ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

ইসির প্রশিক্ষণের জন্য ৩৪ কোটি টাকা নাকচ করেছে অর্থ বিভাগ

আসিফ শওকত কল্লোল

প্রকাশিত : ২০:০২, ৯ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ২০:০৭, ৯ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় সংসদের শূণ্য আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) অতিরিক্ত ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার অর্থ প্রদানের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগ আজ (বৃহস্পতিবার) সিনিয়ার সহকারী সচিব মোঃ তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে ইসি প্রশিক্ষণের প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়ে প্রশিক্ষণ সিডিউল এর প্রতিটি প্রশিক্ষণের রিপরীতে যে সকল ব্যয় দেখানো হয়েছে সেগুলো অনুমোদনযোগ্য নয়। আরো বলা হয়েছে, এ সকল ব্যয় অর্ন্তভূক্ত করায় প্রশিক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ।

পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, বিশেষ কার্ষক্রমে অন্যান্য মনিহারি খাতে বরাদ্দকৃত ৩০ কোটি টাকা হতে ২০ কোটি টাকা চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেটে প্রশিক্ষণ খাতে পুনঃউপযোজনের মাধ্যমে সংস্থান করা যাবে মর্মে নির্বাচন কমিশন মত প্রকাশ করে।

অর্থ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেছেন, আগে ১৮ জন উর্ধ্বতণ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণের নামে প্রতিজন প্রায় ২ কোটি টাকা তহবিল তসরুফ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রশিক্ষনের নামে অর্থ লুটের অভিযোগ উঠেছে। এমন কি বিগত দু’টি নির্বাচনের প্রশিক্ষণ বাবদ ১২০ কোটি টাকা নামে মাত্র খরচ করা হয়েছে।

অর্থ পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে ,পুনঃ উপযোজনের মাধ্যমে অর্থ কোনভাবেই অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। এ অর্থ চলতি ২০১৯-২০ সালের অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটে সংশ্লিষ্ট কোডে সমন্বয় করতে হবে। অব্যয়িত অর্থ যথাসময়ে সরকারি কোষাগারে সমর্পণ করা হবে।

সূত্র আরও জানায়, চলতি বাজেটে এখন পর্যন্ত রাজস্ব কাঙ্খিত হারে অর্জন হয়নি। ব্যয় মেটাতে গিয়ে সরকার বেশি মাত্রায় ব্যাংক ঋণ করছে। যে কারণে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতি অনুসরণ করছে অর্থ বিভাগ। চলতি অর্থবছর ৪৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ গ্রহণের কথা।

গত দুই মাস আগে নির্বাচনের প্রশিক্ষণের নামে অর্থ লুটের অভিযোগ উঠে। বিগত দু’টি নির্বাচনে প্রশিক্ষণ বাবদ ১২৩ কোটি টাকা নামেমাত্র খরচ করা হয়েছে। বিশেষ বক্তা, কোর্স উপদেষ্টা, কোর্স পরিচালক ও কোর্স সুপারভাইজার নামে ভাউচার প্রস্তুত করে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইসি নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) বিরুদ্ধে। ‘বিশেষ বক্তা’, ‘কোর্স উপদেষ্টা’ ও ‘কোর্স পরিচালক’ হিসেবে প্রায় ইসি সচিবালয়ের সিইসিসহ ১৮জন প্রায় দুই কোটি টাকা সম্মানী নিয়েছেন।

ইসির প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন, জাতীয় সংসদের শূন্য আসনে উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকারের কয়েকটি স্তরের নির্বাচনি প্রশিক্ষণসহ ১৫ ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য জানুয়ারী ২০২০ মাস হতে ৩১ র্মাচ ২০২০ পর্ষন্ত সময়ের জন্য বাজেটে সংস্থানকৃত ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকার অতিরিক্ত ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। 

চিঠিতে আরও উল্লেখ্য করা হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা ইভিএম এর প্রশিক্ষণ বেশি অর্থ প্রয়োজন রয়েছে তার পরিমাণ হচ্ছে- ১২ কোটি ৯২ লাখ টাকা আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এ অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। মাঠ পর্যায়ে ই-ফাইলিং বিষয় প্রশিক্ষণ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। নিকস, নিপ্রই ও মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের অফিস ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ বাবদ রাখা হচ্ছে দুই কোটি ২৬ লাখ টাকা।

এদিকে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে অনড় রয়েছে ইসি। ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য এই ভোটযুদ্ধে অংশ নিলেও শুরু থেকেই ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করছে দেশের প্রধান রিরোধীদল বিএনপি। এরই মধ্যে ইসি কর্মকর্তা সাইদুল সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় ১৫ হাজার ভোট কক্ষে ব্যবহারের জন্য ৩৫ হাজার ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

একইদিন ‘ইভিএমে বিশ্বাসযোগ্য ফল পাওয়া অসম্ভব’ দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে সরকারের কারসাজি করার ইচ্ছা পূরণেই ইসি ইভিএম ব্যবহারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’

এর আগে ২২ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার দিনই দুই সিটির সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। পরে ২৫ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহায়ক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনীতে তিনি বলেন, সবাই যদি বলে ইভিএমে নির্বাচন করা যাবে না, তাহলে সেটা করব না।

৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ডিএনসিসিতে আসন্ন নির্বাচনে এক হাজার ৩৪৯টি ভোটকেন্দ্রের সাত হাজার ৫১৬টি কক্ষে ভোট নেওয়া হবে। মোট ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

আর ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ডিএসসিসির এক হাজার ১২৪টি ভোটকেন্দ্রের পাঁচ হাজার ৯৯৮টি কক্ষে ভোট নেওয়া হবে। সেখানে মোট ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন ভোটার রয়েছেন।

তফসিল অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ হবে আগামীকাল ১০ জানুয়ারি।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি