ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

এরশাদকে মানসিকভাবে দুর্বল করা হয়েছে: সাবেক স্ত্রী বিদিশা

প্রকাশিত : ১৪:৫৭, ৬ মে ২০১৯

শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। অনেক কিছু থেকেও কিছুই নেই আজ। মৃত্যু শয্যায় আজ পাশে আপন কেউ নেই। উনাকে মানসিকভাবে এত দুর্বল করা হয়েছে যে মরার আগেই উনি যেনো মৃত! এখন তার সম্পদের ভাগবাটোয়ারা, দলীয় ক্ষমতা কিভাবে কাকে ডিঙিয়ে কে নিবে তা নিয়ে সবাই ব্যাস্ত বলে মন্তব্য করেছেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ।

সোমবার ভোর ৩টা ৭মিনিটে এরশাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন।

এরশাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে স্ত্রী বিদিশা এরশাদ বলেন, তিনি আজ এতটাই অসহায় যে, নিজের কবরের জায়গা ও নিজেকে কিনতে হচ্ছে। বিষয়টি এখন এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, উনার কোন দূর্ঘটনা ঘটলে মনে হয় অনেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে, ক্ষুধার্ত শকুনেরা যেন খাদ্যের জন্য অপেক্ষায় আছে। কিছু কিছু ভুল সিদ্ধান্তই এরশাদকে আজ পরিবার বিহীন করেছে বলে মন্তব্য বিদিশা এরশাদ।

তিনি বলেন, একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট কতটা অসহায় হলে থানায় ডায়েরি করতে যেতে হয়, তার সম্পদের উত্তরাধিকার ঠিক করতে হয়,স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাত হয়, জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে থানায় মামলা করতে হয়। হাসপাতালে ঘুমাতে হয়। অনেক কিছু থেকেও কিছুই নেই আজ।

স্ট্যাটাসটি তিনি শুরু করেন তার বাবা আবু বকর সিদ্দিক এর একটি কবিতা দিয়ে। তারপর তাদের ছেলে এরিকের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি। একুশে টিভি অনলাইন পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

"শাব মেহের"এর শবের উপর কোন মহাজন নাচতেছে- আমার আব্বা কবি আবু বকর সিদ্দিক এর লেখা বিখ্যাত গানের প্রথম দুই লাইন। "শাব মেহের" আমাদের উত্তরবংঙ্গের একজন অবহেলিত নারীর জীবনের বাস্তব ঘটনা। আমাদের সমাজের দুর্বিষহ কিছু যন্ত্রণায় তার মৃত্যু হয়। শাব মেহেরের মৃত্যুর পর তার লাশ নিয়ে আবার অনেকে সিনেমা তৈরি করেছিল, রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেছিলেন, কবি তাঁর গানের মাধ্যমে এই কথাটি ফুটিয়ে তুলেছেন।

আমাদের সমাজে এই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে যদিও এই ঘটনা গুলোকে আমরা সামাজিক ব্যাধি হিসেবে মনে করি।অতিসম্প্রতি রাজনীতির উপরের মহলে একজন ব্যাক্তির জীবিত অবস্থায় কিছু ঘটনা দেশের মানুষের বিবেককে কিছুটা নাড়া দিয়েছে। আমি সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ-এর কথা বলছি। একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট কতটা অসহায় হলে থানায় ডায়েরি করতে যেতে হয়, তার সম্পদের উত্তরাধিকার ঠিক করতে হয়,স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাত হয়, জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে থানায় মামলা করতে হয়। হাসপাতালে ঘুমাতে হয়। অনেক কিছু থেকেও কিছুই নেই আজ। মৃত্যু শয্যায় আজ পাশে আপন কেউ নেই , কিছু কিছু ভুল সিদ্ধান্ত তাকে আজকের এই পর্যায়ে একা পরিবার বিহীন করেছে। আমার ছোট শিশু এরিক-ই উনার শেষ ভরসা। এরিক কতটুকুই বা বুঝে, বয়স্ই বা কত, তাছাড়া এরিক কিছুটা শারীরিকভাবে স্পেশাল চাইল্ড। ভালভাবে হাটতে ওর কস্ট। এই অবস্থায় প্রতিদিন ওর ড্যাডি ঘুমিয়ে গেলে সবথেকে বেশি টেনশন হয় ওর। ছোট্ট হাত দিয়ে ড্যাডির নাকের কাছে শ্বাস-প্রশ্বাস চেক করে দেখে। হাত পায়ের আঙুল টেনে ধরে জিজ্ঞেস করে ড্যাডি ঠিক আছো তো ? তোমার শরীরের অবস্থা কি? হসপিটাল যাবে কি? সারাক্ষণ ড্যাডির মৃত্যু ভয় ওকে তাড়া করে বেরায়। জাতীয় পার্টি মামা, আংকেল এমপি রা ও আর ঘন ঘন বাসায় আসেন না। কেউ আর আগের মতো ডিনার ও পাঠায় না। কত যন্ত্রণা নিয়ে সময় কাটে আমার এরিকের। আজকাল স্কুলে গেলে ও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে হয়। আমি এরিক এর মা, একজন মা হিসাবে এই কষ্ট আমাকে কতটুকু নাড়া দেয় শুধু মা জাতি বুঝতে পারবে। এই অবস্থায় বাপ-বেটার জন্য অনুশোচনা বোধ থাকলেও আমারই কি`বা করার আছে?

আগে দেখতাম অনেকে এরশাদ সাহেব এর কাছে পদ-পদবীর জন্য আসতো বা ভিড় জমাতো এখন শুনি পত্র-পত্রিকায় দেখি ব্যাতিক্রম কিছু মানুষ ছাড়া সম্পদের ভাগবাটোয়ারা, দলীয় ক্ষমতা কিভাবে কাকে ডিঙিয়ে কে নিবে তা নিয়ে সবাই ব্যাস্ত। উনাকে মানসিকভাবে এত দুর্বল করা হয়েছে যে মরার আগেই উনি যেনো মৃত! আজ নিজের কবরের জায়গা ও নিজেকে কিনতে হচ্ছে। বিষয়টি এখন এমন পর্যায়ে গিয়েছে। উনার কোন দূর্ঘটনা ঘটলে মনে হয় অনেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে , ক্ষুধার্ত শকুনেরা যেন খাদ্যের জন্য অপেক্ষায় আছে।

বাড়ি, গাড়ি, ট্রাস্ট কোনকিছুই দরকার নেই এরিক এর। মায়ের যা আছে তা দিয়ে ডাল, ভাত খেয়ে বড় হতে পারবে অনায়াসে। আজ শুধু প্রয়োজন ছিল পিতা মাতার দুইজনের সঙ্গ।

ষড়যন্ত্রকারীদের কারনে এরিক আজ মায়ের আদর থেকেও বঞ্চিত।

এখনই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে এরশাদ সাহেব এর অবর্তমানে এরিক এর অবস্থা নিয়ে আমি শংকিত।

অবস্থাদৃষ্টে এখন মনে হল সেই বিখ্যাত উক্তি, `শাব মেহের এর শবের উপর কোন মহাজন নাচতেছে।

টিআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি