কক্সবাজারে জিম্মি স্বামী-স্ত্রীসহ উদ্ধার ৫, বহিষ্কৃত এসআই গ্রেপ্তার
প্রকাশিত : ০৯:৪৪, ২১ মে ২০২৩ | আপডেট: ০৯:৪৫, ২১ মে ২০২৩
কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনে জিন্মি করে মুক্তিপণ আদায় চক্রের দুটি ‘টর্চার সেলের’ সন্ধান পেয়েছে র্যাব। সেখানে অভিযান চালিয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ জিন্মি ৫ জনকে উদ্ধার এবং অপহরণকারি চক্রের মূলহোতা পুলিশের এক বহিষ্কৃত উপ-পরিদর্শকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার বিকালে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমে এ তথ্য জানান র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের উর্ধ্বতন সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার মাইতুল সরকারবাড়ী এলাকার মৃত এরশাদ আলমের ছেলে এসএম ইকবাল পারভেজ (৪০) এবং কক্সবাজার পৌরসভার নতুন বাহারছড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউনুসের ছেলে এমটি মুন্না (৩০) ও একই এলাকার মৃত আব্দুল করিমের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ (২৮)।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে এসএম ইকবাল পারভেজ পুলিশের বহিষ্কৃত সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। গ্রেপ্তার ইকবাল ও এমটি মুন্না সম্পর্কে আপন দুলাভাই ও শ্যালক।
উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে মো. শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম ঢাকার উত্তরা এলাকার বাসিন্দা এবং কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের বাসিন্দা এক রোহিঙ্গা দম্পতি। এছাড়া অপর একজনও কক্সবাজারের বাসিন্দা।
র্যাব জানিয়েছে, গত ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ইকবাল পারভেজ পুলিশের এসআই হিসেবে কর্মরত অবস্থায় চট্টগ্রামে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে আটক হন। এ ছাড়া সীতাকুণ্ড থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা আছে তার বিরুদ্ধে। পরে দীর্ঘদিন কারাভোগের পাশাপাশি পুলিশের চাকরিও হারায় সে। পরে জামিনে বের হয়ে মাদকসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
র্যাব ১৫’র সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী আরও জানিয়েছেন, কক্সবাজার কেন্দ্রিক ভয়ংকর এই অপহরণ সিন্ডিকেটের অবস্থান শনাক্তের পর শুক্রবার রাতে একের পর এক তাদের সুরক্ষিত গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে সেখানে বন্দী ১ নারীসহ ৫ অপহৃতকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় চক্রের মূল হোতা পুলিশের বহিষ্কৃত উপপরিদর্শক (এসআই) এসএম ইকবাল পারভেজসহ চক্রের তিন সদস্যকে আটক করা হয়।
তিনি জানান, কক্সবাজার র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে র্যাবের একটি চৌকস দল কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও সুগন্ধা এলাকায় রাতভর এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে উদ্ধার হওয়া ঢাকার মো. শাহজাহান কবির ও মঞ্জুর আলম কক্সবাজারে বেড়াতে এসে গত ১৬ মে নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে একটি মোবাইল নম্বর থেকে কল করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে আংশিক মুক্তিপণ পরিশোধ করা হলেও মুক্তি মেলেনি শাহজাহান ও মঞ্জুরের।
কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানাধীন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা অপহৃত দম্পতির গল্প আরও করুণ। দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা না পেয়ে স্বামীর হাত-মুখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে থাকেন চক্রের সদস্যরা। স্বামীর উপর চলতে তাকে মধ্যযুগীয় অমানবিক বর্বর নির্যাতন। অপহৃত ব্যক্তিদের স্বজনেরা বিকাশে ২ লক্ষাধিক টাকা মুক্তিপণ দিলেও তাদেরকে ছাড়া হয়নি।
স্বজনেরা বিষয়টি র্যাবকে অবহিত করলে গোয়েন্দা উপাত্ত ব্যবহার করে কাজ শুরু করে। এরপর সন্ধান মেলে ২টি ভয়ঙ্কর টর্চার সেলের। যার একটি কলাতলী এবং অপরটি সুগন্ধা পয়েন্টে।
এর আগে ২০২২ সালে আগস্টে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে কাটেজ এলাকায় আরও একটি 'টর্চার সেলের' সন্ধান পেয়েছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ। ওই ঘটনায় সেখানে আটকে রাখা পর্যটকসহ চারজনকে উদ্ধারসহ ১১ জনকে আটকও করা হয়েছিল।
এএইচ
আরও পড়ুন