একটি চিঠির রহস্য
প্রকাশিত : ২৩:১৩, ৩০ আগস্ট ২০২০
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে বিশ্বব্যাংক, আইএলও, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই- বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি, অর্থনীতি-কড়চা, Freedom for Choice প্রভৃতি।
অভিনব এক চিঠি। সেটাকে রহস্যজনক একটি আমন্ত্রণ পত্রও বলা চলে। বিয়ের এ নিমন্ত্রণ পত্রটি খুব নির্বাচিত ক’জনকে পাঠানো হয়েছিল। পত্রটি ছাপা নয় - হাতে লেখা। লিখেছিলেন আর কেউ নন, স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
না, তাঁর পুত্র বা কন্যাদের কারোরই কোন বিয়ের আমন্ত্রণপত্র এটি নয়। প্রথানুযায়ী তিনি অবশ্যই এমন আমন্ত্রণপত্র লিখতে পারতেন - সেটাই প্রত্যাশিত হতো। কিন্তু তিনি তাঁর নিজের বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছেন। তাতেও কোন অসুবিধে নেই, ঘনিষ্ঠ নির্বাচিত বন্ধু-বান্ধবকে লোকে বিশেষ করে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি অবশ্যই লেখে।
কিন্তু উপর্যুক্ত চিঠির রহস্যটা অন্য জায়গায়। চিঠির ভাষ্যটি একটু অদ্ভুত। তিনি নিজেকে অন্য এক ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে পত্রের প্রাপককে নিমন্ত্রণ করেছেন স্বর্গীয় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ীতে উক্ত ব্যক্তির (তিনি স্বয়ং) বিয়েতে উপস্থিত থাকার জন্যে।
চিঠির ভাষ্যে আছে, ‘আমার পরমাত্মীয় শ্রীমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহ হইবেক’। চিঠি শেষ করেছেন তাঁর অতি পরিচিত সই দিয়ে।
বর্তমানে দুর্লভ চিঠিটি প্রিয়নাথ সেনকে লেখা। বাংলা ১২৯০ সালের ২৪ অগ্রহায়ণ ভবতারিনী দেবীর (পরবর্তী কালের মৃণালিনী দেবী) সঙ্গে বিয়ে উপলক্ষ্যে কবিগুরু এ রকম চিঠি আরো কয়েকজনকে লিখেছিলেন।
চিঠিটিতে কয়েকটি অদ্ভূত বিষয় প্রতীয়মান। এক, প্রথম পুরুষে লেখা রবীন্দ্রনাথ তৃতীষ পুরুষে উল্লেখিত রবীন্দ্রনাথের বিয়ে উপলক্ষে নিজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে নিমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছেন। দুই, নিজে লিখেছেন, কিন্তু চিঠির মধ্যে পাত্রকে পরিচয় দিচ্ছেন ‘আমার পরমাত্মীয় শ্রীমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ বলে। তিন, চিঠির ওপরে লেখা’, আমার motto নহে’। এর মানে কি?
কিন্তু সব ছাড়িয়ে মোক্ষম প্রশ্ন হচ্ছে- এ রকমের অদ্ভূত পত্র তিনি কেন লিখেছিলেন? কেউ কেউ বলেছেন, ‘নেহাৎই হেঁয়ালী করার জন্যে তিনি এ রকম চিঠি লিখেছিলেন’। কারো কারো মতে, ‘সমস্তটাই উচ্চাঙ্গের রসিকতা হতে পারে’। অনেকেই বলেছেন, ‘এ চিঠির সবটাই রহস্যাবৃত প্রহেলিকা’।
আমার আবার মনে হয়, হয়তো এ বিয়ে রবীন্দ্রনাথ চান নি, এবং সেই প্রেক্ষিতে এ চিঠি এক পরিহাসমূলক শান্ত বিদ্রোহ।
কে বলতে পারে? ঐ রহস্যের জট খোলেনি আজও। কবে খুলবে, কে জানে? কিংবা আদৌ খুলবে কি?
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।