‘মুশকিল আহসান’ হয় তদবিরে
এনআইডি সংশোধনে ভোগান্তির শেষ নেই
প্রকাশিত : ১৬:৫২, ৬ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৭:১৭, ২১ নভেম্বর ২০১৭
শাহ মো. মর্তুজ আলী। বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে। জরুরিভিত্তিতে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি)বয়স সংশোধন করা দরকার। তার এনআইডি নম্বর ১৯৬৯৩৬১১১১১২১৬৯৬। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। নিয়মানুযায়ী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন এনআইডি পেয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এরইমধ্যে ১ বছর ১১ মাস কেটে গেছে। এনআইডি সংশোধনের কুল-কিনারা নেই। প্রতিনিয়ত হবিগঞ্জ জেলা নির্বাচন কমিশন (এনআইডি) শাখায় কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে ঘুরে কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না মর্তুজ আলী। কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে ইসির এনআইডি শাখায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এতেও কোনো লাভ হয়নি। এনআইডি শাখার কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৬ সালে যারা আবেদন করেছেন তাদের সবগুলো আবেদন বাদ দেওয়া হয়েছে। এমন কথা শুনে মর্তুজ কর্মকর্তাদের কথামতো ফের আবেদন করেন। তাতেও এনআইডি হাতে পাননি মর্তুজ।
শুধু মর্তুজ নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ প্রতিনিয়ত এভাবেই এসে এনআইডি কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। সেবা প্রদানের কথা বলে এনআইডি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হলেও এখন রীতিমত তা দুর্ভোগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটা তো গেল জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স সংশোধন নিয়ে হয়ারনির গল্প।
এর চেয়ে আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নতুন স্মার্ট কার্ড সংশোধন বা স্থানান্তরের জন্য যারা নির্বাচন কমিশনে আসছেন তাদের। এমন ব্যক্তিদের অসহায়ত্বের কোনো শেষ নেই। যারা নতুন স্মার্ট এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আসছেন। তাদের দেওয়া হচ্ছে আগের মতো ননস্মার্ট কার্ড। এনআইডি সংশোধনের জন্য অনলাইন সেবাদানের কথা থাকলেও তেমন কাজ হচ্ছে না। তবে এনআইডি সংশোধনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলছে কিছু টাকা ও নামদামি ব্যক্তির সুপারিশে। এই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য বড় সিন্ডিকেট হিসাবে কাজ করতে অফিসের পিয়ন, অফিস সহকারী ও এনআইডি শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তাদের কাছে টাকা ধরিয়ে দিলে ‘মুশকিলের আহসান’ মেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনআইডি শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, শুধু কর্মকর্তারা কেন, স্বয়ং নির্বাচন কমিশনাররাও রোজ সুপারিশ পাঠিয়ে থাকেন। এছাড়া দেশের নামদামি ব্যক্তিদের থেকে প্রতিনিয়ন আসে তদবির।
ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এখন এনআইডি সংশোধনের সুযোগ কম। এছাড়া কিছু বিষয় সংশোধনের ক্ষমতা থাকে এনআইডি প্রধান পরিচালকের কাছে। এনআইডিতে ৫ বছরের উপরে বয়স সংশোধনের জন্য এনআইডি প্রধান পরিচালকের কাছ থেকে সুপারিশ নিতে হবে। যে কারণে সময়টা একটু বেশি লাগে। এছাড়া তড়িঘড়ি করে স্মার্টকার্ড বিতরণ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কারণে সেবাগ্রহীতাদের আগ্রহ বেড়েছে। আর এ সুযোগই নিচ্ছে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন (ঢাকা জেলা) জাহাঙ্গীর আলম ইটিভি অনলাইনকে বলেন, নাম সংশোধনের জন্য এ যাবত যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে থেকে যারা সরকারি চাকরি করে শুধু তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন করা হয়েছে। আর বাকি সব আবেদন বাতিল করা হয়েছে। যাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে তারা আবেদন করলেও কাজ হবে না। এছাড়া জনবল সংকটের কারণে প্রতিদিন যেভাবে আবেদন জমা পড়ে সেভাবে কাজ করা সম্ভব হয় না। আর একজন চাইলেই এনআইডি সংশোধন করা সম্ভব নয়।
তদবিরের বিষয় জানতে চাইলে ইসির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ ধরনের অভিযোগ এখনো পাইনি। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির উপ পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, প্রতিদিন সারাদেশ থেকে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার আবেদন জমা পড়ে। আমরা সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ শ’ আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারি। আর বাকিটা জমে থাকে যে কারণে একটু সময় লেগে যায়।
/ এআর /