এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ১৫:১৬, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২২:২০, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই কথাটি সাম্প্রতিক সময়ে বহুল উচ্চারিত, বহুল শ্রুত। আমরা বলি, বিদেশিরাও বলে। আসলে এই কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এ্ই কথায় যে বাস্তবাতা প্রতিফলিত, তার জন্য আজ আমরা গর্বিত এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ নন্দিত । বস্তুত আর্থসামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশেরর অবস্থান আজ অভূতপূর্ব উচ্চতায় এবং যথেষ্ট স্বস্তির জায়গায়।
সংবিধানের আলোকে মানুষকে কেন্দ্র করে ন্যায়বিচার-ভিত্তিক উন্নয়নের পথ রচনার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার প্রথম বছরগুলোতে । চিত্র পাল্টে যায় ১৯৭৫-এর আগষ্ট মাসের পর অর্থাৎ স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি বিপথগামী ও চক্রান্তকারীদের দ্বারা সেই মহান নেতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর। দীর্ঘ সামরিক শাসনের সময় পর্যাক্রমে বাজার অর্থনীতিতে উত্তরণ ঘটানো হয়। ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ প্রবর্তিত কাঠামোগত সংস্কার-ঋণ গ্রহণের মধ্য দিয়ে নব্য উদারতাবাদে দেশটির প্রবেশ ঘটে। তবে এর বাস্তবায়ন জোরদার হয় ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে অর্থাৎ ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর। সেই থেকে নব্য-উদারতাবাদ এ দেশে শেকড় গাড়ে । তবে ১৯৯৬-২০০১ সময়ে বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য অন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীদের চাপ উপেক্ষা করে তদানিন্তন আওয়ামী লীগ সরকার কৃষিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভর্তুকি দিতে থাকে। ফলে কৃষি উৎপাদন দ্রুত বাড়তে থাকে এবং ২০০০ সাল নাগাদ খাদ্যশস্যে জাতীয়ভাবে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হয়।
উল্লেখ্য, ২০০১ /০২-২০০৮/৯ সময়ে জাতীয় উৎপাদনের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৬ শতাংশ। এরপর প্রবৃদ্ধি তরান্বিত হয় এবং ২০০৯ /১০-২০১৬/১৭ সময়ে প্রতি বছরই তা ৬ শতাংশ-এর অধিক এবং শেষ দু’বছরে প্রতি বছর ৭ শতাংশ-এর অধিক প্রবৃদ্ধি হয়। মাথাপিছু আয় ২-১৬/১৭ সালে ১,৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ছিল ২০০৫/০৬ সালে ৪৭৫ মার্কিন ডলার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্তি অর্জন করেছে।
তবে বাংলাদেশ এখনও একটি স্বল্পোন্নত দেশ। এই দেশগোষ্ঠী থেকে সাধারণ প্রক্রিয়ায় বের হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। জাতিসংঘ উন্নয়ন কমিটি প্রতি তিন বছর অন্তর বিবেচনায় বসে কোন কোন দেশ সেই তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার উপযুক্ততা অর্জন করেছে তা নির্ধারণ করার লক্ষ্যে। যে কোনো একটি স্বল্পোন্নত দেশ যদি পর সাধারণ প্রক্রিয়ায় স্বল্পোন্নত অভিধা থেকে মুক্তি পেতে পারে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে সেই উপযুক্ততায় না পৌঁছালেও ইতোমধ্যে দু’টি শর্ত পূরণ করেছে যথা অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও মানবদক্ষতার মানদন্ড। মাথাপিছু আয়ে খানিকটা পিছিয়ে আছে। তবে ২০১৮ সালে পরবর্তী মূল্যায়নের সময় বাংলাদেশ এক্ষেত্রেও উপযুক্ততা অর্জন করবে বলে আমার বিশ্বাস। অবশ্য যে-কোনো দু’টিতে উতরে গেলেই প্রাথমিক-উপযুক্ততা অর্জিত হয়। এরপর ২০২১ সালের মূল্যায়নে যদি এই উপযুক্ততা বহাল থাকে তাহলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়া ২০২৪ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ বের হতে পারবে। তবে বাংলাদেশ চাইলে ২০২১ সালে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে আসতে পারবে এবং তা করা উচিত বলে আমি মনে করি। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির ২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী মানব উন্নয়ন সূচকমান ০.৫৭৯ নিয়ে বাংলাদেশ এখন মাধ্য পর্যায়ে।
২০০৯-এর পর মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি উল্লিখিতভাবে বৃদ্ধি পাওয়া এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে (নিম্ন উল্লেখিত) উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়ার কারণ প্রধানতঃ একদিকে অনুকূল সরাকারি নীতি-সহায়ক ও অন্যান্য প্রণোদনা এবং অপরদিকে কৃষক; কৃষি, শিল্প ও অন্যান্য শ্রমিক; উদ্যোক্তা; ব্যবস্থাপক এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সকলের প্রচেষ্টা । অর্থাৎ যে পারিপার্শ্বিকাতা সরকার তৈরি করেছে তাতে সকলেই নিজ নিজ কাজে এগিয়ে যাবার সুযোগ পেয়েছেন।
সম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষিখাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। উপকরণে ভর্তুকি এবং অনেক বর্ধিত কৃষিঋণ (২০০৯/১০ সালে ১১,১১৭ কোটি থেকে ২০১৬-১৭ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৭,৬৪৬ কোটিতে )এবং কৃষি সম্প্রসারণে অন্যান্য সরকারি সহায়তা কৃষিই এই অগ্রগতিতে বিশদ ভূমিকা রেখেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবর্তিত প্রাকৃতিক বাস্তবতার (যথা: লবণাক্ততা, কম পানি, বেশি পানি সঙ্গে খাপ খায় এমন বেশ কয়েকটি ধান-এর উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। এগুলোর চাষ প্রয়োজনমতো সম্প্রসারিত হলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আরো।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী খাদ্যশস্য উৎপাদনে জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় এবং সবিজ উৎপাদনেও ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। কৃষি ছাড়াও গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। নারীরাও উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসছেন বিভিন্ন উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে । গ্রামীন অর্থনীতিতে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি গড়ে ১০/১১ কেজি চালের সমপরিমাণ। ১৯৮০-র দশকে দাবিই ছিল সাড়ে তিন (৩.৫) কেজি চালের সমপরিমাণ।
শিল্পায়নে অগ্রগতি ঘটছে। এক্ষেত্রে তৈরি পোশাক-এর অবস্থান অগ্রগণ্য । বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনে শিল্পখাতের অবদান ৩২.৪৮ শাতাংশ। শিল্পায়নকে তরান্বিত, বিকেন্দ্রায়ন ও ব্যাপক মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাবার এবং কর্মসংস্থান সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গত কয়েকবছর ধরে দেশের বিভন্নি স্থানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে।
এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সাম্প্রাতিক বছরগুলোতে প্রতিবছর রেকর্ড সৃষ্টি করে বাড়ছে এবং ১৯ এপ্রিল ২০১৭ এ ৩২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার-এ উন্নীত হয়। রেমিট্যান্স গত দুই বছর কিছুটা নিম্নমখী হলেও ২০১৬/১৭ সালে ১২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল; তবে ২০১৭/১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে পূর্ববর্তী বছরের একই সমযের তুলনায় ১২ শতাংশ বেড়েছে।
এখানে উল্লেখ্যযোগ্য যে, ২০১৫/ ১৬ সালে মোট রপ্তানি আয় ৩৪.৩ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৫ / ১৬ সালে মোট রপ্তানি আয় ৩৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার-এ উন্নতী হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে ৮২ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে। রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্রায়নের নীতি-সমর্থন রয়েছে। মূলস্ফীতি মোটামুটি গ্রহণযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে গত কয়েক বছর ধরে; ২০১৬/১৭ সালে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি প্রাথমিক মূল্যায়নে ৫.৪৪ শতাংশ। যা বাংলাদেশের মতো একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশের জন্য স্বভাবিক।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে উন্নতি লক্ষ্যণীয়। সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০০০/০১ সালে ৩,০০৩ মেগাওয়াট এবং ২০০৫/০৬ সালে ৩,৮১২ মেগাওয়াট ছিল। সরকারের বিশেষ নজর দেওয়ার কারণে ২০১০ সাল থেকে খুবই দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপদাদন বেড়েছে এবং ২০১৫/১৬ সালে সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ৯,০৩৬ মেগাওয়াট।
বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১-এ প্রতিশ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশ ইতোমধ্যে অনেকদূর এগিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্যকরভাবে তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সামাজিক বিভিন্ন সূচকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, দারিদ্র্য নিরসন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু ইর্ষনীয় অগ্রগতি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ এবং পৃথিবীর অন্যান্য অনেক উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেক বেশি। দারিদ্র্যের হার ছিল ২০০০ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ এবং ২০০৫ সালে ৪০ শতাংশ। বর্তমানে (২০১৬ সালে) এই হার নেমে এসেছে ২৪.৩ শতাংশ-এ। অতি দরিদ্র্যের হার ১২.৯ শতাংশ, যা ২০০৫ সালে ২৫.১ শাতংশ এবং ২০০০ সালে ৩৪/৫ শতাংশ ছিল। ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী একজন শিশু জন্মের সময় থেকে ৭১ বছর পর্যন্ত বাঁচার আশা করতে পারে, যা ছিল ২০০০ সালে প্রায় ৬৪ বছর এবং ১৯৯০/৯১ সালে ৫৬ বছর ।
শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রায় ৯৮ শতাংশ উপযুক্ত বয়সি ছেলে-মেয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ভার্তি হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যায়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে ঝরে পড়ার হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসছে। ২০১৬ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ে ১০.২ শতাংশ, যা ছিল ২০১০ সালে প্রায় ৩৯.৮ শাতাংশ এবং ২০০৭ সালে প্রায় ৫০.৫ শতাংশ। মেয়েদের শিক্ষায় অংশগ্রহণ দ্রুত বেড়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়েদের অনুপাত অর্ধেকের বেশি । উচ্চ শিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণ বেড়ে ৪০ শতাংশ-এ উন্নীত হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে আরো বাড়ছে। নারীশিক্ষায় সাম্প্রতিক দ্রুত উন্নতিতে ব্যাপক উপবৃত্তি ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা বৃত্তির অনেক অবদান রয়েছে। এছাড়া, বছরের প্রথম দিন সরকার ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষার্থীদের হাতে বেই পৌঁছিয়ে দিচ্ছে। গত বছর প্রায় ৩৬০ মিলিয়ন বই বিতরণ করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষায়ও অনেক অগ্রগতি হয়েছে।
সকল নাগরিকের বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে বসবাকরীদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার সচেষ্ট এবং ইতোমধ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পযায়ে সরকারি হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যসেবা সকলের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে একটি বড়ো সমস্যা ডাক্তাররা গ্রামে থাকতে চান না। সম্প্রতি সরকার এ বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম-এর Global Gender Gap Report ২০১৬-এ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ এশিয়ায় সবচেয়ে সফল দেশ। যে ১৪৫ দেশের তথ্য দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪ তম।
প্রায় ৩ (তিন) বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়সাপেক্ষে পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে করার সিদ্ধান্ত ছিল সাহসি ও যুগান্তকারী এবং এই সেতুর বাস্তবায়নও ইতোমধ্যে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
শেখ হাসিনার বসরকারের আরো কয়েকটি যুগান্তকারী অর্জনের উল্লেখ করতে হবে।ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা স্থলসীমান্ত চুক্তি ২০১৫ সালের জুন মাসে চূড়ান্তভাবে সম্পাদিত হয়। এছাড়া, মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে সাগরসীমা নির্ধারণের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনি লাড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের অনুকূল সমাধানপ্রাপ্তি একটি বিশেষ অর্জন।
