ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

এই মাথার খুলিই কি মানুষের পূর্বপুরুষ?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৯, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্রায় ৩৮ লাখ বছর আগের একটি মাথার খুলি খুঁজে পেয়েছেন ইথিওপিয়ায় গবেষকরা। এটি প্রথম দিকের মানুষের মতো দেখতে এপ প্রজাতির পূর্বজ বলে মনে করা হচ্ছে।

এপ প্রজাতির বানর থেকে মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার বিবর্তন প্রক্রিয়ার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে নতুন এই নমুনাটির বিশ্লেষণ।

নতুন মতবাদ বলছে, লুসি নামে এপ প্রজাতির বানর থেকে প্রথম মানুষের উৎপত্তি হওয়ার যে মতবাদ প্রচলিত আছে তা আবার বিবেচনা করার অবকাশ আছে।

ন্যাচার জার্নালে এই আবিষ্কারটি সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ইথিওপিয়ার আফার রাজ্যের মিল্লা জেলার মিরো দোরা এলাকায় মাথার খুলিটি খুঁজে পান অধ্যাপক ইয়োহানেস হাইলি সেলাইসি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়োর ক্লিভল্যান্ড মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি-এর সঙ্গে যুক্ত এই বিজ্ঞানী বলেছেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গেই জীবাশ্মটির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন।

অধ্যাপক হাইলি সেলাইসি বলেন, মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে পরিচিত এপ প্রজাতির এ পর্যন্ত পাওয়া নমুনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে এটি।

ওই প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম অস্ট্রালোপিথিকুস আনামেনসিস- সবচেয়ে পুরনো অস্ট্রালোপিথিসিন যা প্রায় ৪২ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে বাস করতো।

ধারণা করা হয় যে, এ. আনামেনসিস ছিল আরো উন্নত প্রজাতি যা অস্ট্রালোপিথিকুস আফারেনসিস নামে পরিচিত তার সরাসরি বংশধর।

এই উন্নত প্রজাতিটি প্রাথমিক মানুষের প্রথম জেনাস বা বর্গ বা দল যা হোমো নামে পরিচিত ছিল, তাদের পূর্বজ। বর্তমানে বেঁচে থাকা মানুষের বর্গকেও হোমো বলা হয়।

১৯৭৪ সালে আবিষ্কার হওয়া প্রথম আফারেনসিস কংকাল নিয়ে বেশ আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। তার নাম দেয়া হয়েছিলো লুসি।

বিটলসের বিখ্যাত গান ‘লুসি ইন দ্য স্কাই উইথ ডায়মন্ডস’ খননের সাইটে বাজার সময় কংকালটি আবিষ্কার করা হয়েছিল বলে সেটির এমন নাম দিয়েছিলেন গবেষকরা।

আর নতুন ধারণাটি সামনে আসে আগের বিবর্তনের ধারণাটির পুনর্ব্যাখ্যা থেকে। নতুন জীবাশ্মটিতে আগে আবিষ্কার হওয়া ৩৯ লাখ বছর পুরনো মাথার খুলির অবশিষ্টাংশের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ওই অবশিষ্টাংশকে আনামেনসিস নামে ধরা হয়েছিল।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি আসলে আফারেনসিসের দেহাবশেষের অংশ। তার মানে হচ্ছে, এই প্রজাতির ইতিহাস আরো গভীর।

বর্তমানে ধারণা করা হচ্ছে যে, দুটি প্রজাতিই একসঙ্গে বেঁচে ছিল প্রায় এক লাখ বছর ধরে। যা ধারণা করা হচ্ছে তা হল- আনামেনসিসের ছোট একটি দল অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে পড়ে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এগুলো বিবর্তিত হয়ে আফারেনসিসে পরিণত হয়।

আনামেনসিস নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই দুই প্রজাতি কিছু সময়ের জন্য হলে একই সময়ে বেঁচে ছিল।

নতুন এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাহলে এটি ধারণা দেয় যে, এপ প্রজাতির সঙ্গে অন্য আরো উন্নত প্রজাতিরও আসলে সমসাময়িক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এর ফলে প্রথম মানুষ হওয়ার বিবর্তনের অনেকগুলো উপায় আমাদের সামনে চলে আসে।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, যদিও এই ধারণা লুসি থেকে মানুষের হোমো বর্গের সৃষ্টি হওয়ার মতবাদকে বাতিল করে দেয় না, কিন্তু এটি এই ধারণার সঙ্গে আরো কয়েকটি প্রজাতির নাম সংশ্লিষ্ট করেছে।

অধ্যাপক হাইলি সেলিইসি একমত প্রকাশ করেন যে, কোন প্রজাতি মানুষের পূর্ব-পুরুষ তা নিয়ে ‘সব ধরণের পণ এখন বন্ধ’ হয়ে গেল।

তিনি বর্ণনা করেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে, মানুষের পূর্ব পুরুষ হিসেবে আফারেনসিসের নাম আসতো সবার আগে, কিন্তু আসলে আগের সেই অবস্থানে নেই আমরা। এখন আমাদেরকে ওই সময়ে বেঁচে থাকা সব প্রজাতিকেই বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে যে আসলে প্রথম মানুষের সঙ্গে কোনটির সবচেয়ে বেশি মিল ছিল।’

‘মিসিং লিংক’ এই শব্দ দুটিকে যখন নৃবিজ্ঞানীরা কারো কাছ থেকে বিশেষ করে সাংবাদিকদের কাছে থেকে শোনেন, তখন তারা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন। কারণ তারা এটি এমন একটি জীবাশ্মকে ব্যাখ্যা করতে এই শব্দ ব্যবহার করছে যা অর্ধেক এপ এবং অর্ধেক মানুষ।

আসলে মানব বিবর্তন চক্রের অনেক সূত্র রয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেরই এখনও কোনও সন্ধান মেলেনি।

আনামেনসিস হচ্ছে সম্প্রতি আবিষ্কার হওয়া সূত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নতুন যা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আধুনিক মানুষের বিবর্তন ব্যাখ্যা করার আসলে সরল কোনও রেখা নেই।

সত্য এর চেয়েও আরো অনেক জটিল এবং মজার। এটি বিবর্তনের এমন গল্প বলে, যা বিভিন্ন পরিবেশে মানুষের পূর্বপুরুষের বিভিন্ন ‘প্রোটোটাইপ’ নিয়ে ‘পরীক্ষা করে’।

আর এটা ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনও প্রজাতি যা জলবায়ু পরিবর্তন, বাসস্থান এবং খাদ্য সংকটের চাপ উপেক্ষা করে টিকে থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার পক্ষে শক্ত কোনও বৈশিষ্ট্য সামনে তুলে ধরতে না পারে।

(বিবিসি অবলম্বনে)


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি