কখন থেকে শুরু জন্মাষ্টমী পুজা, রোহিণী নক্ষত্রের সূচনা কখন?
প্রকাশিত : ১১:৪৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | আপডেট: ১২:২৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ভাদ্র মাসের অন্যতম বড় উৎসব কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী। সারাদেশ জুড়ে পালিত হবে কৃষ্ণের জন্মোৎসব। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা অষ্টমীতে দেবকীর অষ্টম গর্ভে মথুরার কারাগারে জন্ম নিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ৷ বিষ্ণুর নবম অবতার। দ্বাপরে কৃষ্ণ অবতারে ধরাধামে এসেছিলেন শ্রী বিষ্ণু।
এ বছর জন্মাষ্টমী পালিত হবে ৬ এবং ৭ সেপ্টেম্বর দু’দিন মিলিয়ে। জন্মাষ্টমী শুরু হবে আজ বিকাল ৩টা ৩৭ মিনিটে। চলবে আগামীকাল বিকাল ৪টা ১৪ মিনিট পর্যন্ত।
লোকবিশ্বাস, শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এবং রোহিণী নক্ষত্রে। রোহিণী নক্ষত্রের উদয় ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ২০ মিনিটে শুরু হবে। চলবে ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত। তাই ৬ সেপ্টেম্বর রাত শুভ সময় হয়ে উঠেছে।
হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতি বছর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয় জন্মাষ্টমী উৎসব। হিন্দুধর্মে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।
পৃথিবীতে কংসের ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের অবসান এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ‘ভগবান’ রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমীতে রোহিণী নক্ষত্রে চন্দ্র যখন বৃষভের ঘরে প্রবেশ করে সেই সময় মধ্যরাতে কৃষ্ণ জন্ম নেন মথুরায়। দুষ্টের দমন, সৃষ্টের পালনের হেতুই তাঁর জন্ম। তারপর মামা কংসর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাবা বসুদেব তাঁকে বৃন্দাবনে নন্দরাজের বাড়িতে রেখে আসেন ভয়ঙ্কর দুর্যোগের সে-রাতে যমুনা পার হয়ে।
গীতার চতুর্থ অধ্যায় অর্থাৎ জ্ঞানকর্মসন্ন্যাসযোগ-এ ভগবান তাঁর স্বরূপ দর্শন করিয়েছেন কৌন্তেয় অর্জুনকে। ভগবান কোন সময়ে আবির্ভূত হন, ঠিক কোন সময় তিনি বেছে নেন পৃথিবীতে আসার জন্য তা বলেছেন তিনি।
এই অধ্যায়ের ৭ নম্বর শ্লোকে ভগবান পার্থকে বলেছেন, যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত। অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ ৷৷ ৭
অর্থাৎ, যখনই বিশ্বে ধর্ম সঙ্কটাপন্ন হয়, অধর্মের বাড়বাড়ন্ত হয়, তখন ভগবান কোনও না কোনও অবতারে সামনে আসেন। কড়া হাতে অধর্মের বিনাশ করে ধর্মের প্রতিষ্ঠা করেন। যখনই ধর্মের হানি এবং অধর্মের বৃদ্ধি হয়, তখনই আমি নিজেকে সৃষ্টি করি অর্থাৎ সাকার দেহ ধারণ করে লোকের সামনে প্রকটিত হই ৷ তেমনই দ্বাপর যুগে কংস নিধনের জন্য তাঁর প্রকাশ।
পুরাণ মতে, কৃষ্ণকে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার বলেই মনে করা হয়। জন্মাষ্টমীর দিন বিভিন্ন মন্দির ও ঘরে ঘরে কৃষ্ণ জন্মতিথি ও পুজোর বিশেষ আয়োজন করা হয়। সেজে ওঠে কৃষ্ণের বিভিন্ন তীর্থস্থান। হিন্দু মতে, রাত ১২টা নাগাদ নানা আচার-বিধি মেনে কৃষ্ণের পুজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে প্রায় সকলেরই জানা রয়েছে, মথুরা-বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর দিন বিশেষ জাঁকজমক করে পালন করা হয়।
শুধু যে মথুরা- বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পালন করা হয় তা কিন্ত নয়। বাংলাদেশেও দিনটি নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে জাঁকজমকভাবে পালন করা। এ দিনটি রয়েছে সরকারি ছুটির তালিকায়ও। শুভ জন্মাষ্টমীর সময় অনেকেই উপস্থিত হন নানান সাঁজে, কেউ উপস্থিত হন নাটকীয় নৃত্যে অংশ নেবার জন্য যা কৃষ্ণের জীবনের ঘটনাগুলিকে পুনর্বিন্যস্ত করে।
ঢাকা শহরের ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে একটি বিশেষ কুচকাওয়াজ শুরু হয় এবং শহরের পুরোনো অংশ প্রদক্ষিণ করে। এই মিছিলটি ১৯০২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি আবার নতুন করে শুরু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে।
দীপক পাল