ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

আইসিসিবি ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয় 

উচ্চ প্রবৃদ্ধির একটি পূর্বশর্ত হচ্ছে বেগবান বিনিয়োগ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:১০, ১৪ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২০:৫৩, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ব প্রবৃদ্ধির বড় চালিকাশক্তি হবে HSBC এর বিশ্ব প্রতিবেদন “the world in 2030” তে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে সেই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আকারের দিক থেকে ফিলিপিনস, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মত হবে। বর্তমানে আকারের দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৪২ তম অবস্থান রয়েছে এবং ২০৩০ সালে এটা ২৬তম বড় অর্থনীতি হবে।   

লন্ডন ভিত্তিক ব্র্যান্ড ফাইনান্স “Nation Brands 2018” এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্র্যান্ড ভ্যালুতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৯তম এবং এর ব্র্যান্ড ভ্যালু ২৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা গত বছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশী। প্রতিবেদন অনুযায়ী এটা আর্থ-সামাজিক উদ্দীপনাকে বোঝায়।  

বিগত দশ বছর ধরে বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের উপরে রয়েছে এবং বিগত দু’বছরে এ হার আরও বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৮৬ শতাংশ। এটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রকল্প বাস্তবায়ন সময় কমিয়ে আনতে পারলে বাংলাদেশ খুব সহজেই ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারত ফলে প্রকল্প ব্যায়ও কমে আসত।

সরকার বিভিন্ন বড় প্রকল্প হাতে নেয়ার ফলে গত দু’বছরে সরকারী খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। কিন্তু একইহারে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়েনি। প্রায় এক দশক ধরে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগের হার জিডিপির ২১-২৩ শতাংশের মধ্যে আটকে আছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার অনুযায়ী বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ৩৫ শতাংশ থাকা আবশ্যক। অনেক ASEAN দেশেরই বিনিয়োগ জিডিপির ৩৫-৪৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে এবং সেই সমস্ত দেশ উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন যে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, বন্দরে ভিড় জমে থাকা এবং অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ থাকছে না এবং কাংখিত বিনিয়োগ দেশে আসছে না। বিদ্যমান বিনিয়োগের উপর পুন: বিনিয়োগ হওয়ায় বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে।

অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে অনুমান করা হয়। অথচ এর মধ্যে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এসে থাকে। এ ঘাটতি পূরণের জন্য বিকল্প উৎস অনুসন্ধান প্রয়োজন। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো। কেননা বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বেসরকারী খাতের বিনিয়োগকারীদের উত্তরোত্তর প্রতিশ্রুতি, উন্নততর অবকাঠামো ব্যবস্থা, উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং তৎপর সরকারী সংস্থাসমূহ দেখতে চায়।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ “Ease of Doing Business” সূচক অনুযায়ী ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৭৬তম অবস্থানে রয়েছে, যা দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন (ভুটান ৮১, শ্রীলংকা ১০০ এবং ইন্ডিয়া ৭৭)। সুতরাং বিদেশী বিনিয়োগ এবং বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে এ সূচকে অবস্থান উন্নত করা অত্যন্ত জরুরী।

বাংলাদেশ ইনভেষ্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) কর্তৃক বহুল কাংখিত“One Stop Service” চালু করার জন্য সরকার একটি নতুন আইন পাশ করেছে। এ পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই প্রশংশার দাবী রাখে এবং এর দ্রুত বাস্তবায়ন হলে বিদেশী বিনিয়োগ ও বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়বে। এছাড়াও বিদেশী ও বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার বিশেষায়িত অর্থনেতিক জোন করেছে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের জমির সংকট মেটানোর জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে ৭৬টির জমি লীজ নিয়েছে।

বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত সূচক পূরণ, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন খাত যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষত বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ, আধুনিক ও কার্যকর বিমানবন্দর, সমূদ্রবন্দর ও রাজপথ এবং বড় প্রকল্পসমূহের সময়মত ও সাশ্রয়ীমূল্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

এসি  
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি