ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

এমপিওর নাম করে কোটি টাকার প্রতারণার ফাঁদ

প্রকাশিত : ১৪:০৫, ২০ আগস্ট ২০১৮ | আপডেট: ১৮:১৬, ২০ আগস্ট ২০১৮

অনেক আন্দোলন সংগ্রাম ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ও শিক্ষক এমপিওভুক্তির কাজ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি সিন্ডিকেট দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। প্রতারকদের টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকার-বেসরকারি জাতীয়করণ ও এমপিওভুক্তি করণের বিবৃতির দেওয়ার পর থেকেই একটি অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে উঠে। সিন্ডিকেট সদেস্যের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের কাজ বিভিন্ন ভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বিভিন্ন কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। প্রতারকরা এতটাই কৌশলী যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে একের পর এক জাল চিঠি ও আদেশ-নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বরাতে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানে ভুয়া নির্দেশ বা চিঠি যাচ্ছে। নির্দেশনায় ব্যবহারি স্মরক নম্বর ও কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে এসব পাঠানো হচ্ছে। এমনকি চিঠিতে এমনকিছু কর্মকর্তার না উল্লেখ করা হচ্ছে সেই ব্যক্তির নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয় নেই। এমন চিঠি শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয় শিক্ষামন্ত্রণালয়ও পাঠানো হচ্ছে। শুধু চলতি মাসে ভুয়া ৮টি চিঠি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠানো হয়েছে।

এ অবস্থা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্তক করতে ২৬ জুলাই নিজেদের ওয়েবসাইটে একদিনে দুটি সতর্ক বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি)। তবে এই সিন্ডিকেটের কোনো সদস্য এখনও ধরা পড়েনি। তবে অনেকেই ধারণা করছেন মন্ত্রণালয় ও মাউশিরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা  জড়িত থাকার কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে প্রতারকরা ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, মন্ত্রণালয়ের কোনো আদেশ, নির্দেশ পেয়ে সন্দেহ হলে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা যেন অবশ্যই যাচাই করে নেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি আদেশ, নির্দেশ নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। সেখান থেকেও সবাই যাচাই করে নিতে পারেন। তিনি বলেন, চিঠিপত্র, এসএমএস বা অন্য কোনোভাবে কেউ টাকা-পয়সা চাইলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পুলিশকে তা জানিয়ে দিন। আমাদেরও জানান।

সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ ও নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কথা বলে প্রতারকচক্র মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এর আগে গত বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য তালিকাভুক্ত করার কথা বলে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। সেবারও মন্ত্রণালয় কেবল গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায় এড়িয়েছে।

যেভাবে প্রতারণা: শিক্ষকরা জানান, এবারের প্রতারণা শুরু হয়েছে ১৫ জুলাই থেকে। সারাদেশের সাড়ে সাত হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সোয়া লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এ মুহূর্তে এমপিওভুক্তির আশায় চাতক পাখির মত অপেক্ষা করছেন। ঠিক সে সময়ই হাজার হাজার বেসরকারি স্কুল-কলেজে ভুয়া চিঠি পাঠিয়ে তাদের অনলাইনে তালিকাভুক্ত হতে এবং ইউজার আইডির পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করতে বলা হয়।

এজন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট নম্বরও দেওয়া হয় এবং শিক্ষক প্রতি দুই হাজার টাকা করে পাঠাতে বলা হয়। এরইমধ্যে এ প্রক্রিয়ায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে একটি প্রতারকচক্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্টের ভুয়া স্বাক্ষরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পত্র প্রেরণ করেছে। পত্রে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট), Md. Monuar Hossain A/C No: ৭০১৭০১৯৬২২০৭৬-তে ২০০০ টাকা জমা দিয়ে User ID ও Password সংগ্রহের জন্য বলা হয়েছে। এর সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।`

এ বার্তায় এ ধরনের প্রতারকচক্র থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাবধান থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, `এমপিওভুক্তি-সংক্রান্ত নির্দেশাবলি এ বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (www.shed.gov.bd) প্রকাশ করা হয়। কেবল তার ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি।

সূত্র জানায়, নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার নামে মন্ত্রণালয়, মাউশি ও মাঠ পর্যায়ের একশ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং দালালদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটই জাতীয়করণ ও এমপিওভুক্তকরণের নামে সারাদেশ থেকে নানা কৌশলে টাকা-পয়সা আদায় করছে।

উল্লেখ্য ১২ আগস্ট ২৭১টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের গেজেট হয়। আরও ৪০টি কলেজের গেজেটভুক্তি মামলাসহ নানা কারণে আটকে আছে। আর নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া হয়েছে গত ৫ থেকে ১৮ আগস্ট। এগুলো এখন সরকারের বিবেচনাধীন।

টিআর/ এআর

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি