ঈদের ছুটিতে ভারত যেতে বেনাপোলে উপচে পড়া ভিড়
প্রকাশিত : ১৪:০৬, ১৬ জুন ২০২৪
ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি ও সাপ্তাহিক টানা ৫ দিনের ছুটিতে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত ভ্রমণে বেড়েছে পাসপোর্টধারীদের চাপ। চিকিৎসা, ব্যবসা, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে কেউ যাচ্ছেন ভারতে। আবার অনেকে আসছেন বাংলাদেশে।
তবে প্রতিবারের মতো এই যাতায়াতের ক্ষেত্রে এবারও কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। রয়েছে দালাল শ্রেণির হয়রানির অভিযোগ। বর্তমানে দুই পাশের ইমিগ্রেশের কার্যক্রম সারতে এক একজনের ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগছে।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সেবার মান বাড়াতে তারা কাজ করছেন। হয়রানি এড়াতে যাত্রীদেরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ১২ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত চার দিনে মোট ৩০ হাজার ৪৮০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে প্রবেশ করেছেন ২০ হাজার ১৩৭ জন। আর ভারত থেকে ফিরেছেন ১০ হাজার ৩৪৩ জন।
প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করে থাকে। ভ্রমণ কর বাবদ বাংলাদেশ সরকারের বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ও ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকারের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আয় হয়। ভ্রমণের ক্ষেত্রে বছরে বছরে এ অর্থের পরিমাণ দুই দেশে বাড়ালেও সেবার মান বাড়ানোর দিকে লক্ষ্য নেই।
যাত্রীরা বলছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন সকালের জায়গায় ভোর ৪টার মধ্যে বন্দরে ভিড়ছে দূরপাল্লার সব যাত্রীবাহী বাস। তবে যাত্রীরা দ্রুত পৌঁছালেও বন্দর ভোর সাড়ে ৬টায় খোলায় এসব যাত্রীদের মশা-মাছির উপদ্রব সয়ে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় সড়কের উপর লাইনে দাঁড়িয়ে। অসুস্থ হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।
তবে বাংলাদেশ অংশের কার্যক্রম কোনো রকমে শেষ হলেও ভারত অংশে জনবল সংকটে আগের মত পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন যাত্রীসেবা না দিয়ে বারবার বিএসএফের তল্লাশির কারণে দেড়ি হচ্ছে বলে জানাচ্ছে। আসলে ইমিগ্রেশনটা নিয়ন্ত্রণ করে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছেন বিএসএফের কাছে।
বেনাপোল নো-ম্যান্সল্যান্ডে পলাশ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘এবার পরিবার নিয়ে ভারতে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি। কিন্তু এখানে তিন ঘণ্টা তীব্র গরম আর রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। লাইন কমছে না। পেট্রাপোল চেকপোস্টে অফিসাররা ধীরগতিতে কাজ করায় সময়টা বেশি লাগছে। এখনও কত সময় লাগবে বলতে পারছি না।’
গোলাম মোস্তফা নামে আরেক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শেষ করতে মাত্র কয়েক মিনিট লাগলেও পেট্রাপোল নো-ম্যান্সল্যান্ডে রৌদ্রের মধ্যে দুই ঘণ্টার ওপরে দাঁড়িয়ে আছি। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে কখন ঢুকবো বলতে পারছি না।’
পাসপোর্টযাত্রী আরতি বালা সাহা বলেন, ‘ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশ সরকার নিচ্ছে ১০৫৫ টাকা ভ্রমণ কর ও ভিসা ফি বাবদ ভারতীয় দূতাবাসগুলো নিচ্ছেন ৮৫০ টাকা। ভিসার চেয়ে ভ্রমণ কর বাড়লেও সেবা বাড়েনি যাতায়াতে। বন্দরের কার্যক্রম ভোর ৫টার মধ্যে শুরু হলে দুর্ভোগ অনেকটা কমবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশের ইনচার্জ বাদল চন্দ্র রায় জানান, ঈদে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। ভোগান্তি কমাতে দালাল শ্রেণির কাছে পাসপোর্ট না দিতে যাত্রীদের বলা হয়েছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদুল আজহার ছুটিতে চার দিনে ৩০ হাজার ৪৮০ জন যাত্রী দুই দেশের মধ্যে আসা-যাওয়া করেছেন। স্বাভাবিক সময়ে এ সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৫০০ জনের মধ্যে থাকে। তবে এবার রেকর্ডসংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করেছেন। যাদের অধিকাংশই ঈদ উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটির কারণে ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য ভারতে গমন করছেন।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ভারতে যায় সাড়ে ৩ হাজারের মতো যাত্রী। ঈদের ছুটির আগে (১২ জুন) থেকে এবার প্রতিদিন ভারতে যাচ্ছেন সাড়ে ৬ হাজারের বেশি যাত্রী। যাত্রী সেবা বাড়াতে নানান পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে জায়গা অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকেও সেবা বাড়াতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এএইচ
আরও পড়ুন