরবানি আসলে অবৈধ টাকা দিয়ে পশু কিনতে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়েন এক শ্রেনির সরকারি কর্মচারী। শিক্ষা অফিসের কেরানি, ভূমি অফিসের কানুনগো,সচিবালয়ের দফতরি, কাস্টমস অফিসের পিওন কিংবা পুলিশের কনস্টেবল থেকে শুরু করে অফিসের টপ বস বা কর্ণধার পর্যন্ত একাধিক পশু কোরবানির প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন।

এই সব কর্মকর্তা কর্মচারিদের মধ্যে আবার কতিপয় সর্বভূক রয়েছেন, যারা নিজ অর্থে বা ঘুষের অর্থে নয়, বরং জলজ্যান্ত কোরবানির পশুটিই মক্কেলের কাছ থেকে সরাসরি ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন। কোরবানির পশু ঘুষ হিসেবে পেয়ে তারা সেগুলো ঘটা করে কোরবানি দিয়ে নিজ এলাকার গরিব-মিসকিনদের খাওয়াইয়ে নিজেদের জন্য আখেরাতের পথ প্রসস্ত করেন। প্রজাতন্ত্রের সকল শ্রেণির সরকারি অফিসে এই শ্রেণির জীবগণ মহাদাপটে জনসেবা করেন। আমাদের এমন লোক দেখানো কোরবানি থেকে বের হয়ে আসা উচিত। কোরবানির ঈদকে ঘিরে অবৈধ অর্থে একাধিক পশু কোরবানির অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হোক। কোরবানি হল প্রকৃত ত্যাগ। এই ত্যাগ হতে হবে বৈধ বস্তুর উপর নির্ভেজাল বৈধ দখলি সত্বের ত্যাগ।

টিআর/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি