ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ঐতিহ্যের মুরাদপুর-১

সরদার রেজাউল করিম

প্রকাশিত : ১২:১৪, ২৫ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ১৫:৫২, ২৬ আগস্ট ২০২০

মুরাদপুরের ঐতিহ্য হৃদয়ে ধারণ করার জিনিস। বলে কয়ে বা লিখে তা পরিষ্কার করে বুঝানো একটু কঠিনই বটে। আশেপাশে অন্যান্য গ্রাম থেকে একটু আলাদাই। সেই ছোটবেলা থেকেই তা বুঝে আসছি। কিন্তু এটাতো একদিনে হয়নি। শিক্ষা জ্ঞান পরিপার্শ্বিক অবস্থান যোগাযোগব্যবস্থার সংমিশ্রণে আজকের অগ্রসর মুরাদপুর হঠাৎ এই পর্যায়ে এসে দাঁড়ায়নি। আমার শৈশবের কিছু স্মৃতি এখানে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো-

তখনো মুরাদপুর বাজার বলতে কিছু ছিল না। বর্তমান বাজার এলাকায় ২/৩টি দোকান ছিল মাত্র। বড় মুদির দোকান হিসাবে ছিল পশ্চিম মুরাদপুরের আনার আলী সেরাং বাড়ির মরহুম মোজাম্মেল হল এর দোকান। খুবই বিনয়ী ও নরম স্বভাবের এই জেঠার দোকান থেকে গ্রামের প্রায় সবাই বাজার করতো। পুরো মুরাদপুরেই তখন চা দোকান ছিল মাত্র দু’টি। পশ্চিম মুরাদপুরে মাউদাবার চা দোকান, ( মনি সওদাগর এর বাবা), আর এদিকে ছিল মিছিরের চা  দোকান।

মিছির জেঠা দোকানদারি করতেন খুবই খোশমেজাজে। দোকানদারির পাশাপাশি তিনি কিছু সামাজিক দায়িত্ব ও পালন করতেন। তখন মুরাদপুরের প্রধান সড়ক আমীর মোহাম্মদ সী রোড় ছিল ব্রীক সলিনের এবং মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হতো গরুর গাড়ি। গরুর গাড়ির চাকার বহির্বেষ্টনিতে লোহার এবং রাবারের এই দুই ধরনের বেড় থাকত চাকার স্থায়ীত্বের জন্য। আবার লোহার বেষ্টনীর চাকার গাড়ীতে রাস্তার ক্ষতি হতো অনেক বেশি। এই মিছির জেঠা লোহার বেষ্টনীর চাকার কোন গাড়ি তার দোকানের সামনে দিয়ে যেতে দিতেন না। তার পরিস্কার যুক্তি- এতে রাস্তার ইট ভেঙে রাস্তা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে। এলাকার জনগণ তাকে সমর্থন করতেন। তাই তিনি এ ব্যাপারে কখনো আপোষ করেননি।

আমরা ছোটরা দোকানের সামনের দরজা দিয়ে ঢুকে চা খেতে পারতাম না, বড়রা যদি কিছু মনে করে এই ভয়ে। আমাদের মত শৈশব পার করা ছেলেদের জন্য দোকানের পিছন দিকে ৩/৪ ফুট প্রস্থের আলাদা একটা কক্ষ ছিল যেখানে আমরা পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে সংগোপনে চা খেতাম এবং সংগোপনে দাম দিয়ে চলে আসতাম।

একদিন বিকেল বেলা মিছিরের চা দোকানের পিছনে ঢুকে চা এর জন্য বললাম, তখন দোকানে ছিল মিছির জেঠার বড় ছেলে, নাম সম্ভবত: নুরছাফা। তিনি আমাকে চা দিয়ে সামনে চলে গেলে আমি আস্তে আস্তে চা খাচ্ছি। এমন সময় দেখলাম দোকানের বেড়ার ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে বাহির থেকে একটা পেপে গাছের লম্বা ডগার একমাথা ধীরে ধীরে নেমে এসে আমার সামনে বড় ডেকছিতে রক্ষিত গরম গরুর দুধের ভিতর চলে গেল এবং মুহূর্তে দুধে টান পড়ার দৃশ্য নজরে পড়ল। আমি হতভম্ব। বিষয়টি বুঝতে আমার কিছুটা সময় লাগল। পরক্ষণে আমি চিৎকার দিলাম, সাথে সাথে নুরছাফা এসে গেল। কিন্তু ততক্ষণে পেপের ডগা ফেলে ‘তিনি’ দৌঁড়ে বীরদর্পে চলে গেলেন। আমি দাঁড়িয়ে বেড়ার বড় ছিদ্র দিয়ে তাকে স্পষ্ট দেখলাম। নুরছাফাও দেখলো। আমাকে বলল, ‘সে প্রায় এ রকম করে, কি করবো’। সংগত কারণেই আমি তার নাম বলছি না। তিনি এখনো জীবিত, আলহামদুলিল্লাহ্‌।

‘তিনি’ প্রায় বেড়ার ফাঁক দিয়ে চুরি করে পেপের ডগা দিয়ে পাতিলের গরম গরম দুধ খেয়ে যায় - আর মালিক বলে কি করবো! এখানকার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি কি চিন্তা করা যায়?

এমবি//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি