কক্সবাজারে এখনও লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
প্রকাশিত : ১২:৩৫, ৯ আগস্ট ২০২৩
টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের পর থেকে চকরিয়া উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় বন্যার পানি কমলেও ভাটির দিকের নতুন নতুন এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। নদীর বেড়িবাধ ভেঙ্গে ঢলের পানি ঢুকে পড়ছে গ্রামে।
চকরিয়া উপজেলার উজানে বন্যার পানি কমলেও উপকূলীয় অঞ্চল পেকুয়া উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে বেশ কিছু জনবসতি। একই সাথে চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় ৫টি ইউনিয়নে নতুন করে বন্যার পানি ঢুকেছে।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশে মহাসড়কের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় এখনও চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নেই বন্যা কবলিত হয়েছে। এতে এসব এলাকার এখনও লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাতামুহুরী নদীর পানি কমলেও এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মাতামুহুরি নদীর কমপক্ষে ১৫টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এসব ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে ঢলের পানি ঢুকে নতু নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মাতামুহুরি নদীর অববাহিকা এলাকার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত চার দিনে পাহাড় ধ্বসে পানিতে ভেসে গিয়ে এবং সাপের কামড়ে চকরিয়া পেকুয়া রামু এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭ জন মারা গেছে। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
এই দুই উপজেলায় লক্ষাধিক হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছিল। এদের অনেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার সব ইউনিয়ন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৭ লাখ টাকা নগদ সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি দূর্গত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে চকরিয়া উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, বরইতলী, হারবাং, পুর্ববড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড়ো ভেওলা, চিরিঙ্গা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, ফাসিয়াখালী বদরখালী ঢেমুশিয়া কোনাখালী, চকরিয়া পৌরসভা, পেকুয়া সদর ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের সড়কগুলোও পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
উপকূলীয় এলাকার পানি নিষ্কাশনের বিভিন্ন স্লুইস গেইট এবং নির্মাণাধীন রেললাইনে পর্যাপ্ত কালভার্ট না থাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছেনা বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলা কর্মকর্তা জামাল মোর্শেদ জানিয়েছেন, মাতামুহুরী নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি জানান, মাতামুহুরি নদীর ঢলের পানির তোড়ে কইন্যারকুম, বিএমচর, মেহেরনামা বেরি বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া আরও একাধিক এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এএইচ
আরও পড়ুন