উত্তরবঙ্গে জেঁকে বসেছে শীত
প্রকাশিত : ১১:৫২, ৫ জানুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১৩:৩০, ৫ জানুয়ারি ২০১৯
উত্তরবঙ্গে জেঁকে বসেছে শীত। খুবই কষ্টে আছেন দরিদ্র শীতার্ত মানুষ। এসব দরিদ্র মানুষের প্রায় সবারই বাড়িঘর ভাঙাচোরা। তাদের কাঁচা ঘরের বেড়া দিয়ে হন হন করে হিমেল হাওয়া প্রবেশ করে। এসব মানুষের অধিকাংশই অসহায় দুর্বল। বয়সের ভারে অনেকেই কাজ করতে পারেন না। আবার অনেকের পরিবারই বড়। সেসব পরিবারের ৭-৮ জন সদস্যের একজন মাত্র আয়-রোজগার করে। সেই একজনের দিনমজুরি বা রিকশা টানার আয় দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। এ শীতে তাই ওই সব মানুষের ভীষণ কষ্ট! একটা কম্বলের আশায় তারা এখানে সেখানে ছুটে বেড়াচ্ছে। অনেকেরই লেপ কেনার সঙ্গতি নেই। কারণ লেপের দাম বেড়ে যাওয়ায়, দেড় দুই হাজার টাকার নিচে কোনো লেপ পাওয়া যায় না। দরিদ্র মানুষের পক্ষে ওই টাকা সঞ্চয় করে লেপ কেনা সম্ভব নয়।
এদিকে উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। সঙ্গে আছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও কনকনে বাতাস, যা জনজীবনে ভোগান্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষজনকে। কোথাও কোথাও শীত এতটাই জেঁকে বসেছে যে অনেকেই কাজের জন্য বাইরে যেতে পারছে না। বাড়িতে বসেও অবশ্য শীতের পরোক্ষ প্রভাব থেকে রেহাই পাচ্ছে না অনেকে। আগুন পোহাতে গিয়ে অনেকেই দগ্ধ হচ্ছে; এদের বেশির ভাগই নারী। এ ধরনের ঘটনায় ইতিমধ্যে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই নারীর মৃত্যুও হয়েছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের সাধারণ কৃষক, দিনমজুর ও সুবিধাবঞ্চিত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ কনকনে শীতে অতি কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, গাইবান্দা, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর ও রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার জনপদ কনকনে শীতে কুঁকড়ে গেছে। সেই সঙ্গে কোন কোন স্থানে বইছে হাল শৈত্যপ্রবাহ।
শীতের কারণে শীতকালীন অসুখ-বিসুখ জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশির ভাগই আক্রান্ত হচ্ছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষেরা। অর্থাভাবে ওষুধ কিনতে পারছে না। যদিও শীতের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা কম তবুও কনকনে শীতে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী মারা যাচ্ছে। কিছু পোল্ট্রি খামার বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানান, কয়েক দিন ধরে সেখানকার তাপমাত্রা ছয় থেকে সাত ডিগ্র্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হতে না পারায় শীত জেঁকে বসেছে। এই অবস্থা আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
অপরদিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, আগুন পোহানোর সময় দগ্ধ হয়ে গত বছর ১২ জনের মৃত্যু হয়। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৫ জন চিকিৎসা নিতে এসেছে।
কুড়িগ্রামে গত দুই দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় শীতের কাপড় না থাকায় হিমশিম খাচ্ছে হতদরিদ্র পরিবারগুলো। কৃষকরা মাঠে নামতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে বোরো রোপণ। এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশার কারণে অনেক বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইয়াসির আরাফাত জানান, ত্রাণ অধিদপ্তর থেকে আসা ৪১ হাজার কম্বল উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গতকাল শুক্রবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সাড়ে সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সবমিলিয়ে এ বছর অন্যান্য বছরের মতোই শীতের তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সরকারের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পপতিরা শীত বস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রাখলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
এসএ/
আরও পড়ুন