নির্যাতিত হয়ে ২৫ আগষ্ট ২০১৭ থেকে এ পর্যন্ত পালিয়ে আসা মায়ানমারের নাগরিক প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এক উদার মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। সারাবিশ্বে এই পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বাংলাদেশে রয়েছেন এখন। এদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল থেকে আন্তরিক ও কার্যকর সহায়তা প্রয়োজন যাতে এ সকল মানুষ দ্রুত তাদের দেশে ফিরে গিয়ে নিরাপদ বসবাস করতে পারেন এবং যতদিন এদেশে থাকতে হবে ততদিন যাতে তাদের মৌলিক চাহিদা সন্তোষজনকভাবে নিশ্চিত হয়।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পরিচালিত এক গ্যালপ পোল থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশের মানুষ জরিপকৃত সব দেশের তুলনায় অধিক আশাবাদী অর্থাৎ এগিয়ে যাচ্ছে বলে তারা বিশ্বাস করছেন।
আমার বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন আর্থসামাজিক অগ্রগতির এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে থেকে ‘টেইক-অফ’ করতে পারে অর্থাৎ উন্নয়নের উচ্চতর সড়কে আরোহন করে দ্রুততর গতিতে এগিয়ে যেতে পারে। অবশ্য এগিয়ে চলা যে কোনো দেশ বা অর্থনীতিতে আগে থেকে বিদ্যমান থাকা কিছু সমস্যা থাকতে পারে এবং সময় সময় নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলো চিহিৃত করে কার্যকর সমাধানে সচেষ্ট হওয়া জরুরি। আবার টেকসই উন্নয়ন অভিযাত্রায় কিছু বিশেষ করণীয় রয়েছে। বাংলাদেশে এ যাবৎ অর্জিত উন্নয়ন সুসংহত করতে এবং টেইক-অফ ও টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কিছু বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। যেমন- টেকসই ও ত্বরান্বিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খাতওয়ারী দক্ষ জনবল তৈরিতে আরো জোরদার পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সরকার এযাবৎ অত্যন্ত সফল। তবে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ও শক্তি সঞ্চয়ে সচেষ্ট জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা যেন আর কথনও মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেদিকে সুস্থ চিন্তার সকল নাগরিককে সচেতন থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সেই সাথে প্রতারণা ও দখলদারিত্বসহ নানা অন্যায় পথে সম্পদ হস্তগতকারীদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জরুরি ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
ব্যাংকিংখাতে সংস্কার, আয় বৈষম্যহ্রাস, অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব ও পারি সমস্যা নিরসন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা সমাধানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তৎপরতা বৃদ্ধি, যথাসময়ে বাজেট বাস্তবায়নে নজরদারী-এসব বিষয়ে সরকার কক্রিয় রয়েছে। এ তৎপরতা জোরদার এবং অব্যাহত রাখা জরুরি।
দেশে উল্লেখযোগ্য আর্থসামাজিক অগ্রগতি হয়েছে এবং আরো হচ্ছে বলে আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই। আত্মতুষ্টির ফলে গাফলতি বাড়ে। সমস্যার চিহিৃতকরণ ও সামধান বাধাগ্রস্থ হয়। সুতরাং আত্মতুষ্টি ও গাফলতি সচেতনভাবে বর্জনীয়।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অনেক সময়, বিশেষ করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, সহিংসতার রূপ নেয়। ২০১৮ সালের শেষ দিকে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে এ বিষয়টির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে । সাধারণ মানুষের ক্ষতি করা এবং তাদের জান-মাল অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দেওয়ার রাজনীতি কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। এই সম্ভাবনা যাতে বাস্তবে রূপ লাভ না করে সেদিকে আমাদের সকলকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
এম / এআর